চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স–বাংলাদেশের (আইসিসি–বি) উদ্যোগে ‘ডিজিটালাইজিং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক গতকাল বুধবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।
এতে চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। ফলে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের সাথে আন্তর্জাতিক আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ছে দেশের। কিন্তু দেশের ৯০% আমদানি–রপ্তানি হয়ে থাকে কাস্টমসের মাধ্যমে। এখন সর্বত্র ডিজিটাইলাইজড হলেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখনও আমরা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে রয়ে গেছি। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্সের অন্যতম সক্রিয় সদস্য। তাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে ডিজিটাইলাজেশনের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, চিটাগাং চেম্বার ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস অটোমেশনের মাধ্যমে ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া ৪২ ধাপ থেকে ৭ ধাপে নেমে আসে। কিন্তু পরবর্তী কোন উদ্যোগ না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এখনো আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগেনি। তাই পেপারলেস, ক্যাশলেস ও ফেইসলেস সেবা নিশ্চিত করা গেলে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। আরএমজি সেক্টরের রপ্তানিকারকগণ সঠিক সময়ে ও নিয়ম মেনে পণ্য পাঠানোর পরও বিদেশী অনেক ক্রেতা রপ্তানি মূল্য পরিশোধ না করে পণ্যসমূহ ছাড় করিয়ে নেয়। এতে করে রপ্তানিকারকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই এসব রপ্তানি আয় পরিশোধের জন্য তিনি ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সহায়তা কামনা করেন।
আইসিসি–বি মহাসচিব আতাউর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের টিকে থাকতে হলে ডিজিটালাইজেশনের কোন বিকল্প নেই। এজন্য আমাদেরকে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অন্যতম বড় বাধা হচ্ছে সাইবার অপরাধ। এ বিষয়েও আমাদেরকে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের ট্রেড সাপ্লাই চেইন ফ্যাসিলিটি বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে ডিজিটাল সেন্টার ইনিশিয়েটিভ নেয়া হচ্ছে আইসিসি পক্ষ থেকে। তিনি বলেন–প্রতি ৩জন শ্রমিকের ১জন আইসিসিভূক্ত প্রতিষ্ঠানের সদস্য। ফলে বিশ্বব্যাপী আইসিসিভূক্ত প্রতিষ্ঠানের চেইন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আধুনিকায়নে এগিয়ে আসতে হবে। বক্তব্য রাখেন চেম্বার পরিচালকবৃন্দ অঞ্জন শেখর দাশ, মাহফুজুল হক শাহ, মোহাম্মদ আকতার পারভেজ, লুব–রেফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক মামুনুর রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মো. রাফিউল মনির, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার মারুফুর রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মোরশেদুল হক, রেডসী গেটওয়ে টার্মিনালের হেড অব কমার্শিয়াল সৈয়দ মোহাম্মদ তারেক, এপিএলের হেড অব অপারেশন এনামুল হক ও বিএসআরএমের হেড অব কমার্শিয়াল আলী মাহবুব হোসেন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন চেম্বার পরিচালকবৃন্দ এ. কে. এম. আকতার হোসেন, মাহবুবুল হক মিয়া, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন, খায়রুল আলম সুজন, ওয়াহিদ আলম, ওসমান গণি চৌধুরী প্রমুখ। বৈঠকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিয়ানমি স্টিলফেন, লিড ফর রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড লিগ্যাল রিফর্ম, ডিজিটাল স্ট্যান্ডার্ড ইনিশিয়েটিভ (ডিএসআই), ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি), সিঙ্গাপুর।
বক্তারা বলেন, সরকার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের জন্য বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো নিয়ে কাজ করছে। এর মাধ্যমে সরকারের বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থাকে একই ছাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে কাস্টমস এবং বন্দরে অনলাইনে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হলেও ডেলিভারি এবং বিভিন্ন ক্লিয়ারেন্সের জন্য ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে যেতে হয়। এছাড়াও রয়েছে এইচএস কোড জটিলতা। তাই আমাদেরকে আধুনিকায়নের বাধাগুলো আগে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আধুনিকায়নে যেতে হবে। এজন্য আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন করা জরুরী বলে মনে করেন তারা।