মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে স্বদেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা 

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া | শুক্রবার , ২০ জুন, ২০২৫ at ৭:৪৪ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয়িত রোহিঙ্গারা মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে স্বদেশে ফিরতে চান এবং নিজেদের বসতভিটা পেলে ঝুপড়ী ঘরে আর থাকতে চাইনা। 

শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরের দিকে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আয়োজিত বিশ্ব শরনার্থী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এ কথা তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে  মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর দমন- পীড়ন ও নির্যাতন করলে তারা প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় গ্রহন করে। বর্তমানে সাড়ে ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। 

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দু’দফা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হলেও এখনো একটি রোহিঙ্গাও স্বদেশে ফিরতে পারেনি।

তবে রাখাইনে বিগত দেড় বছরে মিয়ানমার সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশটির বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি রাখাইনের এক-তৃতীয়াংশ সীমান্ত ও শহর দখলে নেন। 

আরাকান আর্মি রাখাইন দখলে নিলে তারাও রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন ও নির্যাতন শুরু করলে নতুন করে আরও ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তবে এখনো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দরজা খুলেনি। 

রোহিঙ্গা নেতা ইউনুস আরমান বলেন,২০১৭ সালে  মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগণের ওপর দেশটির জান্তা বাহিনী গণহত্যা দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের পর রোহিঙ্গারা স্বদেশের ভিটেমাটি পেলে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় হিসাবে আছে।কিন্তু ক্যাম্পের ঝুপড়ী ঘরে আমরা আর কতদিন থাকবো। ঝুপড়ী ঘর ছেড়ে নিজ জন্মভূমিতে মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে  ফিরতে চাই।

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের  চেয়ারম্যান মাজেদ আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা সবসময় প্রস্তুত স্বদেশে ফিরে যেতে। কিন্তু বর্তমানে রাখাইনে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মি নির্যাতন চালাচ্ছে। তবুও আমরা স্বদেশে ফিরে যাবো যদি সেখানে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে।

বিশ্ব শরনার্থী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশ শিশু থেকে শুরু করে বৃষ্টির মধ্যে শতশত রোহিঙ্গারা মানবাধিকার এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ও দ্রুত প্রত্যাবাসনের জোর দাবি তুলে ধরে

অংশগ্রহণকারীরা  সমাবেশে  রোহিঙ্গা জনগণের অধিকার ও স্বদেশে ফিরে যাওয়ার দাবি সংবলিত বিভিন্ন শ্লোগান লেখা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে তারা বৃষ্টির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ( অতিরিক্ত ডিআইজি) সিরাজ আমীন বলেন, আজ বিশ্ব শরনার্থী দিবস উপলক্ষে কুতুপালং  ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সমাবেশ করেন। এ সময় ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।এতে সমাবেশে চলাকালীন কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এবং ক্যাম্পে এপিবিএন পুলিশের মোবাইল টিমের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি সহ  সার্বক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। পরে বিকালের দিকে মোনাজাতের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সমাবেশটি শেষ হয়।

কক্সবাজারের শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন,ক্যাম্পের মধ্যে রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ন ভাবে সমাবেশ করেছেন।সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে সংঘর্ষে এক জেলে নিহত
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় হেফজখানার ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ, শিক্ষক গ্রেপ্তার