ভূমিকম্পে আতঙ্কিত নয়, সচেতন হবার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার সরকার দ্রুত সময়ে টাস্কফোর্স গঠন করবে

| মঙ্গলবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ

দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকরা জানিয়েছেন, সামপ্রতিক ভূমিকম্পের কারণে আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই, বরং প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় বিশেষজ্ঞরা এ মতামত দেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞদের আহ্বান জানান, তারা যেন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সরকারের করণীয় সম্পর্কে লিখিত পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমরা হাত গুটিয়ে রাখতে চাই না, আবার অবৈজ্ঞানিক কোনো পদক্ষেপও নিতে চাই না। আপনাদের পরামর্শগুলো দ্রুত লিখিত আকারে আমাদের দিন, সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং এক বা একাধিক টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়া মাত্রই সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। খবর বাসসের।

বৈঠকে উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

বিডিনিউজ জানায়, বিশেষজ্ঞদের পাঠানো লিখিত সুপারিশ নিয়ে সরকার দ্রুত সময়ে আলোচনা করে টাস্কফোর্স গঠন করবে বলে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। ভূমিকম্পের বিষয়ে আশু করণীয় নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্সে সরকারিবেসরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন।

বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রফেসর মো. জয়নুল আবেদীন, বুয়েট অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী ও অধ্যাপক তাহমীদ মালিক আলহুসাইনী, ঢাবি অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান, চুয়েট অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাবি অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার, বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম, আবহাওয়াবিদ মো. রুবাইয়্যাত কবীর, ভূতত্ত্ববিদ ড. রেশাদ মো. ইকরাম আলী, ঢাবির দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন, ঢাবির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণতা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান এবং বুয়েট অধ্যাপক ইসরাত ইসলাম।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কয়দিন আগে ভয়াবহ ভূমিকম্পে যাদের মৃত্যু হলো, যারা আহত হলেনএটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। এমনটি যেন আর না হয়, তার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আপনারা পত্রপত্রিকায় লিখেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন। এই আতঙ্ক থেকে জনগণকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা প্রয়োজন, সরকারকে তা জানান। কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, কোন কোন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবেসব জানান। দুর্ঘটনা যেভাবেই আসুক, যেন আমরা সকল পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারি। তিনি জানান, ভূমিকম্পের প্রস্তুতি হিসেবে কী ধরনের মহড়া প্রয়োজন হবে, সে বিষয়েও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রয়োজন। তিনি বলেন, পাশাপাশি ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কোন পর্যায়ে আছি সেটিও মূল্যায়ন করতে হবে। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও ভূমিকম্পবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও সমন্বয়ের পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্প নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদেরকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘শুভেচ্ছা’ নামে একটি অ্যাপ করেছি। এই অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের সাথে যুক্ত হোন। অ্যাপটিতে আরও কী ধরনের ফিচার আনা যেতে পারে, সে বিষয়েও আমাদের পরামর্শ দিন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূমিকম্পকে ঘিরে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক গুজব তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, ১০ দিনের মধ্যে, ১ মাসের মধ্যে, বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবেএ ধরনের অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তারা বলেন, ভূমিকম্প কখন হবেকেউ বলতে পারে না। কোন অঞ্চলে কত বছরে কতগুলো ভূমিকম্প হয়েছে এবং তাদের মাত্রা কী ছিল, তা দেখে একটি সময়সীমা অনুমান করা যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনতারিখসময় বলা যায় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া
পরবর্তী নিবন্ধনগরে বহুতল ভবন নির্মাণে পর্যাপ্ত সতর্কতা নেই