কক্সবাজার জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ক্রমশ বাড়ছে। অন্যান্য উপজেলার চেয়ে উখিয়ায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার তুলনামূলক আশংকাজনক। এদিকে গত বছরের চেয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে আক্রান্তের হার বেড়েছে ১৩৬ শতাংশ। অবস্থার ক্রমাবনতি হওয়ায় প্রাথমিকভাবে উখিয়ার ৪ টি ও টেকনাফের ১ টিসহ ৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ দিনের লকডাউন জারি করা হয়েছে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিসের প্রধান স্বাস্থ্য সমম্বয়ক ডাক্তার ত্বোহা ভুঁইয়া বলেন, শুক্রবার পরীক্ষায় ৪৫ জন রোহিঙ্গা করোনা আক্রান্তের রিপোর্ট আসে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন আগে থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মাঝে সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮৬৩ জন রোহিঙ্গা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ১৩ জনের।
উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উখিয়ায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১০৭ জন। তন্মধ্যে মারা গেছে ১৭ জন। সর্বশেষ ১৪ মে রাতে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম ডিগলিয়াপালং বকসুপাড়ায় কাদের হোসেন (৬০) করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ১৮ মে পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ২৬৮ জন। জেলায় কক্সবাজার সদর উপজেলার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উখিয়া উপজেলায়। উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উখিয়ায় মোট করোনা আক্রান্তের দুই তৃতীয়াংশ বহিরাগত জেলার। মিয়ানমার নাগরিক উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল উখিয়া ও টেকনাফ। এখানে মোট ৩৪ টি আশ্রয় ক্যাম্পের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম উদ্বাস্তু আশ্রয় ক্যাম্প উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী। এখানে ২০ টি আশ্রয় ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। এছাড়াও ১০ ফুট বাই ১২ ফুটের একেকটি ঘরে একসাথে গাদাগাদি করে থাকতে হয় ন্যূনতম ৬/ ৮ জন করে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার তেমন কোনো পরিবেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। হাট, বাজার, নিয়মিত রেশন ও অনান্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, রোহিঙ্গাদের পরিচালিত স্কুল, মাদরাসা, যানবাহন চলাচল আগের মতই স্বাভাবিক দেখা গেছে। রোহিঙ্গাদের মতে, সবাই বলে, মাস্ক পড়তে, সাবান দিয়ে হাত ধুতে, কিন্তু এগুলো পর্যাপ্ত দেয়া হয় না। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গতবছরের তুলনায় এবছর রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে ১৩৬ ভাগ।
উখিয়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, এ বহিরাগত এনজিও কর্মীরা ঈদের ছুটি কাটিয়ে নিজ নিজ জেলা থেকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কর্মস্থলে ফিরেছেন বলে জানা গেছে। অথচ ওদের হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার কথা ছিল। এসব না মানার কারণে ঈদের পর থেকে উখিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বহিরাগত এসব কর্মজীবী উখিয়ার বিভিন্ন এলাকার ঠিকানা ও মোবাইল নং দিলেও পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে তাদের পাওয়া যায় না।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শনাক্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর যথাযথ খোঁজ খবর নিতে অনেককে বর্ণিত ঠিকানায় পাওয়া যায় না। হয়ত এরা তথ্য গোপন করে যত্রতত্র চলাফেরা করছে। তা যদি হয়ে থাকে তাহলে এলাকার পরিণতি ভয়াবহ হওয়ার আশংকা করেন তিনি।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ্ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘শরণার্থী শিবিরে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ২/ ওয়েস্ট, ৩, ৪, ১৫ ও ২৪ নং ক্যাম্পে ১২ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ক্যাম্পে সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ওষুধ ও খাবারের কার্যক্রম চলমান থাকবে।’