ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাস মহামারি যে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সংকট তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। গত দুই বছর যাবত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তা মোকাবেলা করে অনেকটা স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে আসলেও এই ভাইরাস এখনো শূন্যের কৌটায় আসেনি। এই সংক্রমণে মৃত্যুর হার কমলেও সংক্রমণ ও শনাক্ত এখনো অব্যাহত রয়েছে। অথচ কোভিড-১৯ শুরুর দিকে সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে যে রকম ভয়ভীতি, দূর চিন্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি যে আগ্রহ ছিল এখন তা একেবারে নাই বললেই চলে। এখন স্বাস্থ্যবিধিতো দূরের কথা মাস্ক পরাও প্রায় ভুলতে বসেছি। সবার ধারণা করোনার বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। তাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে ন্যূনতম সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক ছাড়াই স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার, মাঠ-ময়দান, যানবাহন, হোটেল, রেস্তোরা এমনকি শপিংমলে কেনাকাটায় উপচেপরা ভীর ও ক্রেতা বিক্রতার মধ্যেও মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ বিধায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে না পারলেও একটি মাস্ক একটি জীবন বাঁচাতে পারে। মাস্ক পরিধানে শুধু করোনার ছোবল থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা নয়, ধূলাবালি, বিভিন্ন রোগের জীবাণু ও দূষণের কবল থেকেও নিজেকে রক্ষা করা যায়। অথচ, খোঁড়া যুক্তি ও নানা অজুহাতে যারা মাস্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকছে তারা কি একবারও ভেবেছে তার নিজের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কথা? কেননা আমার আপনার সচেতনতার উপর নির্ভর করে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা। আমাদের সচেতনতাই পারে আমাদের জীবনকে শঙ্কামুক্ত ও করোনামুক্ত রাখতে। তাই করোনা সংক্রমণ যেন আবার বৃদ্ধি না পায় সেজন্য সকলের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ জনসাধারণের স্বাস্থ্যবিধির প্রতি অনীহার কারণে করোনার সংক্রমণে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে জনজীবনে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অনীহা দূর করে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ কার্যক্রম জোরালোভাবে চালু করা না গেলে আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো করোনা পরিস্থিতি আবার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।
অথচ এই প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসকে নিয়ে আমরা যেন যেখানে সেখানে উদাসীনতা, হেয়ালিপনা ও গা-ছাড়া ভাব দেখাচ্ছি কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না এই ভয়ংকর করোনা ভাইরাস নতুন রূপে ওমিক্রন সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএ-২ এর উৎকণ্ঠায় চীন ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ ভারতে আবার ব্যাপক মাত্রায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর মিলেছে। তাছাড়া চীনের সাংহাইতে লকডাউন, ভিয়েতনামে সতর্কতা ও জার্মানীতে সব ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জারি করেছে। এ ভাইরাসকে নিয়ে বাংলাদেশেও বাড়ছে শঙ্কা। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, এই ভাইরাস দেশে ও বিশ্বে চিরতরে নির্মূল হোক। আর নির্মুল করতে হলে স্বাস্থ্যবিধিকে অনীহা না করে সকলের স্বাস্থ্যবিধির প্রতি ন্যূনতম সচেতন হওয়াই এই মুহূর্তে জরুরি।