পোশাক বদলাচ্ছে পুলিশের, কর্মবিরতি প্রত্যাহার

| সোমবার , ১২ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে বাহিনীর পোশাক পরে কাজে ফেরার কথা জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা; যাদের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান ‘ইউনিফর্ম’ বদলের পক্ষে সায় এসেছে অন্তর্র্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে এক বৈঠকে।

এ বৈঠকে আলোচনার পর পুলিশের নন ক্যাডার সদস্যরা আজ সোমবার থেকে কাজে ফেরার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, যারা ছাত্রজনতার গণ আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর থেকে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে একটা ‘সমঝোতা’ হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

প্রবল গণবিক্ষোভের মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলাআক্রমণ ও হত্যার শিকার হন পুলিশ সদস্যরা। এরপর থেকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ভয় ও আতঙ্কে কাজে ফেরেননি তারা। পরে কেউ কেউ থানায় ফিরলেও তারা সাদা পোশাকে ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করে ১১ দফা দাবি দেন তারা।

এর প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার বিকালে সচিবালয়ে কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্র্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত এম সাখাওয়াত হোসেন। বিকাল ৪টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম, আইজিপি মো. ময়নুল ইসলামসহ আইজিপির গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য এবং আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে কমিটির অন্যতম সদস্য সার্জেট আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে বৈঠকের পর আশ্বাস পাওয়ায় আমরা পোশাক পরে সোমবার (আজ) থেকে কাজে যোগ দেব। তিনি বলেন, পুলিশকে কোনো রাজনৈতিক দল যেন ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন। পুলিশের বর্তমান যে পোশাক আছে তা পরিবর্তনসহ যেসব দাবি আছে সেগুলোর ব্যাপারে বৈঠকে তারা একমত হয়েছেন।

ছাত্রজনতার গণ আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের আগে ও পরে পুলিশ হত্যা, থানা পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার পর সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের পুলিশের সদস্যরা কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন। আইজিপির সঙ্গে বৈঠক এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে ফেরার হুমকির মধ্যেও তারা অনড় ছিলেন। গতকাল বিকালে বৈঠক শেষে সার্জেট জুয়েল কাজে ফেরার পর নিরাপত্তার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাদের পাশে সেনাবাহিনী এবং বিজিবি আছে। কোনো সমস্যা হবে না।

স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৈঠকে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে মাননীয় উপদেষ্টা বলেছেন যেগুলো অতিসত্বর সম্ভব সেগুলো নিয়ে কাজ করা হবে। বাকিগুলো আইজিপির ওখান থেকে পর্যায়ক্রমে হবে।

এর আগে গত ৮ অগাস্ট আইজিপি ময়নুল ইসলাম পুলিশের বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন। পরে তিনি ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে গত শনিবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি যাননি। আইজিপি গেলেও তিনি সাধারণ পুলিশ সদস্যদের সামনে তোপের মুখে পড়েন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যদের দেখেতে গেলেও পুলিশ লাইনে যাননি। পরে মন্ত্রণালয়ে এসে তার প্রথম কর্মদিবসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিতি হন এবং আন্দোলনে থাকা পুলিশ সদস্যেদের প্রতিনিধিরদের সঙ্গে এ বৈঠক করেন।

পুলিশ সদস্যদের ১১ দফা দাবি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে যেসব পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে সেসব ঘটনার বিচার করতে হবে। পুলিশ কোনো সরকার বা রাজনৈতিক দলের অধীনে কাজ করবে না, পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের জনগণের সেবা তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে। সারাদিনে ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করানো যাবে না। অধঃস্তন কর্মচারীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোনো অবৈধ বা মৌখিক আদেশ পালন করতে পারবেন না। অধঃস্তন কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদোন্নতির মত পন্থা অবলম্বন করতে হবে। বার্ষিক নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিন করাতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মত অধঃস্থন কর্মচারীদের সোর্স মানি দিতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে ১০ তারিখের মধ্যে টিএ এবং ডিএ বিল পরিশোধ করতে হবে। নতুন বেতন স্কেল প্রণয়ন করতে হবে। ঝুঁকিভাতা বাড়াতে হবে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারস থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেকটি পুলিশ লাইন্স, থানা, ফাঁড়ি, গার্ড, ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপদত্যাগ করেছেন চবির সব হলের প্রভোস্ট
পরবর্তী নিবন্ধ২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ২৯ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার, টেকনাফে আটক ২