রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : সীমার মাঝে অসীম

| শনিবার , ৮ মে, ২০২১ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- সৃজনশীলতার বহুমাত্রিকতায় বিরল প্রতিভা। প্রধানত কবি হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীত শিল্পী, চিত্রকর ও সমাজ সংস্কারক। মানুষের পক্ষে সম্ভবপর সব কটি শাখায় তাঁর প্রতিভার স্পর্শ রয়েছে। বাঙালির কাছে তিনি ‘বিশ্বকবি’ হিসেবে পরিচিত।
রবীন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ই মে কলকাতা শহরের জোড়াসাঁকো অঞ্চলের অভিজাত ঠাকুর পরিবারে। ঠাকুর পরিবারটি ছিল শিক্ষিত, রুচিশীল ও সংস্কৃতিমনা। সেই সাথে ঊনিশ শতকের নবজাগরণ, ধর্ম ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনে এই পরিবারটির বিশেষ ভূমিকা ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা রবীন্দ্রনাথকে কখনোই আকৃষ্ট করে নি। তাই বেশ কয়েকবার স্কুল পালটানোর পর অবশেষে গৃহ শিক্ষকের কাছে পাঠ নেন সংস্কৃতি, ইংরেজি সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, পদার্থ বিদ্যা, প্রকৃতি বিজ্ঞান প্রভৃতি। পাশাপাশি চলতে থাকে সংগীত শিক্ষা, আঁকাআঁকি। কিশোর বয়সে, রবীন্দ্রনাথ ব্যারিস্টার পড়ার জন্য ইংল্যান্ডে যান। এখানেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পর্ব পরিপূর্ণভাবে শেষ করেন না, কিন্তু গভীরভাবে নিরীক্ষণ করেন পাশ্চাত্য সমাজ ও জীবনকে, যা তাঁর প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। বাংলা সাহিত্যে এমন কোনো শাখা নেই যেখানে রবীন্দ্রনাথের ছোঁয়া লাগেনি। গান, গীতিনাট্য, কাব্যনাট্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, ভ্রমণকাহিনি, শিশু সাহিত্য, চিঠিপত্র, ভাষণ, ছবি আঁকা- সব ক্ষেত্রেই কবিগুরুর অসাধারণ সৃজনপ্রতিভার সাক্ষর মেলে। পৈত্রিকভাবে তিনি ছিলেন জমিদার। কিন্তু দরিদ্র প্রজাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য তিনি শিক্ষা, চিকিৎসা, পানীয় জলের সুব্যবস্থা, দরিদ্র কৃষকদের কৃষিঋণ থেকে মুক্তি দান সহ সমবায়, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী সংগঠনমূলক নানা কাজ করেছেন। শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে কবি জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষার বাস্তব রূপ দেন। এটিই পরবর্তীকালে বিশ্বভারতীতে পরিণত হয়। উদারতা ও মৈত্রীবোধ কবির স্বভাবজাত। কবিগুরু বিশ্বাস করতেন, মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসার মৃত্যু নেই। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের জনসমাবেশে ব্রিটিশ পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ব্রিটিশদের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। ১৯১৩ সালে কবি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলী’র জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। কবি নিজেই এর ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন। ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা তিনি। তাঁর হৃদয় জুড়ে ছিল শুভ ও কল্যাণবোধ। বাঙালির জীবনে তাঁর অবদান কত গভীর, কত ব্যাপক তা উপলব্ধি করা দুষ্কর। জন্মের একশো-দুশো বছর পরেও তাঁর রচনা সমসাময়িক। মানুষের মনুষ্যত্বে চির আস্থাবান কবির জীবনাবসান ঘটে ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ব রেডক্রস দিবস
পরবর্তী নিবন্ধজীবন যাত্রার ব্যয়