১৯৬৪ সাল। সময়টা ছিল লড়াই আর সংগ্রামের উত্তেজনামুখর। দেশ যখন পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ, বাংলার মানুষ যখন স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা যিনি বাঙালিদের স্বাধীনতা স্বপ্ন দেখিয়েছেন– সেই মহান নেতার ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক ছোট্ট দেব শিশু। যে জন্ম নিয়েই গোলাপের মতো সৌরভ ছড়াতো, সূর্যের মতো দীপ্তমান ছিল সেই প্রিয় মুখ আমাদের মিষ্টি রাসেল সোনা। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িতে শেখ রাসেলের জন্ম। জন্মের সময় বাবার কাছে না থাকলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পিতা পুত্রের চিরপ্রস্থান ঘটেছিল। ব্রিটিশ দার্শনিক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ব্রার্টান্ড রাসেল এর নাম অনুসারে বঙ্গবন্ধু ছেলের নামকরণ করেন।
এই নামকে ঘিরে নিশ্চয়ই মহৎ কোনো স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা ছিল। বঙ্গবন্ধুর সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল যেন পরিবারের পূর্ণিমার চাঁদ। পরিবারের সবার নয়নের মণি ছিল ছোট্ট রাসেল। রাসেলের জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে বাবা মুজিবকে ছাড়া।
গরিবদের জন্য শিশুটির ছিল দরদ, মমতা। জাতির পিতার গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়াতে যখন সে যেত তখন গ্রামের ছেলেদের জন্য সে জামা নিয়ে যেত। তাদের উপহার দিত। কখনো গরিব বন্ধুদের নিয়ে সারা পাড়া বেড়াতো। কখনো বা মাছ ধরত, আবার দেখা যেত সাইকেলে চড়ে বন্ধুদের সঙ্গে মজা করতো। হাসুপা মানে শেখ রাসেলের বড় বোন – বঙ্গকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর এই ছোট্ট ভাইটির সব সময় খেয়াল রাখতো। বঙ্গবন্ধু তার এক বক্তব্যে বলেন, ‘রাসেল ছিল চাপা স্বভাবের। আনমনে কাঁদতো’।
অথচ রাসেল নামের এই শান্তিপ্রিয় মানবিক ফুলটিকে আর ফুটতে দেওয়া হলো না। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শ্রাবণের রাতে একদল বর্বর ঘাতক পৈশাচিকভাবে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে। ষড়ঋতুর প্রাত্যহিক আকাশজুড়ে যেসব পায়রার ঝাঁক উড়ে চলে; প্রতিটি ঊষা কিংবা গোধূলির দিকে তাকিয়ে নীড়ে ফেরা পাখির মত ছোট্ট রাসেলও ফিরে ফিরে আসে বাঙালির মনে ও মননে।