সংকট, তবুও চট্টগ্রামে চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি

প্রতি বর্গফুটে দাম বাড়ল ৪ টাকা আড়তদাররা বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে লবণ ও শ্রমিকের খরচ বেশি

হাসান আকবর | সোমবার , ২৬ জুন, ২০২৩ at ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। গত বছর এটা ছিল ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৩ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪ টাকা বেড়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, গত বছর এই দাম ছিল ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। গত বছর যা ৪০ থেকে ৪৪ টাকা ছিল।

এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া গত বছরের মতো প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চামড়ার দর বাড়ানো হলেও লবণ ও শ্রমিকের দাম গত বছরের তুলনায় ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় চামড়া শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এবার কোরবানিতে সাড়ে তিন লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করা হবে। তবে এখানকার চামড়া শিল্পের দুর্দিনে চামড়া ব্যবসায়ীরা দর পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের প্রায় ২০ কোটি টাকা তিন বছর ধরে আটকে আছে। এদিকে চট্টগ্রামে একসময় বাইশটি ট্যানারি চামড়া কিনলেও এখন রয়েছে মাত্র একটি। চট্টগ্রামের রিফ লেদার নামের এই ট্যানারি গড়ে এক লাখ চামড়া কিনবে। বাকি চামড়া ঢাকার ট্যানারিগুলোতে পাঠাতে হবে।

চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে সমিতিভুক্ত আড়তদারের সংখ্যা ১১২ জন। এর বাইরে আরও প্রায় ১৫০ আড়তদার রয়েছেন। মৌসুমী কিছু ব্যবসায়ীও কোরবানি উপলক্ষে চামড়ায় অর্থ বিনিয়োগ করেন। এই ব্যবসায়ীরা শহর ও গ্রাম থেকে চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দেয়ার পর ট্যানারিতে দেন।

এবার কোরবানির ঈদে চট্টগ্রামে তিন লাখের মতো গরু এবং মহিষ ও ছাগল মিলে আরো প্রায় ৫০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করা হবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৫ লাখের বেশি পশু কোরবানি হলেও সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, ফটিকছড়িসহ বিস্তৃত এলাকার বেশ কিছু চামড়া ফেনীতে চলে যায়।

চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে চট্টগ্রামে একসময় ২২টি ট্যানারি থাকলেও এখন তা একটিতে নেমে এসেছে। এতে করে চট্টগ্রামে চামড়ার বাজার সীমিত। এখানে সংগৃহীত চামড়া ঢাকার ট্যানারিতে বিক্রি করতে হয়। অথচ ঢাকার ট্যানারি মালিকেরা ২০১৯ সালের ২০ কোটি টাকা আটকে রেখেছেন। অবশ্য এর পরবর্তী সময়ের টাকাগুলো প্রদান করেছেন। চামড়ার টাকা আটকে থাকায় এখানকার অনেক ব্যবসায়ী সংকটে রয়েছেন। এর মাঝেও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনাসহ প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আমরা চামড়া কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। সরকার দর নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে লবণ ও লেবার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সরকার চামড়ার মূল্য যা বাড়িয়েছে তার থেকে অনেক গুণ বেশি খরচ বেড়েছে। গত বছরের ৯শ টাকার লবণ এবার ১২শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। একজন লেবার দৈনিক এক হাজার টাকা করে নিতে হয়েছে। লবণ ও লেবার মিলে বর্গফুটপ্রতি অন্তত ৫০ টাকা খরচ বেড়ে যাবে। সরকার বর্গফুটপ্রতি ৪ টাকা বাড়িয়েছে। একটি বড় গরুর ২০ ফুটি একটি চামড়ায় ৮০ টাকা মূল্য বাড়লেও লবণ ও লেবারে এর চেয়ে বেশি খরচ হবে। তবুও দেশের সম্পদ এই চামড়া যাতে পচে নষ্ট হয়ে না যায় সেজন্য চট্টগ্রামের দুই শতাধিক আড়তদার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপশুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতার আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের আহ্বান চেম্বার সভাপতির
পরবর্তী নিবন্ধরিটার্ন দাখিলে ন্যূনতম ২০০০ টাকা কর দিতে হবে না