অঙ্গসংগঠন দিয়ে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করবে বিএনপি

চট্টগ্রামে শুরু, ঢাকায় শেষ টার্গেট নতুন ভোটার

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ৪ জুন, ২০২৩ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

নতুন ভোটারদের কাছে টানার ‘কৌশল’ নিয়েছে প্রায় ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। এক্ষেত্রে প্রধান তিন অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে কাজে লাগাতে চায় দলটি। এর অংশ হিসেবে সংগঠন তিনটি যৌথভাবে দেশের ছয় বিভাগীয় শহরে আয়োজন করছে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’। আগামী ১১ জুন চট্টগ্রামে প্রথম সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, এর আগে কোনো সময় বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠনের যৌথ কোনো কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালিত হয়নি। এবার প্রথম এমন আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যআগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ভোটারদের কাছে পৌঁছা। বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর থেকে যারা ভোটার হয়েছেন তাদের টার্গেট করে এ সমাবেশ করা হচ্ছে। তাই বিভাগীয় এ সমাবেশের প্রতিপাদ্য স্লোগান করা হয়েছে– ‘তরুণ প্রজন্ম দেব ভোট, ভোটের জন্য যুদ্ধ হোক’। সমাবেশকে ঘিরে যে প্রচারপত্র সেখানেও থাকবে এ স্লোগান। অবশ্য এর সঙ্গে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীন সংসদ নির্বাচনসহ বিএনপির ১০ দফা দাবিও উত্থাপন করা হবে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছর থেকে ধাপে ধাপে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। সর্বশেষ গত ২৮ মে সারা দেশে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়। এর আগে বিভাগীয় সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করে দলটি। তবে সবগুলোই ছিল বিএনপির ব্যানারে। যদিও প্রতিটি সমাবেশে অংশ নিয়েছিল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

তারুণ্যের সমাবেশ’ বিষয়ে নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ২০০৮ সালের পর ভোটার হওয়া অনেক তরুণ ভোট দিতে পারেনি। অথচ ভোট তাদের নাগরিক অধিকার। ভোট না দিতে দিতে তারা তাদের অধিকারের কথা ভুলে গেছে। সে অধিকার আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই। আমাদের বিশ্বাস তারুণ্যের মিলনমেলায় পরিণত হবে সমাবেশস্থল। এক থেকে দুই লাখ তরুণ অংশ নিব এতে।

দলীয় কর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক সমাবেশ নিয়ে আগ্রহ নেই। তাই তারা কেন সমাবেশে আসবে। কিংবা তাদের উপস্থিতি নিশ্চিতে কোনো কৌশল নেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, এটা কেবল দলের কর্মসূচি ভাবলে ভুল হবে। এখানে অধিকারের বিষয় জড়িত। তাই যেসব তরুণ ভোটাধিকার বঞ্চিত তারা অবশ্যই আসবেন। এর সঙ্গে মানুষকে তাদের ভোটাধিকার মনে করিয়ে দিতে আমরা সচেতন করার চেষ্টা করছি। পোস্টারিং করব, লিফলেট বিতরণ করব। আসলে মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পেতে উন্মুখ হয়ে আছে। তাই তারা আসবেন এবং আমাদের আন্দোলনে শরীক হবেন।

নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান আজাদীকে বলেন, স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ হবে। শুধু কর্মী না, সাধারণ তরুণরাও অংশ নিবে। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হয়েছে তা সবাই জানে, সেখানে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। অর্থাৎ গত ১৭১৮ বছরে ভোটার হওয়া তরুণ ভোট দিতে পারেনি। তাদের সে ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে তারা অবশ্যই পাশে থাকবে।

উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এস এম মুরাদ চৌধুরী বলেন, তরুণ প্রজন্মের ভোটাধিকার নিশ্চিতে এই সমাবেশ আয়োজন করা হচ্ছে। উত্তর চট্টগ্রাম থেকে ২০ হাজারের বেশি তরুণ অংশ নিবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া তারুণ্যের সমাবেশের সর্বশেষ আয়োজনটি হবে আগামী ২৯ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টনে। এর আগে ১৭ জুন বগুড়ায়, ৭ জুলাই খুলনায়, ১৫ জুলাই বরিশালে ও ২২ জুলাই সিলেটে এ সমাবেশ আয়োজন করা হবে।

নগরের কাজীর দেউড়ি মোড়ে অথবা জেলা পরিষদ চত্বরে চট্টগ্রামের প্রথম সমাবেশটি আয়োজন করতে চান আয়োজকরা। এতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ছাড়াও রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কঙবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা অংশ নিবেন।

এদিকে গতকাল বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে চট্টগ্রামে সমাবেশের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে নগরে। তবে আজ রোববার থেকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পোস্টার, লিপলেট বিতরণের মাধ্যমে পুরোদমে প্রচারণা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একইভাবে বিভাগের আওতাধীন প্রতিটি ইউনিটেও এ প্রচারণা শুরু হবে।

চট্টগ্রামের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া ছাত্রদল, যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাত বছর পর আসামি কালু গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধলোডশেডিং দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি : নসরুল হামিদ