ঈদ : সাম্যের শ্রেষ্ঠ দর্শন

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | রবিবার , ১ মে, ২০২২ at ৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ

 

জাতীয় কবি নজরুলের ‘মানুষ’ কবিতার কয়েকটি পংক্তি নিবন্ধের সূচনায় উপস্থাপন করতে চাই। ‘গাহি সাম্যের গানমানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!/নাই দেশকালপাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,/ সব দেশে, সব কালে, ঘরেঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’ পবিত্র ইসলামের সংযমআত্মশুদ্ধির মাস রমজান এবং মাস শেষে ঈদউলফিতর উদযাপন প্রকৃত অর্থেই বিরোধবিচ্ছেদবিভাজনব্যবধান সংহার করে মানুষকে মানুষের মর্যাদায় সমাসীন করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে এর প্রণীত উদ্দেশ্য। অসাম্প্রদায়িকমানবিক সমাজের মৌলিক দর্শন সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠাকল্পে প্রকৃত শিক্ষা ও যথার্থ পরিচর্যা অনুশীলনে এই মাস অতি তাৎপর্যপূর্ণ। এটি সর্বজনবিদিত যে, ‘ঈদ’ শব্দটির উৎপত্তি আরবি ‘আওদ’ থেকে। যার অর্থ ঘুরে আসাপ্রত্যাবর্তন করা। আরবিতে বিশেষ দিবস বা উৎসবের দিনকে ঈদ বলা হয়। ফিতর অর্থ রোজা ভাঙা বা ইফতার করা। ইসলামি পরিভাষায় ‘রোজার ঈদ’কে ঈদউলফিতর বা রোজা ভাঙার উৎসব বলা হয়। প্রতিটি ধার্মিক মুসলমান পবিত্র ইসলামের বিধান মোতাবেক পুরো রমজান মাসে প্রতিদিন সূর্যাস্তের সময় ইফতারের মাধ্যমে রোজা বা উপবাস ভাঙলেও; ঈদের দিনই এক মাসের নিয়মিত উপবাস ভাঙা হয়। যদিও রোজাদারদের জন্য প্রত্যেক দিনের ইফতারের মুহূর্তেই আনন্দের, তথাপি ঈদউলফিতরের দিন বিশেষ আনন্দ ও উৎসবের।

ঈদউলফিতরের একটি ওয়াজিব বা আবশ্যিক আমল হলো ঈদের নামাজ। সাধারণত ঈদ উৎসব শুরু হয় এই সালাতের মাধ্যমে। ঈদের নামাজে ধনীগরীবআমিরফকির নির্বিশেষে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান এক কাতারে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহত্ব ঘোষণা করে থাকে। রাসূল (সাঃ) নারীপুরুষনির্বিশেষে সবাইকে ঈদগাহের জমায়েতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘ঈদের দিন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বলেন তারা আমার ফরজ আদায় করে প্রার্থনার জন্য বের হয়েছে। আমার মর্যাদা, বড়ত্ব ও সম্মানের কসম! আমি অবশ্যই তাদের প্রার্থনা কবুল করবো।’ মাহে রমজান মাসে আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের অভিনব পন্থা অবলম্বনে সিয়াম সাধনা পবিত্র ইসলামের বিধিবদ্ধ ইবাদত যা ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। মহান আল্লাহ্‌ প্রদত্ত দীর্ঘ একমাস দেহ ও মনের পরিশুদ্ধতার যে পরীক্ষা, তার সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ঈদের নিরন্তর আনন্দ উৎসবে। শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে পালিত হয় এই উৎসব যা ঈদউলফিতর হিসেবে পরিচিত।

নামায, ইফতার, সেহরি, পবিত্র কোরআন পাঠ, যাকাত প্রদান, নতুন কাপড় কেনা ও পরিধান করা, উপহার বিতরণ ও বিনিময় ইত্যাদি সম্পন্ন করে মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টিতে নিজেকে বিলীন করার আত্মতৃপ্তিতে সমৃদ্ধ ঈদউলফিতরের এই উৎসব। কারো সাথে শত্রুতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্বের নবতর উপযোজনে সার্থক হয়ে ওঠে এ আনন্দ উৎসব। ধনী, গরীব নির্বিশেষে এই উৎসবের মাত্রিকতা যেমন ভিন্ন; সমাজ পরিবর্তনের আধুনিক পর্যায়ে এসে এই উৎসব এক অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির বাহন হিসেবে বিকশিত। মাহে রমজানের এই অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনার মূলে রয়েছে শাশ্বত বন্ধুত্বভ্রাতৃত্বসৌহার্দের যোগসূত্র যা ব্যক্তিকে মানবিকতায় ও নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ করে এক সুষম সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের সকলের জানা যে, পবিত্র রমজান মাসে ধার্মিক মুসলমানগণ মানবসত্তার আত্মিক উৎকর্ষ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিশিষ্ট উপাদান হিসেবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে উনত্রিশ বা ত্রিশ দিন রোজা আদায় করেন।

ইসলামী শরিয়তের পঞ্চ বুনিয়াদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে রোজা। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০৫০০০ বছর কালের আদি পিতা হযরত আদম (সাঃ) থেকে হযরত ঈসা (সাঃ) পর্যন্ত সকল নবী রাসুলের শরিয়তে ও তাদের উম্মতগণের উপর রোজা আদায় করা বিধিবদ্ধ ছিল। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩) রোজা বিষয়ে অপর বর্ণনায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক ইবাদতই ইবাদতকারী ব্যক্তির জন্য, পক্ষান্তরে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। (সহীহ বুখারী হাদীস১৯০৪) প্রকৃতপক্ষে নিজের ও অপরের জীবন সমৃদ্ধিতে নিবেদিত সকল কর্মেরই যোগফল হচ্ছে ধর্ম। এই অমিয় সত্যকে ধারণ করে যে কোন ধর্মে বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গ ধর্মের গোড়াঁমী বা ধর্মান্ধতাকে পরিহার করে প্রকৃত ধার্মিকতার নির্যাসকে প্রাধান্য দিয়ে স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য রোজা আদায় করে থাকেন।

রোজা’ ফার্সি শব্দ যাকে আরবিতে ‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’ বলা হয়। এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা ও সহজসরল জীবনযাপনে অভ্যস্থ হওয়া। মহিমান্বিত রমজান মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও ইন্দ্রিয় সূখভোগ থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে ইসলামী পরিভাষায় সিয়াম সাধনা। আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের মাধ্যমে স্বীয় দেহ মনকে নিয়ন্ত্রণ এবং এর পরিপূর্ণ উপলব্ধিতে অপরের কল্যাণকে নিশ্চিত করার মধ্যেই রমজানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য উপস্থাপিত। রোজা একমাত্র মানবজাতির জন্যই স্বতন্ত্র ইবাদত যা ঈমানের অঙ্গ হিসেবে ফরয বা অবশ্যই পালনীয়। রমজান মাসে রোজা পালন, ইফতারসেহরি গ্রহণ, যাকাত প্রদান ইত্যাদি কর্মকান্ড শুধু নিজের উৎকর্ষকতা অর্জনের জন্য নয়; বিভিন্ন মাত্রিকতায় নিজস্ব সম্প্রদায় ছাড়াও অন্য সম্প্রদায়ের বা ভিন্ন মতামতের জনগোষ্ঠীর সাথে বিশ্বজনীন মানবতাবাদকে ধারণ করার এক অবর্ণনীয় সুবর্ণ সৃষ্টির মাস। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই মানবিক বাণীকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে অন্যের পানাহারসহ নানাবিধ কষ্টের উপলব্ধি এক নতুন মাত্রায় মানবজাতিকে প্রতিষ্ঠিত করে যা সমাজের পারষ্পারিক আপোষ, ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্বের সেতুবন্ধনকে পরিপূর্ণভাবে প্রাণিত করে।

আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পবিত্র রমজান মাসকে তিনভাগে ভাগ করে প্রথম দশ দিন ‘রহমত’, দ্বিতীয় দশদিন ‘মাগফিরাত’ ও তৃতীয় দশদিন ‘নাজাত’ হিসেবে অভিসিক্ত করে স্বমহিমায় এই তিনটি দশককে সমাদৃত করেছেন। রহমত ও মাগফিরাত অর্জন শেষে তৃতীয় দশকে পরকালের শাস্তি থেকে মুক্তির বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে ইবাদত বন্দেগী অধিকতর কার্যকর হিসেবে বিবেচিত। তিনি আরও বলেন, ‘যারা পবিত্র রমজান মাসে নিজ ব্যবহার ও আচারআচরণকে সুন্দর করবে তার সেদিন খুব সহজেই পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। যারা এই মাসে ভৃত্য বা অধীনস্তদের কাজ কমিয়ে দেবে মহান আল্লাহ শেষ বিচার দিবসে তার হিসাব সহজ করে দিবেন। যারা রমজান মাসে মানুষকে বিরক্ত করা বা কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবে বা অন্যদের দোষ ঢেকে রাখবে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ নিজ ক্রোধ থেকে তাদের রক্ষা করবেন। যারা এতীমকে আদরযত্ন বা সম্মান করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদেরকে সম্মান করবেন। যারা এই মাসে আত্নীয়স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করবে ও তাদের সাথে সম্পর্ক রাখবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদেরকে রহমতের ধারায় সিক্ত করবেন, আর যারা এই মাসে আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে বা তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে আল্লাহ শেষ বিচারের দিবসে তাদেরকে নিজ রহমত থেকে বঞ্চিত করবেন।’

আমরাজানি দেহমনের সমন্বয়ে যে মানবসত্ত্বার বিকাশ ও বিস্তার তার মূলে রয়েছে নাফ্‌স ও রূহের পরস্পর বিরোধী কর্মযজ্ঞ। নাফ্‌স হচ্ছে মানুষের মনস্তাত্তিক কিছু বিরূপসত্ত্বা যেমন কামক্রোধলোভমোহ এবং অপাংক্তেয় পানাহার ইত্যাদি। পাপের প্রতি আকৃষ্ট, পাপ করে অনুতপ্ত হওয়া এবং পাপের প্রতি অনুরাগী না হয়ে পবিত্র কাজের প্রতি আকর্ষণ এই তিন ধারায় বিভক্ত নাফ্‌স’র উত্তম পর্যায় হচ্ছে নির্মোহ ও নির্লোভ থেকে পাপাচার মুক্ত বা নাজাত প্রাপ্তি। অন্যদিকে বলা যায় পানাহার ইত্যাদি দ্বারা নাফ্‌স যখন শক্তিশালী হয়, রূহ তখন দুর্বল হয়ে পড়ে। আর রোজা পালনের মধ্যে অর্থাৎ পানাহার ইত্যাদি থেকে নিজেকে বিরত রেখে নাফ্‌সকে শক্তিহীন করে আত্মার পরিশুদ্ধতা উন্নতকল্পে রূহকে শক্তিশালী করার মধ্যেই রোজা পালন হয় মহিমান্বিত। মূলত এই রূহের পরিশুদ্ধি আত্মশুদ্ধি এবং আত্মসংযমের নিরন্তর সাধনা যা সূফি দর্শণের আধ্যাত্মিক অগ্রগতি এবং মানবকল্যাণে স্বীয় সত্ত্বাকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে স্রষ্টার প্রতি অপরিসীম আনুগত্য প্রকাশ এবং মাহে রমজানের অর্থবহ কার্যকারিতার বিধান। পবিত্র কোরআনে শুধুমাত্র যে মাসটির কথা উল্লেখ আছে সেটি হচ্ছে রমজান মাস। এই রমজান মাসের তাৎপর্য ইসলামের ইতিহাসে বিশাল। এই পবিত্র রমজান মাসেই পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআন নাজেল হয়েছে এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ রজনীও এ মাসেই অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে বহু ঘটনা সম্বলিত এই মাস ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের অনেক বেশি গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ।

পবিত্র রমজান মাসের শেষে যে ঈদউলফিতর বা ঈদ উৎসব তার পটভূমি উপলব্ধি করতে হলে পবিত্র রমজানের দর্শন তথা সংযম, ত্যাগ, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ, আচারআচরণ, নামাজদোয়া, অন্যের কষ্টে ব্যথিত হওয়া, গরীবদুঃখীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদির আলোকে উপলব্ধি করতে হবে। ইফতারসেহরি, তারাবির নামাজ, যাকাত প্রদান, ধনীদরিদ্রের ব্যবধান ঘুছিয়ে এক আল্লাহ তালার সৃষ্ট মানব হিসেবে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ, অন্য ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা ইত্যাদি পরিহার করে পরিপূর্ণ মানবিক ও অসাম্প্রদায়ীকতায় দিক্ষিত হয়ে একটি মননশীল ও সুন্দর মানসিকতায় ঋদ্ধ হওয়া পবিত্র রমজানের শিক্ষা এবং এরপরেই সকলে মিলেমিশে শ্রেণীবর্ণধনীদরিদ্র নির্বিশেষে ঈদ উৎসব আনন্দ ভাগাভাগি করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ ও শান্তি নিহিত রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, এই মাসে যাকাত ও ঈদের দিন ফিতরা দেওয়ার রেওয়াজ একটি বৈষম্যহীনতার অসাধারণ উদাহরণ। প্রতিটি সামর্থ্যবান ও সচ্ছল মুসলমানদের উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। ঈদ উদযাপন সর্বজনীন করে ধনীদরিদ্রনির্বিশেষে সবার মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতেই সদকাতুল ফিতরের বিধান চাল করা হয়েছে। পাশাপাশি এই সদকার মাধ্যমে রোজার ভুলত্রুটিও মাফ হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রোজাকে বেহুদা কথাআচরণ থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে এবং দরিদ্রদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য সাদাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ১৬০৯) যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি বা পবিত্র করা। ব্যক্তিগত গচ্ছিত সম্পদের উপর গরীবের যে পাওনা রয়েছে তা আদায় করার নামই যাকাত। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে ‘তোমরা মানুষকে আল্লাহর হুকুম মতে সম্পদের যে অংশ অন্যদের বন্টন করে দাও তা তোমাদের সম্পদের বৃদ্ধি ঘটায়’। অর্থাৎ যাকাত ফিতরা আদায় করে আর্থিকভাবে অসচ্ছল আত্নীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী বা সমাজের গরীব দুঃখী মানুষকে খাদ্যদ্রব্য, নতুন কাপড়চোপড় বা নগদ অর্থ প্রদান করে তার অভাব ঘোচাতে বা স্বাবলম্বী হওয়ার পথে উৎসাহিত করাই যাকাতের মূল লক্ষ্য।

যাকাত দাতা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৈধ উপাজর্নের পথে নিয়োজিত থাকবেন এবং এই বৈধ উপার্জন থেকেই অন্যকে সাহায্য সহযোগীতা করবেন এটিই কাম্য। আর অপর দিকে যাকাত গ্রহীতা দাতার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য রেখেই প্রাপ্ত যাকাত যথাযথভাবে ব্যবহার করে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে অন্যকে এ রকম যাকাত প্রদান করে উৎসাহিত করার মনমানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হবেন এটিই প্রত্যাশিত। ভিক্ষা বৃত্তিকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না বরং আত্মনির্ভরতা ও স্বয়ংম্ভরতাকে উজ্জীবিত করে নিজ ও নিজ পরিবারের দায়ভার গ্রহণের মধ্যে আত্মসন্তুষ্টির সার্থকতা। আমাদের প্রিয় নবী কুঠারিয়াকে ভিক্ষা না করে নিজের শক্তি বলে বৈধ উপার্জনের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার শিক্ষাই দিয়ে গেছেন।

ঈদ উৎসবের মহান শিক্ষা হচ্ছে হৃদয়ের সকল কালিমা ও পাপের গ্লানিলোভ ও লালসাকে নিধন করে অন্ধকারঅসূচিবিদ্বেষবিভেদকুপমন্ডুকতাসাম্প্রদায়িকতাসহ অশুভ ও অসুন্দর মানসিকতা থেকে পরিত্রাণ। সমৃদ্ধসুন্দরউজ্জ্বলআদর্শিক মনন ও সৃজনশীল পন্থা অবলম্বনে নিজেকে পরিশুদ্ধ ও দেশজাতিকে ভালবেসে মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার প্রতিফলনে এর নির্যাস উম্মোচিত। পরিবার ও সমাজকে আলোকিত করে অন্যকেও আলোকিত করার পথ প্রশস্তকরণে ইহ ও পরকালীন মঙ্গল কামনায় নিজের জীবনকে যথার্থ অর্থে পরিচালনা করার মধ্যেই ঈদ উৎসবের সফলতা ও সার্থকতা। মূলত সাম্যের অমিয় বার্তার নিরন্তর প্রচারপ্রসার এবং জীবনপ্রবাহকে পরিশীলিত করে বিশ্বকে আলোকোজ্জ্বল করার শক্তিমানতা ঈদ উৎসবকে পরিপূর্ণতা দান করে। প্রাসঙ্গিকতায় পৃথিবী নামক এই গ্রহের সকল মানব সন্তানকে ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও দেশজাতিবিশ্বের সর্বাঙ্গীণ সুখশান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য মহান স্রষ্টার দরবারে বিনীত প্রার্থনা নিবেদন করছি।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলা কবিতায় ঈদ : স্বরূপ ও ঐতিহ্য
পরবর্তী নিবন্ধঈদুল ফিতর অনাবিল আনন্দ উৎসব