জানালাটার ওপারটাই এক টুকরো নীল আকাশ। দেয়ালের আবছায়ায় প্রিয়র নাম ক্ষুধিত। আমায় তুমি ডেকো প্রিয় যেকোনও নামে। ইচ্ছে কি হয় না তোমার দিগন্ত বিস্তৃত নীলিমায় আমাকে জড়িয়ে নিতে? ডেকে নিতে? ঘরময় ভেসে যাচ্ছে অজানা এক বিষাক্ত নীলে। তারচেয়েও বড় বিরক্তির বিষয় ভালোবাসা বিষয়ক আবেগিক কথাবার্তা দুরূহ ঠেকছে। তবে কি আমি বলতে পারি না ফুল, ফল, প্রজাপতি প্রেম বিষয়ক উড়ন্ত ডানায় ছুটে মেলার কথা! বনের পাখিরা তোমরা নিজেদের কী নাম দিয়েছ? নদীর ধারে এই যে সিগন্ধ কাশফুলেরা ফুটছে, কলকাকলীরত পাখিদের মুগ্ধতাভরে ভিন নামে ডেকে উঠছে ভোরের রাখাল বালকেরা দিশেহারা বালকের ন্যায় তাদের পিছন পিছন আমার ও ছোটা, তীব্র ঘোরগ্রস্ততা এই আমাকে ঘিরে। ছোট্টবেলায় যখন আমার বেড়ে ওঠা, স্কুল ছুটি হলেই হৈচৈ করে বান্ধবীরা সকলে মিলে লজেন্স চকলেট খেয়ে দাঁড়িয়ে যেতাম ফুল, ফলের দেশের নামকরণ নিয়ে ভিন্ন একছুট খেলা করতে করতে হারিয়ে যেতে যেথায় যাওয়া যায়…। হইতো ছুটছি তো ছুটছিই বন্ধুদের নিয়ে যেখানে খেলায় একবার হারা হয়েছে তো আরেকবার জিতে যাওয়া। নতুন নতুন হুরপরীদের আবিষ্কার করা, রাংতা ফুলের ঘ্রাণে, গোল্লাছুটের নেশায় বান্ধবীরা প্রাণপণে ছুটতাম তা ছুটতামই। বড়রা আমাদের চাইলেও ধরে রাখতে পারতো না। ছোটাটাই যেন ছিল আমাদের লক্ষ্য। ক্রমশ আমরা মেয়েবন্ধুরা বড় হয়ে যাচ্ছিলাম। মায়েরা আমাদের পরিয়ে দিচ্ছিল বড়ো বড়ো ওড়নার আঁচল। মায়েদের এই সমস্ত আচরণে কষ্ট পেলেও গোপনে গোপনে পোষণ করতাম হয়ে উঠবো একদিন আমরা হাতিদের দেশের অভয়ারণ্য পাখিদের আশ্রয়। ছোটবেলায় এইসবই ছিল আমার ভালোবাসার স্মৃতি। হারিয়ে যাওয়ার স্মৃতি। ভালোবাসা! ছোট চার অক্ষরের শব্দ হলে কী হবে আমাদের চারপাশের মানুষ, পরিবার, সমাজ এবং ব্যক্তি আমিকে তা কম ভাবায় না। প্রেম ও ভালোবাসার জগতজোড়া বন্ধনে সকলে কম–বেশি আলোকিত। ভালোবাসায় কে না থাকতে চায়? সকলেই চাই প্রেম ভালোবাসায় তার জীবনটা পরিপূর্ণভাবে ভরে ওঠুক। ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে তোমারে করেছে রানী’ ‘প্রেমের মরা জলে ডুবে না’ ভালোবাসা বিষয়ক এইধরনের কত গান, প্রবাদ বাক্যের দিয়ে আমাদের বড় হতে হয়েছে। এই অনুভূতিতে মানুষজন হুট করেই আক্রান্ত হতে পারে এবং হুট করে আক্রান্ত হলেই তারে আমরা বলতে পারি লোকটা প্রেমে পড়েছে! ভালোবাসার কথা! ছোট্ট জীবনে যেটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে ভালোবাসা, ভালোবাসি এই শব্দদ্বয় দুটো শুনতে সকলে খুব ভালোবাসে। শুধু ভালোবেসে না পাশাপাশি কাছের মানুষটারেও আপনের মতো করে পাওয়া চাই। ভালোবাসাকে নদীর জলস্রোত বলবেন আপনি? না হলে তিতে মিঠে পানি বলতে ইচ্ছে হয় না? অথবা আদরের নাম দিয়ে ভিন্ন কোনও নামে? যাই বলে ডাকা হোক না কেন এরে বোধহয় অস্তিত্বের অংশীদারী আমরা সকলে। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে পদ্মা নদীর মাঝির বিখ্যাত সেই উপন্যাসটির কথা। যেখানে কুবের মাঝির কথা যে কী না নায়িকা কপিলাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। সংসার করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল তারা, দ্বীপে হবে তাদের নতুন আশ্রয়। নদী, জেলেপাড়ার জীবন যুদ্ধ তাদেরকে সাহসী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। কপিলাকে নিয়ে কুবের হারিয়ে যেতে চেয়েছিল দ্বীপ– দ্বীপন্তরে… নিজের কথাই বা কম বলি কেন? ইচ্ছে করে আমার তাদের মতো হতে। প্রেম ভালোবাসায় বুদ হয়ে থেকে যায় দীর্ঘকাল ইত্যকার বিষয়গুলা নিয়ে লিখে যায়। জীবন নয়ছয় করে যদি বসন্তঋতু আরো প্রসব করে ধরে অচেনা কোন দ্বীপে। সেখানে থাকবে আমার ভালোবাসার মানুষেরা। বাড়ি, টিয়েরা, ও জগতের গুপ্ত রহস্য বিষয়গুলা হাতড়ে নিই; জীবন বসন্ত তো কম পার করা হলো না– যায় মন্দ হবে নাতো। শৈশবে আমায় ডেকে নিয়েছিল রাখাল বালকেরা; ঘোড়ায় চড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল অন্ধকার মিহিন রাত্রির বাতাসে। ভোর আমাকে ডেকে নিয়েছিল, কন্টক বাতাসের ঝঞ্ঝা সূর্য নাগালের মাসী হতেই স্বপনেরা উথালপাতাল। ঢেউদের ঝাপটানো বিশাল জলরাশির সাথে।নাইয়র হয়ে আমাকে কেউ নিয়ে যাবে উথাল সমুদ্রে হয়ত। যেখান হতে কেউ ফিরবে না ফিরে না।