অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ল্যাবের তথ্য নেই কোথাও

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৩১ মে, ২০২২ at ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ

 

 

অনুমোদনহীন বা লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের (ল্যাব) তালিকা এবং এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য কোথাও নেই। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর, সিভিল সার্জন কার্যালয় কিংবা সিটিকর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ, সব দপ্তরে খোঁজ নিয়ে এ সংক্রান্ত কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি। ফলে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় এ ধরনের ঠিক কত সংখ্যক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন/লাইসেন্স ছাড়া অবৈধ ভাবে পরিচালিত হচ্ছে, স্বাস্থ্য বিভাগ এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদানে অপারগ।

অনুমোদনহীন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা না থাকার কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরাও। তারা বলছেন, লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা প্রতিষ্ঠানসমূহের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানটি আবেদন করেনি, ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো রকম তথ্য পাওয়ার সুযোগ তাদের নেই। যে কারণে অনুমোদনহীন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকাও হয়নি। এতদিন না থাকলেও এখন এ সংক্রান্ত তালিকা (অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের) প্রণয়নের প্রস্তুতি চলছে দাবি করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর আজাদীকে বলেন, অনুমোদন প্রাপ্ত এবং অনুমোদনহীন এখন সব ধরণের স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়নের প্রস্তুতি চলছে। সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন কার্যালয় এ তালিকা প্রস্তুত করবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে, লোকবল সংকটের কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য আমরা পাই। কিন্তু আবেদন না করা কোনো প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়াটা আমাদের জন্য কঠিন। এ সমস্ত (আবেদন না করা) প্রতিষ্ঠানের তালিকা করতে যে সংখ্যক লোকবল দরকার, তাও আমাদের নেই। যার কারণে লাইসেন্স প্রাপ্ত বা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা থাকলেও অনুমোদনহীন বা লাইসেন্সবিহীন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা আমাদের কাছে নেই।

অবশ্য, এখন সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন ভিত্তিক এ তালিকা তৈরি হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা এ তালিকা করবে। পুরো তালিকাটা পেলে এর মাঝে অনুমোদিত এবং নুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা সহজ হবে। এর মাধ্যমে অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের তালিকাটাও আমরা পেয়ে যাবো। মহানগরে এ তালিকা প্রণয়নে সিটিকর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে আলোচনা করা হবে বলেও জানান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২০ সালের শেষের দিকেও একবার এ ধরণের অনুমোদনহীন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরির তোড়জোড় শুরু করে সিভিল সার্জন কার্যালয়। ওই বছরের নভেম্বরে নগরীর চট্টেশ্বরী রোডের সিটি হেলথ ক্লিনিক নামে বেসরকারি একটি হাসপাতাল লাইসেন্সবিহীন ও অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর এ তোড়জোড় শুরু হয়। সে সময় লাইসেন্সবিহীন ও অবৈধ ভাবে পরিচালিত স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়। ওয়ার্ড ভিত্তিক বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়ে চসিককে চিঠি দেয়ার কথা জানিয়ে তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেছিলেন, ‘আমাদের লোকবল খুবই অপ্রতুল। যার কারণে ইচ্ছে থাকলেও এ ধরণের তালিকা বা তথ্য সংগ্রহ করা আমাদের জন্য কঠিন। চসিকের লোকবল রয়েছে। তাই আমরা চসিকের সহায়তা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মহানগর এলাকায় বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্ড ভিত্তিক তালিকা চেয়ে চসিককে আমরা চিঠি দিতে যাচ্ছি। ওয়ার্ড ভিত্তিক তালিকা পেলে আমাদের কাছে থাকা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকার সাথে আমরা মিলিয়ে দেখবো। এতে করে লাইসেন্সবিহীন বা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেনি এমন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা সহজ হবে।’ তবে এ নিয়ে পরবর্তীতে আর কোন অগ্রগতির তথ্য পাওয়া যায়নি।

ওই সময় সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত কোন চিঠি পেয়েছিলেন কী না তা ঠিক স্মরণে নেই বলে জানান চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। জানতে চাইলে ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী আজাদীকে বলেন, এ মুহূর্তে ঠিক মনে পড়ছে না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

আর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোনো স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান চালু করলে সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অনুমোদন গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অনুমোদন নিয়েছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই কার্যক্রম চালাচ্ছে।

অনুমোদিত স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচশ : নগরীসহ চট্টগ্রাম জেলায় অনুমোদন প্রাপ্ত বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ৫৪৩টি বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এর মাঝে বেসরকারি হাসপাতালক্লিনিকের সংখ্যা ১৫৭টি। আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের (প্যাথলজি ল্যাব) সংখ্যা ৩৮৬টি।

এ তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নগরে হাসপাতালক্লিনিকের সংখ্যা ৯৪টি। আর উপজেলায় এ সংখ্যা ৬৩টি। এছাড়া অনুমোদিত প্যাথলজি ল্যাবের মধ্যে মহানগরে রয়েছে ১৮৮টি। উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে ১৯৮টি। সবমিলিয়ে ৫৪৩টি অনুমোদিত হাসপাতালডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর বাইরে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, এ ধরনের প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে নগরসহ জেলায়। তাদের অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। লাইসেন্সে প্রাপ্ত এবং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর সবগুলোই অনুমোদনহীন হিসেবে ধরে নিতে হবে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন ও অনুমোদনের বিষয়টি আগে স্থানীয় পর্যায়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে থাকলেও কয়েকবছর আগে সেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ভাবে কেবল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরই অনলাইনে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন ও অনুমোদন দিয়ে আসছে। তবে অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি চালুর পর লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়ায় ধীরগতি নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি একাধিক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। যথাসময়ে আবেদন করলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়া শেষ করতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপনের অভিযোগ রয়েছে। আবেদন করেও নবায়নকৃত লাইসেন্স হাতে না পাওয়ায় অভিযানে হয়রানির শঙ্কাও প্রকাশ করছেন এসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতেলের মতো অভিযান হবে চালের বাজারেও
পরবর্তী নিবন্ধসড়ক নয়, যেন চাষের জমি