চাঁদার জন্য রাউজানে দিন–দুপুরে গুলি করে খাতুনগঞ্জের শুটকি ব্যবসায়ী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে খুন করেছিলেন উপজেলার সন্ত্রাসী আরাফাত মামুন। তার অনুসারীরা তাকে ‘কিং অব রাউজান’ বা ‘রাউজানের সম্রাট’ বলে ডাকে। তার বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজি ও অপহরণের মোট ৮টি মামলা রয়েছে। মামুন ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। তবে মামুনের কাছ থেকে পুরো তথ্য বের করতে রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সংম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম।
জানা গেছে, গত ৪ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বাগোয়ান ইউনিয়নের গরিবউল্লাহপাড়ার একটি বাড়ি থেকে আরাফাত মামুন ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামুনের সহযোগীর নাম বিপ্লব বড়ুয়া (৩৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি করে রামদা, দেশীয় এলজি ও বিদেশি রিভলবার, ৫ রাউন্ড গুলি ও ২ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, মামুনের নামে বেশ কিছু মামলা রয়েছে। মামুন হচ্ছে রাউজান এলাকার ত্রাস। তার বাহিনীর লোকজন তাকে ‘কিং অব রাউজান’ ডাকতো। রাউজানের সম্রাট হওয়ার তার একটা উদগ্র বাসনা ছিল। চাঁদার জন্যেই ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরকে খুন করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম খাতুনগঞ্জের একজন শুটকি ব্যবসায়ী ছিলেন। আমরা যতদূর জানি, তার কাছে চাঁদা চেয়েছিল আসামিরা। চাঁদা না পেয়ে উনি যখন নামাজে যাচ্ছিলেন তখন মোটরসাইকেলে করে পেছন থেকে তাকে গুলি করা হয়। চাঁদার পরিমাণটা পারিবারিকভাবে আমাদের ওইভাবে জানানো হয়নি। পরিবারও জানতো না টাকার অঙ্কের বিষয়ে। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে আমরা প্রথমে তাদের শনাক্ত করেছি। আসামিরা আমাদের কাছে ঘটনা ঘটানোর বিষয়ে স্বীকার করেছে। পুলিশ সুপার বলেন,
রাউজানে অস্ত্রের ঝনঝনানি ৫ আগস্টের পরে না, এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এটা চট্টগ্রামের নতুন জানা নয়। চট্টগ্রামের প্রত্যেকটি মানুষ সম্ভবত রাউজানের ইতিহাস জানেন। গ্রেপ্তার আরাফাতের বিরুদ্ধে রাউজান থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি, মারামারির ২টি, অপহরণ ও চাঁদাবাজির ২টি এবং খুনের একটি মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নগরের চকবাজার থানায় একটি খুনের এবং চান্দগাঁও থানায় একটি চেক প্রত্যাখ্যানসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম।
জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি জুমার নামাজ পড়তে শহরের চান্দগাঁওয়ের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি নোয়াপাড়ায় যান জাহাঙ্গীর আলম। ওই দিনই ১৭ দিন ব্যবসার কাজে মিয়ানমার ও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। মোটরসাইকেলে করে মসজিদে যাওয়ার পথে বাড়ির অদূরে আসাদ আলী মাতব্বর পাড়া জামে মসজিদের কিছু আগে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তার পথ আটকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। পরে মসজিদের মুসল্লিরা বের হলে তাদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এলাকার লোকজন তাদের উদ্ধার করে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় আব্বাস উদ্দিন নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন।