বান্দরবানে ডেলিভারিতে শিশুর মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল

অপারেশনের সময় মাথা কাটা পড়ে মৃত্যুর অভিযোগ পরিবারের

বান্দরবান প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২২ at ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবান সদর হাসপাতালে সিজারিয়ান ডেলিভারি অপারেশনে মাথা কাটা পড়ে বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। তবে চিকিৎসকদের দাবি শিশুটি মায়ের গর্ভেই মৃত ছিল কিন্তু শিশুর পরিবারের দাবি ডেলিভারির আগে চিকিৎসকরা পরিবারকে শিশু মৃত কথাটি বলেননি।

এ নিয়ে ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে হাসপাতালে। বুধবার(২৭ এপ্রিল) রাত দশটার সময় এ ঘটনা ঘটে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা জানায়, বান্দরবান পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের হাফেজঘোনা এলাকার বাসিন্দা পিঙ্কি আক্তারের প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক অপারেশনের পরামর্শ দেন। পরিবার এবং চিকিৎসক উভয়ের সম্মতিতে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশুটি ভূমিষ্ট করানোর সময় চিকিৎসকের অসর্তকতায় শিশুর মাথা কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়। শিশুর মা সুস্থ আছেন।

সিজারিয়ান ডেলিভারি অপারেশনের নেতৃত্ব দেন ডাক্তার চিংম্রা।

বিষয়টি জেনে শিশুর পরিবার এবং এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালে জড়ো হয়। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

সদর হাসপাতালে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, সিভিল সার্জন নিজার রঞ্জিত নন্দি, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল আলমসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসক শিশুর বাবাসহ স্বজনদের অভিযোগ শোনেন। চিকিৎসকদের সাথেও কথা বলেন।
তবে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে চিকিৎসক এবং শিশুটির পরিবার।

শিশুটির বাবা রাজমিস্ত্রী মাহাবুব আলম বলেন, “চিকিৎসকের অসর্তকতায় আমার শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এটি দুর্ঘটনা নয়, এটি হত্যা। চিকিৎসকরা এখন মিথ্যা বলছেন, মায়ের গর্ভে শিশুটি মৃত ছিল। কিন্তু ডেলিভারির আগেতো কথাটি জানানো হয়নি আমাদের। আমার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থাও তেমন খারাপ ছিল না। আমি সন্তান হত্যার বিচার দাবি করছি।”

শিশুর মা পিঙ্কি আক্তার বলেন, “আমার গর্ভে সন্তান সুস্থ ছিল। চিকিৎসকরা ডেলিভারির আগে গর্ভে শিশু মারা গেছে কথাটি আমাদের জানায়নি। ডাক্তারের অসর্তকতায় বাচ্চার মাথা কাটা পড়ে আমার সন্তান মারা গেছে কিন্তু তারা এখন মিথ্যাচার করছে বাচ্চা মৃত ছিল বলে। আমি সঠিক বিচার চাই।”

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর কামরুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, “আমার ওয়ার্ডের হাফেজঘোনার বাসিন্দা তারা। ডেলিভারির আগে শিশুটির মা গর্ভে সুস্থ বাচ্চা নিয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এখন চিকিৎসকরা বলছেন শিশুটি গর্ভেই মৃত ছিল। তাহলে কথাটি চিকিৎসকরা পরিবারকে আগে জানাননি কেন।”

ঘটনাটির সঠিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের আরএমও রেজাউল হায়দার ও মেডিক্যাল অফিসার মো. সাজ্জাতুল আমিন বলেন, শিশুর ডেলিভারি অপারেশন করেছেন ডা. চিংম্রা।

তাদের দাবি, বাচ্চাটা মায়ের পেটেই মৃত ছিল। স্বাভাবিকের বড় হওয়ায় ফোরসেপ ডেলিভারি বা যন্ত্র দিয়ে টেনে বের করার সময় বাচ্চার মাথায় আঘাত লেগেছিল কিন্তু মায়ের ঝুঁকি কমানোর জন্য মৃত বাচ্চা প্রসব করানো জরুরি হয়ে পড়েছিল। এটা স্বাভাবিক বিষয়। চিকিৎসকদের কোনো ত্রুটি ও অবহেলা ছিল না।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, “শিশু মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিষয়টি তদন্ত করবেন।”

সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী বলেন, “চিকিৎসকের অবহেলায় নয়। শিশুটি মায়ের পেটেই মৃত ছিল। শিশুর মাকে সুস্থ রাখতে অপারেশন করে শিশুটিকে বের করা হয়। তারপরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্ত্রী হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা