‘সংস্কার প্রস্তাবনার ওপর নির্ভর করবে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ’

রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা শিগগির : মাহফুজ

| রবিবার , ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত, কবে হবে নির্বাচনএ নিয়ে বিএনপির তরফে রোডম্যাপ ঘোষণার চাপের মুখে সর্বস্তরে জোরালো আলোচনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলছেন, বিষয়টি নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আসা সংস্কার প্রস্তাবনার ওপর। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যুমনায় গতকাল শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্রিফ করছিলেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের যৌক্তিক মেয়াদ কতটুকু। জবাবে তিনি বলেন, সংস্কার প্রস্তাবনার ওপরই ডিপেন্ড করবে যে, যৌক্তিক সময়টা কী। এখনই তো বলে দেওয়া যায় না। আর সেক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে যে, কোনো মিটিংয়ে (প্রধান উপদেষ্টার সাথে) কেউই বলে নাই যে আপনি এক বছরের মধ্যে (নির্বাচন) করবেন। কোনো টাইম নিয়ে কেউ কিন্তু বলে নাই। খবর বিডিনিউজের।

গতকাল বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, সবাই যেটা বলছেন, আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) লিডারশিপে দেশ এগিয়ে যাবে। সবাই আস্থা প্রকাশ করছেন যে, আপনার লিডারশিপে আমরা কনক্রিট, খুবই লাস্টিং রিফর্ম দেখতে পারব।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমও ব্রিফিংয়ের সময় একই রকম তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আগে রিফর্ম হবে। সংস্কারের রূপরেখার মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে ট্রানজিশন অব পাওয়ার কী হবে। যৌক্তিক সময় কতটা লাগবে। প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্র সংস্কার এবং এর রূপরেখা খুব দ্রুতই উপস্থাপন করবেন, বলেন মাহফুজ।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টাও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, সবার সাথে মিলে, সব রাজনৈতিক দল এবং সব রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের আগামীর যে রাষ্ট্র সংস্কার এবং এর রূপরেখা উনি (প্রধান উপদেষ্টা) খুব শিগগির উপস্থাপন করবেন।

মাহফুজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কথা বলছেন মূলত ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে। বাংলাদেশের যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, তাদের সঙ্গে উনি কথা বলছেন। মূলত যে বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে শঙ্কা বা সংশয় তৈরি হয়েছে, সেটা হচ্ছে যে এই অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রকে কীভাবে পরিচালনা করতে চাচ্ছে, রাষ্ট্রের সংস্কার এবং নির্বাচন ও নির্বাচনী রূপরেখা নিয়ে অনেকেই শঙ্কায় আছেন।

মাহফুজের ভাষায়, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) মূলত রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে শুনতে চেয়েছেন তারা কী ধরনের সংস্কার চান, কী ধরনের ট্রানজিশন অব পাওয়ার তারা চান, কীভাবে চান এবং কীভাবে তারা নির্বাচনী রূপান্তর দেখতে চান। এসব বিষয় নিয়েই মূলত প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন, বলেন মাহফুজ।

তিনি বলেন, তারা (রাজনৈতিক দলগুলো) তাদের জায়গা থেকে অনেকগুলো সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং প্রধান উপদেষ্টা উনাদের বক্তব্য শুনেছেন। উনাদের কাছ থেকে একটা আশাবাদ উনি (প্রধান উপদেষ্টা) শুনতে পেয়েছেন।

এ সময় প্রেস সচিব শফিকুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এটা জাতির জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ রাষ্ট্রকে মেরামত করার জন্য। এই সুবর্ণ সুযোগের উনি বলছেন যে সদ্ব্যবহার করতে হবে। জাতির এই সুবর্ণ সুযোগকে সবাই মিলে কাজে লাগাতে হবে, যাতে আমরা দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করতে পারি। এই সংস্কারটা যেন অনেক অনেক বছর থাকে এবং বাংলাদেশের মানুষ যেন এটার সুফল ভোগ করতে পারে।

সংস্কারের কী প্রস্তাবনা এল? : মতবিনিময় সভাগুলোতে অনেক প্রশ্ন উঠে এসেছে জানিয়ে মাহফুজ বলেন, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যে, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো কী রকম হইতে পারে। বিচার প্রক্রিয়া কী রকম হইতে পারে। এখানে সংবিধান নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন এসেছে। সংবিধান কী আমরা আসলে সংস্কার করব নাকি হচ্ছে, সংবিধানকে আমরা পুনরায় ফুল (পরিপূর্ণ) প্রণয়ন করা হবে, সবাইকে সাথে নিয়ে।

তিনি বলেন, ফলে এই প্রশ্নগুলো বারবার আলোচিত হয়েছে। বিদ্যমান যে রাজনৈতিক সংকট আছে, প্রাতিষ্ঠানিক সংকট আছে এবং আরও অন্যান্য সংকট আছে রাষ্ট্রের, সেসব সংকট নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে উনাদের আশ্বস্ত করেছেন যে দ্রুতই বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উনি সচেষ্ট আছেন এবং খুব দ্রুতই উনি সামলে নিবেন।

প্রধান উপদেষ্টা সবার মতামতের ভিত্তিতে একটা গ্রেট ন্যাশনাল কনসেনশাস তৈরি করতে চাইছেন মন্তব্য করে সহকারী প্রেস সচিব মাহফুজ বলেন, উনি ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে প্রতিনিধিত্ব পেয়ে সরকার গঠন করেছেন, সেটা কনসোলিটেডেড হবে। দীর্ঘমেয়াদি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদি একটা পরিবর্তনের জন্য, দীর্ঘমেয়াদি একটা সংস্কারের জন্য উনি একটি রূপ নিতে পারবেন। রাজনৈতিক দলের সাথে মতবিনিময় সভা মূলত এই ভিশনেরই অংশ। এতে বৃহত্তর জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় অনেকগুলো প্রশ্ন উঠে এসেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, কনস্টিটিউশন কি রিফর্ম করব নাকি নতুন করে রিরাইট করব, এই প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলেছেন, কনস্টিটিউশনের এই জায়গায় হাত দিতে হবে। সেক্ষেত্রে মাননীয় উপদেষ্টার কথা হচ্ছে, আপনারাই বলেন আপনারা কী চান। আপনারা কী চান কনস্টিটিউশন নতুন করে রিরাইট হোক নাকি কনস্টিটিউশনের এমেন্ডমেন্ড হোক, প্রধান উপদেষ্টার উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রেস সচিব। অনেকেই বলেছেন যে, প্রেসিডেন্টের পাওয়ারটা একটু বাড়ানো হোক, অনেকে বলছেন, যিনি হেড অব দ্যা গভর্নমেন্ট হবেন তিনি দুইবারের বেশি যাতে না হন। অনেকেই বলেছেন, সেপারেশন অব জুডিশিয়ারি অতি দ্রুতই করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের তরফে কনক্রিট প্রোপোজাল চাওয়া হয়েছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও তিন উপদেষ্টা বলছেন, দরকার হলে আবার রিটেন প্রস্তাব দেন। কনক্রিট প্রস্তাব দেন যে, আপনারা কী ধরনের কনস্টিটিউশনাল চেঞ্জ চান, কী সংস্কার চান, কনক্রিট, ক্লিয়ার কাট একটা প্রোপোজাল চাচ্ছেন উনাদের কাছ থেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির নামে চাঁদাবাজি করলে পুলিশ বা সেনার হাতে তুলে দিন : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধমাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাচারের সময় ১৫ কোটি টাকার ক্যাবল জব্দ