ঈদের বাকি আছে আর এক সপ্তাহের মতো। সময়ের হিসেবে খুব বেশিদিন নেই। তাই ঈদের কেনাকাটা সারতে মার্কেটগুলোতে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ। গতকাল দুপুর থেকে তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেট ছুটেছেন ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইফতারের পর থেকে ক্রেতাদের চাপ থাকে। এছাড়া মধ্যরাত পর্যন্ত থেকে চলছে বিকিকিনি।
এবারের ঈদে সুতি কাপড়ের বিভিন্ন হাতের কাজের পোশাকের চাহিদা বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, মার্কেটে বেশ কিছু ইউনিক ডিজাইনের পোশাক এসেছে। তবে বিক্রেতারাও বেশি দাম হাঁকছেন। তবে এবার ঈদের বাজারে বেশিরভাগ তরুণীর পছন্দ বাহারি ডিজাইনের থ্রি-পিস এবং গৃহিণীদের প্রথম পছন্দ কাথানসহ বিভিন্ন কারুকাজের শাড়িতে। এছাড়া তরুণদের নজর পাঞ্জাবিতে।
নগরীর নিউমার্কেট বিপণী বিতান, রেয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমণ্ডি লেইন, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরীবাজার, চকবাজারের মতি টাওয়ার, কেয়ারি, বালি আর্কেড, ২ নম্বর গেট শপিং কমপ্লেক্স, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, ফিনলে স্কয়ার, সেন্ট্রাল প্লাজা, ইউনেস্কো সিটি সেন্টার, আমিন সেন্টার, ভিআইপি টাওয়ার, স্যানমার ওশান সিটি, আখতারুজ্জামান সেন্টার, সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এসব মার্কেটের বিক্রেতাদের দাম ফেলার ফুরসত নেই। ক্রেতারাও পছন্দের পোশাকটি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন। এরপর পছন্দ হলে পণ্য কিনে বাড়ির পথ ধরছেন।
রেয়াজুদ্দিন বাজারে আসা তরুণী আফরোজা সুলতানা বলেন, ঈদের সময় আর বেশিদিন নেই। তাই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে এসেছি। আব্বু-আম্মুর জন্য শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনেছি। জহুর হকার্স মার্কেটে আসা চট্টগ্রাম বন্দর কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র মিশকাত উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত দুই বছর করোনার জন্য আমরা ঈদের কেনাকাটা সেই ভাবে করতে পারিনি। এবার যেহেতু করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে তাই বন্ধুদের সাথে পোশাক কিনতে এসেছি। আমি পাঞ্জাবি ও টি-শার্ট নিয়েছি।
রেয়াজুদ্দিন বাজারে কথা হয় গৃহিণী জয়নাব আকতার বাবলীর সাথে। তিনি বলেন, ঈদে নিজের জন্য কিছু না কিনলেও বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনতে হয়। কারণ ছোটদের ঈদের খুশিটাই আমাদের খুশি। অন্যদিকে আফমি প্লাজার অঞ্জন, সৃষ্টি, বাংলা মেলা, দেশী দশ, দেশাল, রঙ, সাদা কালো এবং শৈল্পিকের শো-রুমে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসব শো রুমের বিক্রেতারা জানান, ঈদের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়ছে।
অপরদিকে মধ্যবিত্তের মার্কেট নামে খ্যাত জহুর হকার্স মার্কেটেও চলছে জমজমাট বিকিকিনি। জহুর হকার্স মার্কেটের অলিদ ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী এম এম ইলিয়াছ উদ্দিন বলেন, ঈদের বাজার এখন জমে উঠেছে। মনে হচ্ছে করোনা যুগের আগে ফিরে গেছি। বেচাবিক্রিতে আমরা সন্তুষ্ট।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, জহুর হকার্স মার্কেট কেবল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মার্কেট। জহুর হকার্স মার্কেটে সব উচ্চবিত্ত শ্রেণীর অনেক ক্রেতাও ভিড় করেন। কোয়ালিটি পণ্যের কারণে সব ধরণের ক্রেতাদের আস্তা অর্জন করতে পেরেছি আমরা। এবার ঈদে আমরা যে পরিমাণ বেচাবিক্রি আশা করেছিলাম সেই রকম বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে ইফতারের পর থেকে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় রয়েছে।
তামাকুমণ্ডি লেইন বণিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, যে আশা নিয়ে ব্যবসায়ীরা ঈদের প্রস্তুতি নিয়েছিল, সেটি সফল হয়েছে বলা যায়। মার্কেটে এখন দেদারছে বেচাবিক্রি চলছে। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরাও বাহারি ডিজাইনের ফ্যাশনের পোশাকের সংগ্রহ নিয়ে এসেছিল।
স্যানমার ওশান সিটি ও নাসিরাবাদের ফিনলে স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদ ইফতেখার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঈদ মার্কেটে এখন ব্যবসায়ীদের দম ফেলার ফুসরত নেই। এবার ঈদ যেহেতু গ্রীষ্মকালে মৌসুমে হচ্ছে, তাই সুতির কাপড়ের ওপর বিভিন্ন কারুকাজ করা পোশাকই বেচাবিক্রি হচ্চে বেশি। এছাড়া কাথান শাড়ি ও কাথান থ্রিপিসও বিক্রি হচ্ছে।