শত শত ফানুসে বর্ণিল হয়ে উঠে রাতের আকাশ। চাঁদনী রাতে আকাশ জুড়ে ফানুসের মেলা, আতশবাজির ফোয়ারায় আচ্ছন্ন হয়ে উঠা চারদিকে বাদ্যি বাজনা বাজিয়ে তরণদের নাচগানের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। নগরীর নন্দনকাননের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন স্থানেও যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসবটি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রবারণা উৎসব উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর ডিসি হিল সংলগ্ন বৌদ্ধ মন্দিরের অস্থায়ী মঞ্চ থেকে শত শত ফানুস উড়ানো হয়। পুরো আকাশ ভরে যায় রঙিন ফানুসে। সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ফানুস উৎসব উদ্বোধন করেন। এবার গতানুগতিক ফানুসের ধারণায় নানা বৈচিত্র আনা হয়েছে। মানুষের অবয়ব থেকে শুরু করে স্যাটেলাইটের আদল দেয়া হয়েছে ফানুসে। বেশ কিছু ফানুসে ছিল মৈত্রী ও সমপ্রীতির বার্তা। ফানুস উৎসবে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একাধিক টিম সতর্ক অবস্থানে ছিল। ছিল রেড ক্রিসেন্টসহ মেডিকেল টিমও। উৎসব উপলক্ষে গতকাল বিকেল থেকে নন্দনকানন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ মন্দির মোড়, ডিসি হিল মোড়ে প্রচুর মানুষ ভিড় করে। এ সময় বৌদ্ধমন্দিরমুখী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়, লাভ লেন মোড় (নুর আহম্মদ সড়কের মাথা), এনায়েতবাজার মোড়, বোস ব্রাদার্সের মোড়ে পুলিশ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে। যানবাহনকে ভিন্নপথে ঘুরিয়ে দিয়ে উৎসবে সামিল হওয়া হাজারো নারী পুরুষ ও শিশু কিশোরকে নির্ঝঞ্জাটে উৎসব পালন করার সুযোগ করে দেয়া হয়। উৎসবের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভিক্ষুসংঘের বর্ষাবাস পরিসমাপ্তির এই পবিত্র দিনকে কেন্দ্র করেই প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করা হয়। প্রবারণা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য একটি আবশ্যক বিধিবদ্ধ নিয়ম। প্রবারণা পূর্ণিমা আশ্বিনী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। আত্মশুদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের আয়োজন হলো প্রবারণা। অসত্য ও অকুশল কর্মকে বর্জন করে সত্য ও কুশল কর্মকে বরণ করাই প্রবারণার মূল শিক্ষা। প্রবারণার অর্থ নিষেধ করা, দোষত্রুটি স্বীকার, শিক্ষা সমাপ্তি, অভিলাষ পূরণ, আশার তৃপ্তি, প্রকৃষ্টরূপে বরণ করা প্রভৃতি।
সাধারণ গৃহীরা সকাল থেকে বৌদ্ধবিহারে পূজা উত্তোলন, সূত্র পাঠ এবং পঞ্চশীল ও অষ্টশীলব্রত পালন করে সারা বিশ্বের শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে সমবেত প্রার্থনা করেছেন। জগতের সব প্রাণীর দুঃখ হতে মুক্তি লাভের জন্য প্রার্থনা করেছেন। বিকেলেও একইভাবে বিহারে সমবেত প্রার্থনা করা হয়। পরে বুদ্ধের উদ্দেশে ফুল পূজা, বুদ্ধপূজা, বুদ্ধমূর্তি দান, অষ্টপরিষ্কার দান, সংঘ দান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ডদান অনুষ্ঠিত হয়। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নানা ধর্মদেশনা প্রদান করেন।