জলাবদ্ধতা নিরসন কাজের সমন্বয়ে হবে সাব কমিটি

২১ খাল নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করবে চসিক স্থানীয় সরকার বিভাগের পর্যালোচনা সভায় সিদ্ধান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ

নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন কাজ সমন্বয়ের লক্ষ্যে একটি সাব কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের পানি সরবরাহ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটি নগরের খাল উদ্ধার ও সংস্কারে কাজ করবে। গতকাল স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আগামী বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত কার্যক্রমের পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। সভায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। জলাবদ্ধতা নিরসন সংক্রান্ত সভা শেষে সিটি মেয়র প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে নগর উন্নয়নে চসিকের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের চিত্র ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন মেয়র। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব চসিকের কয়েকটি প্রকল্পের প্রশংসা করে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। সিটি মেয়র বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেন।
২১ খাল নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করবে চসিক : সভায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নগরে জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে চলমান প্রকল্পগুলোর সার্বিক তথ্য
তুলে ধরেন। তিনি নগরে যেসব ছোট খাল-নালা আছে সেগুলো সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পরিষ্কার করা হচ্ছে বলে অবহিত করেন।
মেয়র বলেন, সিডিএর মেগা প্রকল্পভুক্ত ৩৬টি খালের বাইরে ২১টি খাল আছে। সেগুলো যদি খনন করা না হয় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না। কারণ একটা খালের সাথে অন্য খালের সম্পর্ক আছে। ২১ খালের অনেকগুলোতে স্থাপনা হয়ে গেছে, ভরাট হয়ে গেছে। এসব খালকেও জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী চসিককে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দেন।
এ প্রসঙ্গে মেয়র আজাদীকে বলেন, আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কী করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেন। খাল-নালা পরিষ্কার করতে বলেছেন। সিডিএ মেগা প্রকল্পের বাইরে যে ২১টি খাল আছে সেগুলো নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করতে বলেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ২১টি খাল আমরা চিহ্নিত করেছি। মেগা প্রকল্পভুক্ত অনেক খাল যেগুলো বেশি ভরাট হয়ে গেছে সেগুলোও পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় সবকিছু করতে বলেছেন। খাল-নালা যেগুলো ইতোপূর্বে খনন-পরিষ্কার করেছি প্রয়োজনে সেগুলো আবারো পরিষ্কার করতে বলেছেন।
সভায় সমন্বয় প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, শুধু চট্টগ্রাম না, ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনগুলোতে যেসব সেবা সংস্থা আছে তারা কাজ করার ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে যে কোনো প্রকল্প নিতে হবে সেবা সংস্থাগুলোকে। ঢাকায় রাজউক কোনো প্ল্যান দিলে সেটা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করতে বলেছেন।
সভায় উপস্থিত চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১ খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৮ কিলোমিটার। এছাড়া ৩৬ খালের সংযোগ খালও আছে। সব মিলিয়ে ১০৯ কিলোমিটার খাল খনন ও পরিষ্কার করতে হবে। এগুলো নিয়ে গঠিত সাব কমিটি পর্যবেক্ষণ করবে। পরবর্তীতে প্রকল্প নেওয়া হবে।
এদিকে সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে যেন জনভোগান্তি না হয় সেই লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। শুধু ফরমাল সভা করে পরিকল্পনা করলে হবে না। ফলাফল আনতে হবে। এজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার চলমান সকল প্রকল্পের কাজ সমন্বয় করার তাগিদ দেন। এছাড়া জনস্বার্থে যে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও মেয়রদের দিকনির্দেশনাও দেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম।
মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক : প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে কথা হয়েছে। আমাদের চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে জানতে চেয়েছেন। আড়াই হাজার কোটি টাকার আমাদের যে প্রকল্প সেটার উপর একটা প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেছি। তিনি বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলোও তুলে ধরেছি।
মেয়র বলেন, রাস্তাঘাট নিয়ে তো আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। সেখানে ফুট ওভারব্রিজ ও গোলচত্বর অন্তর্ভুক্ত। এর বাইরে সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে পরিকল্পনা আছে; সেটা তুলে ধরেছি। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছোট ছোট পার্ক করার পরিকল্পনা নিয়েছি, বিভিন্ন দিঘিকে ঘিরেও সৌন্দর্যবর্ধন পরিকল্পনা আছে। আমাদের এসব পরিকল্পনার প্রশংসা করেছেন তিনি। শহরকে নান্দনিকভাবে সাজানোর জন্য যে প্রকল্প নিচ্ছি তার প্রশংসা করেছেন।
মেয়র বলেন, ওনার (মুখ্য সচিব) চাওয়া হচ্ছে শহরের রাস্তাঘাটগুলো যেন ঠিক থাকে। শহরটা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। মানুষের স্বস্তির জন্য সবুজায়ন করা এবং এ বিষয়ে প্রকল্প নেওয়া।
মুখ্য সচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের চলমান প্রকল্প নিয়ে কথা হয়েছে। মেয়র মহোদয় ভবিষ্যতে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করতে চাচ্ছেন সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সবুজায়ন এবং নতুন রাস্তা নিয়ে যে প্রকল্প গ্রহণ করতে চাচ্ছেন সেগুলোর কথা বলেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকটি ঘটনায় পাল্টে যায় অনেক কিছু
পরবর্তী নিবন্ধখাতুনগঞ্জে রমজানের প্রস্তুতি মজুদ পর্যাপ্ত, গত বছরের তুলনায় দামও বেশি