আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য স্বাগত জানানো হবে উল্লেখ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তবে তার আগে জুলাই–আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করা হবে। মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগের যারা হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বিচারে অপরাধী প্রমাণিত না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার পাবে। যারা অপরাধী নয় তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের মতোই স্বাধীন। তাদের (আওয়ামী লীগ) বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভিত্তিতে লড়াই করবো আমরা। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে পুনর্গঠন করা হবে যাতে স্বৈরাচার আর কখনও ফিরে আসতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার রাস্তার প্রতিটা দেয়ালে প্রকাশ পেয়েছে আগস্টে ছাত্র–নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের উদযাপন। মাইলের পর মাইল দেয়ালজুড়ে আঁকা হয়েছে বিদায় নেওয়া এই শাসকের কার্টুন। শব্দগুলো খুবই বিস্ফোরক তবে এই তরুণ মস্তিষ্কগুলো অনেক ভাবনা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আশা–আকাঙ্ক্ষায় ভরপুর। তারা তাদের ভবিষ্যতকে এই চিত্রগুলোতে ফুটিয়ে তুলেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় কিছু।
আমাকে সরকারের দায়িত্ব নিতে বলায় শুরুতে আমি তা এড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম, কাউকে খুঁজে নাও। কিন্তু পরে বললাম, ঠিক আছে, তোমরা তোমাদের জীবন দিয়েছো, তোমার বন্ধুরাও তাদের জীবন দিয়েছে, তাই আমি আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবো। জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে নিহত এবং আহতদের বিষয়ে তিনি বলেন, আগের সরকার সম্পূর্ণ নিপীড়নের পরিবেশ তৈরি করেছিলো। হত্যা, গুম ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস সাধন– এটি একটি ফ্যাসিবাদী শাসন ছিল।
শেখ হাসিনার গেলো ১৫ বছরের শাসনামলে সাড়ে তিন হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে গুম করা হয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হাসিনা শুধু ভারতেই আশ্রয় নিয়েছেন তা নয়, সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো তিনি যে কথা বলছেন, এটা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ভারতে বসে সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে সহিংসতার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে তিনি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত চেয়েছেন। যদিও কেউ বিশ্বাস করে না যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাতে রাজি হবেন।
এসময় নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। আমরাও ব্যবসা নিয়ে ভাবছি। আমরা কোনো সংকটে সাহায্য করার জন্য বিনামূল্যে টাকা চাইছি না; আমরা একটি ব্যবসায়ী অংশীদার চাই। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য খোলা রয়েছে। তিনি দেশটিকে পুনর্গঠিত করার অঙ্গীকার জানিয়ে বলেন, দেশে ছয় দফা সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি প্রশাসন এবং জাতীয় সংবিধানকে কেন্দ্র করে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের দেশের বাইরে পাচার করা হাজার কোটি ডলার পুনরুদ্ধারেও তিনি কাজ করছেন বলে জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রমের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাই একমাত্র স্বৈরাচারের ফিরে আসাকে রুখে দিতে পারে। সংস্কারই পুরো বিপ্লবের মূল। এ কারণেই আমরা বিপ্লব পরবর্তী একে আমরা বাংলাদেশ ২.০ বলছি।