সরকারের নবগঠিত মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর গতকাল প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম এসে বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। সকালে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের সামনে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
এর আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি–জামায়াত দেশকে বিপদে ফেলার জন্য সবসময় চেষ্টা করেছে। তারা আল্লাহর কাছে কী প্রার্থনা করে আমি জানি না। শকুনের দোয়ায় যেমন কখনো গরু মরে না, তেমনি বিএনপির অশুভ কামনায়ও বাংলাদেশের কোনো কিছু অশুভ হবে না। পূর্ব–পশ্চিম সবার সাথে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। সবার সাথে সম্পর্ককে আরো গভীর করার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন যে আন্তর্জাতিকভাবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে গ্রহণ করেছে, সেটির প্রমাণ হচ্ছে বহু নির্বাচনী পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে এসেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই, আইআরআই, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত, সার্কভুক্ত, ওআইসিভুক্ত ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশে এসেছেন। তারা সবাই একযোগে মত প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম সহিংসতা হয়েছে। এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।
বিএনপি–জামায়াত চাচ্ছে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা দেবে। গার্মেন্টস শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে, মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে, দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হবে, তারপর তারা ক্ষমতায় আসবে। তাদের এই চাওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত মনে করেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অবজারভার তথ্য–উপাত্তের জন্য নির্বাচন কমিশনে গেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ড. হাছান বলেন, আমাদের বিদেশি বন্ধুদের আমাদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ আছে, সেজন্য নির্বাচন কমিশনে গিয়েছেন। আমি আজকে কাগজে দেখলাম, নির্বাচন কমিশন যে তথ্য–উপাত্ত দিয়েছে, এতে তারা সন্তুষ্ট হয়েছে। দেখুন, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশিরভাগ নিবন্ধিত দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। আপনারা জানেন, যেদিন নির্বাচন হয় সেদিন প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশা ছিল। সেই কারণে ভোটের পার্সেন্টেজ প্রায় ৪২ শতাংশ, যদি কুয়াশা এবং শীত না থাকত তাহলে আরো বেশি ভোট কাস্ট হতো।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত ও প্রতিহত করার জন্য বিএনপি যেভাবে আগুন সন্ত্রাস করেছে, পাঁচ তারিখ রাতেও যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে, এতে করে মানুষকে ভয় লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ ভয় পায়নি। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের দিন প্রতি দুই ঘণ্টায় যে তথ্য দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন, ম্যানুয়ালি ভোটে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর আসলে কত শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে সেটি নির্ভুলভাবে দেয়া সম্ভবপর নয়। ইভিএমে ভোট হলে সেটা সাথে সাথে রেজিস্টার্ড হতো। যেহেতু ইভিএমে ভোট হয়নি, ম্যানুয়াল ভোটে প্রতি দুই ঘণ্টার তথ্য কোনো সময় সঠিকভাবে দেয়া সম্ভবপর নয়। সেজন্য সঠিক তথ্যটা এসেছে নির্বাচনের শেষে।
কঙবাজারে ১৪ লাখ রোহিঙ্গা আছে। তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য কী উদ্যোগ নেবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, দেখুন, আমরা সবসময় কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি, আমরা তাদের সাথে আরও এনগেজমেন্ট বাড়াচ্ছি। আমি ন্যাম সামিটে যাচ্ছি। সেখানে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা কূটনৈতিকভাবেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
এদিকে সংবর্ধনার জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমার গাড়ির সামনে কোনো একজন ভিখারিও হাত দেখালে আমি কিন্তু দাঁড়াই। আমি সেইভাবেই থাকতে চাই। একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে পরম পাওয়া হচ্ছে জনগণের ভালোবাসা, বড় মন্ত্রী হওয়া নয়। গণমানুষের নেতা ও এমপি হওয়া একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। আমি সেটিই হতে চাই।
তিনি বলেন, আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আজকে প্রথম চট্টগ্রামের মাটিতে এসেছি। চট্টগ্রাম দিয়েই এদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছে এবং আপনাদের কাছে দোয়া চাই, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ভাইদের কাছে আশীর্বাদ চাই, যাতে করে এই দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে পারি এবং দেশের মান–মর্যাদা আরও উজ্জ্বল করতে পারি। পূর্ব–পশ্চিম সব দেশের সাথে সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ও বলিষ্ঠ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেষ্ঠৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
নিজের নির্বাচনী এলাকার সবাই অত্যন্ত কষ্ট করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি গত ১৫ বছর ধরে চেষ্টা করেছি গণমানুষের এমপি হওয়ার জন্য। কে আমাকে ভোট দিয়েছে কিংবা দেয়নি সেটি কখনো আমি বিবেচনায় রাখিনি। আমি প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সবসময়; কিন্তু সব মানুষের এমপি হয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমি এবারও নতুন অভিযাত্রায় সব মানুষের এমপি হিসেবে কাজ করতে চাই। যারা আমাকে ভোট দেয়নি কিংবা ভবিষ্যতেও দিবে না, তাদের জন্যও কাজ করতে চাই। অবশ্যই দল এবং নেতাকর্মীদের জন্যও কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের ভাই হিসেবে আছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মহিউদ্দিন বাচ্চু এমপি, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা শফর আলী, সাবেক এমপি নোমান আল মাহমুদ প্রমুখ।