খাতুনগঞ্জে রমজানের প্রস্তুতি মজুদ পর্যাপ্ত, গত বছরের তুলনায় দামও বেশি

ভোগ্যপণ্যের বাজার

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রমজানের বাজার ধরার জন্য ব্যবসায়ীরা দুমাস আগে থেকে পণ্য গুদামজাতকরণ শুরু করেন। পরবর্তীতে সেইসব পণ্য ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন। চলতি বছর রমজান শুরু হচ্ছে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেই হিসেবে রমজানে পাইকারী ব্যবসায়ীদের হাতে সময় আছে দুমাস।
খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা বলছেন, পণ্য বুকিং থেকে শুরু করে গুদামে আসা পর্যন্ত দেড় থেকে দুমাস সময় লাগে। অনেক সময় বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করতেও সময়ের প্রয়োজন হয়। রমজানের বাকি আছে আর দুমাস। এখন থেকে পণ্য গুদামজাত না করলে মার্কেট ধরা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে প্রচুর পরিমাণ ছোলা, মটর ও মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত বছরের অনেক পণ্য গুদামে অবিক্রিত থেকে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ও দেশের অভ্যন্তরে ডলারের উচ্চমূল্যের কারণেও আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে প্রায় পণ্যের দাম গত রমজানের তুলনায় বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বর্তমানে ভোজ্যতেল ও চিনির বাজার চড়া।
এদিকে রমজানের নিত্যপণ্যের তুলনামূলক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর এমন সময় অস্ট্রেলিয়ার ছোলার দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এছাড়া মসুর ডাল গত বছর বিক্রি হয়েছে ৬২ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, খেসারি ডাল গত বছর ছিল ৬৫ টাকা, বর্তমানে ৫৭ টাকা, মটর ডাল গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩৭ টাকা, বর্তমানে ৪৫ টাকা, সাদা মটর গত বছর বিক্রি হয়েছে ২৮ টাকা, বর্তমানে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মুগ ডাল গত বছর রমজানের আগে বিক্রি হয়েছে
৯০ টাকা, কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৭ টাকা এবং সয়াবিন তেল প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৭০০ টাকা। অন্যদিকে পাম তেল প্রতি মণ গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৩০০ টাকা, পেঁয়াজ গত বছর এমন সময়ে বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, রসূন গত বছর ছিল ১০০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা, চীনা আদা গত বছর ছিল ৮০ টাকা, বর্তমানে ৯০ টাকায়। অপরদিকে চিনি গত বছর বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকা। এছাড়া গত বছর চিড়া বিক্রি হয়েছে এক ২ হাজার টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকায়। এছাড়া খেঁজুর গত বছর বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামে পচুর পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে। সাধারণত রমজান এলে শরবতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই চিনির ব্যবহারও বাড়ে কয়েক গুণ। বর্তমানে বাজারে চিনির কোনো ঘাটতি নেই। এছাড়া সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে ছোলা এসেছে। এছাড়া এর বাইরে রমজানে সাদা মটর ও মসুর ডালেরও চাহিদা বেড়ে যায়। ভোজ্যতেল, চিড়া এবং খেজুরের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। সাধারণত খেজুর আমদানি হয় ইরান, তিউনিসিয়া, দুবাই ও সৌদি আরব থেকে। তবে খেঁজুরের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড ও ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, রমজানের বাজার ধরার প্রতি বছরই ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি থাকে। চলতি বছর ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন। এখনো অনেক পণ্য আসার পথে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে অনেক দেশে পণ্যের উৎপাদনে ছন্দপতন হয়েছে। তাই পণ্যের দাম বেড়েছে হু হু করে। বিশেষ করে ডাল জাতীয় পণ্য ও ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, রমজানকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা গত তিন চার মাস আগে পণ্য আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুলেন। ইতোমধ্যে পণ্যের চালান গুদামে এসে পৌঁছেছে। কিছু বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। আবার তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমদানির পরিমাণও বাড়ছে। বাজারে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে ছোলা, মটর ডাল, মশুর ডাল, খেসারি ডাল এবং চিনির কোনো ঘাটতি নেই। তবে আন্তর্জাতিক বাজার বাড়ার কারণে অনেক পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় একটু বেশি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজলাবদ্ধতা নিরসন কাজের সমন্বয়ে হবে সাব কমিটি
পরবর্তী নিবন্ধদেশে একদিনে শনাক্ত ৮৩৪৫ মৃত্যু ২৯ জনের