৩শ মিটারে ১৩০ ভাসমান দোকান

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১০ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ

গোল পাহাড় থেকে জিইসি মোড়। ও আর নিজাম রোডের এই অংশের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। স্বল্প দূরত্বের এ জায়গার ফুটপাত ও সড়কে গতকাল বিকেলে ১৩০টি ভাসমান দোকান দেখে গেছে। এর মধ্যে ৯১টি দোকান ছিল জিইসি মোড়ের দিকে যাওয়ার সময় সড়কের বামপাশে। বাকিগুলো ডান পাশে। ভাসমান দোকানের বাইরে প্রাইভেট গাড়ি মোটরসাইকেলও পার্কিং করা ছিল সড়কের বেশিরভাগ অংশে।
পথচারীরা জানিয়েছেন, অবৈধভাবে বসা দোকানদাররা ফুটপাত আগেই দখলে নিয়েছে। ইদানিং ভ্যানগাড়ি বসিয়ে দখল নেয়া হয়েছে মূল সড়কও। ফলে ফুটপাত ও সড়ক দুটোই এখন ভাসমান দোকানদারদের দখলে। এতে সৃষ্টি হয়েছে দুটো সমস্যা। প্রথমত ফুটপাতে হাঁটতে না পেরে মূল সড়ক দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে তাদের। দ্বিতীয়ত, ভাসমান গাড়ির জন্য সড়ক সংকুচিত হওয়ায় বাড়ছে যানজট। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোলপাহাড় থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত অংশে অবৈধভাবে বসা দোকানগুলোর পেছনে রয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু কর্মী। প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক ৫০ টাকা করে চাঁদা তুলেন তারা। এসব চাঁদাবাজের মধ্যে নগর যুবলীগের শীর্ষ নেতার এক অনুসারী একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। বাকি অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন এমইএস কলেজ কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ।
সরেজমিন চিত্র : গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, গোলপাহাড় থেকে সামান্য গেলেই ইমপ্লা ভবন। এর পাশেই নির্মাণাধীন আরেকটি ভবন সংলগ্ন ব্রিজ থেকেই ভাসমান দোকান বসানো শুরু হয়েছে। সেখান থেকে কালীবাড়ি মন্দিরের আগ পর্যন্ত ১৪টি ভ্যানগাড়ি দেখা গেছে। সবগুলোতেই শীতকালীন কাপড় ছিল। মন্দিরের বিপরীত পাশে স্থায়ী ১২টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। তবে কৌশলে নির্মাণ করা হয়েছে দোকানগুলো। এখানে দোকানের মূল কাঠামো ফুটপাতের বাইরে রয়েছে। তবে কেনাকাটা করতে হবে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে। মালামাল রাখার কারণে দোকানগুলোর ভেতরে দাঁড়িয়ে কেনাকাটার সুযোগ নাই। অর্থাৎ এসব দোকানও ফুটপাতে চলাচলের প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠেছে। এসব দোকানের মধ্যে একটি ফ্রুটের এবং একটি মোবাইল কার্ড রিচার্জের দোকান। বাকিগুলোতে কাপড় বিক্রি হচ্ছে।
এরপর মেট্টো হসপিটালের সামনের ফুটপাত ও সড়কে ৫টি দোকান দেখা গেছে। এরপর প্রিমিয়ার ইউনির্ভাসিটির সামনের সামনে ৩টি চায়ের দোকান এবং গলির ভেতর দেখা গেছে ৫টি। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে স্টার ল্যাবের আগের গলি পর্যন্ত ফুটপাত ও সড়কের উপর ছিল ৮টি ডাবের দোকান। ল্যাবটির সামনে ভাসমান ৫টি ফ্রুটের ও একটি স্থায়ী ফ্রুটের দোকান দেখে গেছে। এরপর সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে পর্যন্ত ভাসমান ১২টি দোকান ছিল। এসব দোকানের মধ্যে একটি চায়ের দোকান, তিনটিতে গৃহস্থলী পণ্য, একটিতে ফাস্টফুড বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাকিগুলোতে কাপড়, জুতা, মুঠোফোনের কাভার বিক্রি হচ্ছিল। এছাড়া সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে দেখা গেছে ৫০টি ভাসমান দোকান।
পরিদর্শনে দেখা গেছে, ফুটপাত দখলে থাকায় পথচারিরা বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। আবার রাস্তায় থাকা ভাসমান দোকানের ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে সড়কে। এতে সংকুচিত হয়ে পড়েছে সড়ক। ফলে যারা কোনাকাটা না করে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন তারা বারবার প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন।
সামিয়া নামে এক পথচারী দৈনিক আজাদীকে বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সড়ক ও ফুটপাত তারা (ব্যবসায়ী) লিজ নিয়েছেন। তাই তারা দখল নিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাদের লিজ দিয়েছে কে? সড়ক ফুটপাতের মালিক তো সিটি কর্পোরেশন। তারা চুপ কেন? চুপ থাকার পেছনে তাদের স্বার্থ কোথায়।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৫নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গোলপাহাড় থেকে জিইসি শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় মানুষের চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। অনেকবার অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদও করেছি। প্রশাসনও সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তারা আবারো বসে যায়।
ফুটপাতের ব্যবসা কারা নিয়ন্ত্রণ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা চাঁদা তুলে। আমাদের এলাকায়ও মাসুম নামে একজন আছে। এটা ওখানে যারা ব্যবসা করে তারাই বলেছে। বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের চলাচলের পথটা ঠিক রাখতে। কিন্তু দলের নামধারীরদের কারণে পারা যাচ্ছে না। এজন্য সিটি কর্পোরেশনকে কঠিন প্রদক্ষেপ নিতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ওআর নিজাম রোডের কালীবাড়ি মন্দিরের সামনে কিছু দোকান বসানো হয়েছে ব্যক্তিগত জায়গায়। কিন্তু এ জন্য ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তাই কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা সেখানে অভিযান চালাবো। অন্যদের মতো তাদেরকেও বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যবসা করতে হবে।
ভাসমান দোকান দিয়ে রাস্তা ও ফুটপাত দখল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের বিষয়টি চিন্তা করে তাদের বসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে। আমি চাই, তারা ব্যবসা করুক। কিন্তু মানুষের ভোগান্তির কারণ যেন না হয়। ব্যবসা করতে গিয়ে যেন মানুষের পথের কাঁটা না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। শৃঙ্খলা না মেনে ব্যবসা করলে, মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে ওঠলে ব্যবস্থা নিব। যেমন জিইসি মোড় থেকে এমইএস কলেজ যাওয়ার অংশটুকুতেই শৃঙ্খলা এসেছে। বার বার অভিযান চালানো হয়েছে সেখানে। এখন তারা এমনভাবে বসে মানুষের সমস্যা হয় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই
পরবর্তী নিবন্ধ৯ বছর পর চালু হলো কবাখালী বাজার