ভিড়ের চাপ, ভোগান্তি

চট্টগ্রামের দুই পাসপোর্ট অফিস

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১১ নভেম্বর, ২০২১ at ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের দুইটি পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে হাজারো মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। তিনদিনের সার্ভার নষ্টের ধকল সামলাতে মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। একই সাথে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও দিশেহারা হওয়ার উপক্রম। সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে অফিসে। অপরদিকে ভোর থেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকছে মানুষ। পাসপোর্ট পাওয়া যেন সোনার হরিণে পরিণত হচ্ছে। অবশ্য সার্ভারে নতুন করে সমস্যা না হলে আগামী দু’চারদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের পাসপোর্ট প্রদানের ব্যাপারটি পুরোপুরি ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। সারাদেশের পাসপোর্ট অফিসে তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা, ফিঙ্গার প্রিন্ট কিংবা আইরিশ নেয়ার কাজ সম্পাদন করা হলেও পাসপোর্ট ছাপা হয় ঢাকা থেকে। পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশন বিভাগের সার্ভারের মাধ্যমে সারাদেশের পাসপোর্টের তথ্যাবলী ঢাকায় পাঠানো এবং সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে টানা তিনদিন বন্ধ ছিল সার্ভার। এছাড়া বিভিন্ন সময় সার্ভার ডাউন হয়ে যাওয়াসহ নান ধরনের বিপত্তি দেখা দেয়। আর এই বিপত্তির ধাক্কা এসে লাগে পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীদের মাঝে। এই সময় পাসপোর্ট ছাপানো থেকে শুরু করে ডেটা এন্ট্রিসহ সবধরনের কার্যক্রমই বন্ধ হয়ে যায়। গত সপ্তাহের তিনদিনের ধাক্কা সামলাতে চট্টগ্রামের দুইটি পাসপোর্ট অফিস হিমশিম খাচ্ছে।
সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামে দুইটি পাসপোর্ট অফিসের একটি মনছুরাবাদ এবং অপরটি পাঁচলাইশে অবস্থিত। চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানাগুলোকে এই দুইটি পাসপোর্ট অফিসে বিভক্ত করে আবেদন জমা নেয়াসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। মনছুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসে দৈনিক প্রায় ৬শ এবং পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে ৪শ’র মতো আবেদন জমা পড়ে। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্মনিবন্ধনসহ বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ছবি তোলাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করে থাকেন। এক একটি আবেদন ফরমের বিপরীতে গড়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। সার্ভার ডাউন বা নষ্ট থাকলে বেশি সময় লাগে।
গত সপ্তাহে তিনদিন সার্ভার নষ্ট থাকায় চট্টগ্রামে অন্তত তিন হাজার মানুষ পাসপোর্টের আবেদন জমা করতে পারেননি। এই তিন হাজার মানুষের চাপ পরবর্তী দিনগুলোতে পড়ে। এতে করে প্রতিদিনই আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ার ঘটনা ঘটছে। প্রাত্যহিক আবেদনকারীর সাথে ওই তিনদিন জমা দিতে না পারা আবেদনগুলো নিয়ে ভয়াবহ রকমের চাপে পড়েছে পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অপরদিকে সাধারণ আবেদনকারীদের ভোগান্তিও চরমে উঠেছে। ভোর থেকে পাসপোর্ট অফিসের সামনের রাস্তায় লাইন ধরছে মানুষ। সন্ধ্যা অবধি লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন জমা দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। গতকাল মোহাম্মদ ইমরুল হাসান নামের একজন আবেদনকারী পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে এসে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ভোরে এসে লাইন ধরেছি। এখনো দাঁড়িয়ে আছি। পিঁপড়ার গতিতে লাইন এগুচ্ছে।
পাসপোর্ট অফিসের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আবেদনপত্র এবং ছবি তোলার কাজ শেষ করে আবেদনকারীদের বিদায় দেয়া হয়। সব কাগজপত্র স্ক্যান করে পরবর্তীতে ঢাকায় পাঠাতে হয়। এতে এক একটি আবেদন পাঠাতে ১৫/২০ মিনিট সময় লাগে। এতগুলো আবেদন ঠিকঠাকভাবে পাঠাতে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। তিনদিন সার্ভার নষ্ট থাকা এবং বিভিন্ন সময় সার্ভার ডাউন থাকায় সমস্যা প্রকট হয়ে উঠে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আবু সাঈদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সার্ভার নষ্ট থাকায় বেশ চাপ তৈরি হয়েছে। সার্ভারে সমস্যা না হলে আগামী দু’চারদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মাসুম হাসান মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও প্রচুর চাপ সহ্য করতে হচ্ছে। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত অফিস করতে হচ্ছে। সার্ভার সমস্যার কারণে সমস্যাটি হয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকার ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছে : ডা. শাহাদাত
পরবর্তী নিবন্ধপরীর পাহাড় নাম ব্যবহারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা