পাহাড় কাটা রোধে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি

অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ

| মঙ্গলবার , ১৩ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

 

 

পাহাড় কাটা চলছে অবিরাম। থেমে নেই পাহাড় কাটার যজ্ঞ। পাহাড় কেটে ছোট্ট পরিসরেই গড়ে তোলা হচ্ছে বসতি। অবৈধভাবে গড়ে উঠছে একের পর এক ঘর। এবিষয়ে প্রভাবশালীদের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনও কম দায়ী নয় বলে অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের। গত ১০ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে রাতে দিনে পাহাড় কাটা চলছে বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায়। পুলিশের কার্যক্রম না থাকার সুযোগ নিয়ে সংঘবদ্ধ এবং প্রভাবশালী একটি চক্র স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় সাবাড় করছে। ওই জায়গায় প্লট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন চন্দ্রনগর কলাবাগান এলাকায় জনৈক আরিফ নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি চক্র গত কয়েকদিন ধরে পাহাড় কাটছে। রাতে দিনে পাহাড় কেটে মাটি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। প্রায় তিন একর আয়তনের বিশাল পাহাড়টির বেশ কিছু অংশ ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। এখানে প্লট করে বিক্রি করা হবে বলেও স্থানীয়দের জানানো হয়েছে। এলাকাবাসী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, পুলিশসহ প্রশাসনের কার্যক্রম না থাকার সুযোগে পাহাড়গুলো সাবাড় করা হচ্ছে। তারা আগেও পাহাড় কেটেছে। তবে আগে লুকিয়ে কাটলেও গত কদিন ধরে প্রকাশ্যে স্কেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলেন, আমরা খবরটি দেয়ার মতো কাউকে পাচ্ছি না। পুলিশের মোবাইল বন্ধ। তাদের কোনো কার্যক্রমও নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকসহ অনেককে ফোন করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসের ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। যখন এই রিপোর্ট লেখা হচ্ছিল তখনো পাহাড়টি কাটা চলছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড় কাটা রোধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের জন্য ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দান করেছিলেন তৎকালীন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেছিলেন, এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে চলতি ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে দেশের বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ শতকরা ২০ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্যে বনায়ন ও বন সংরক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ জন্য বনভূমি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ১৯২৭ সনের বন আইনের ৪ ও ৬ ধারায় প্রকাশিত গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্ভুক্ত এমন সকল বনভূমিকে ২০ ধারায় সংরক্ষিত বন ঘোষণার প্রক্রিয়া গ্রহণের লক্ষ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে দ্রুত প্রস্তাব প্রেরণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা প্রদান করেন।

পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগদিনের পর দিন পাহাড় কেটে নগরীতেও বসতি নামের মৃত্যুপুরী গড়ে তোলা হলেও তা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের যেন কোন মাথাব্যথাই নেই। অথচ পাহাড় কাটা রোধ ও বিপন্ন হওয়া থেকে পরিবেশ রক্ষায় সরকারের আইনগত প্রতিষ্ঠান এটি। কিন্তু চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদফতর যেন ঘুমিয়েই থাকে সারাবছর। যতক্ষণ তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযোগ না আসে কিংবা গণমাধ্যমে রিপোর্ট না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকাশ্যে পাহাড় কাটার ধূম চললেও তাদের তেমন পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। যদিও এ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি পরিবেশ অধিদপ্তরের। পাহাড় কাটা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারার নেপথ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাকেই বড় করে দেখেন পরিবেশবিদরা। তাঁরা বলেন, ক্ষমতাশালী লোক যদি পাহাড় কাটে তাহলে অধিদপ্তরের কতটুকুইবা করার মতো থাকে। তাই অধিদপ্তরের পদক্ষেপকে ছোট করে দেখাটা ঠিক হবে না।

পাহাড়খেকোদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে পাহাড়খেকোরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো সাবাড় হওয়ার শঙ্কা দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, পাহাড় বেষ্টিত চট্টগ্রামে একশ্রেণির প্রভাবশালী রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে বসতবাড়ি করছে। জলাশয় ভরাট এবং পাহাড় কাটা রোধে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে।

এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা রোধে প্রয়োজন নাগরিকদের সমন্বিত উদ্যোগ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে সমাজের স্বার্থান্বেষী মানুষ আর বিগত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে বিলুপ্ত হয়েছে চট্টগ্রামের প্রায় ১৩০টির অধিক পাহাড়। আধুনিক সভ্যতার আধুনিকায়নে চট্টগ্রামের পরিবেশ যেন এক গুমোট বাঁধা নৈরাজ্যের সাক্ষী। ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম উন্নয়নের মহাসড়কে থাকলেও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে তা এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। তাঁরা বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষায় সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না থাকায় জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন যার যার মত করে বিভিন্ন সময়ে অভিযান শুরু করে জরিমানার প্রক্রিয়া চালিয়ে আসলেও ফলশ্রুতিতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে