দেবীপক্ষের সূচনা হয় মহালয়ার দিন থেকে

সুমন মজুমদার | শনিবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। আর এ উৎসবের সূচনা হয় মহালয়ার দিন থেকে। পূর্ব আকাশে তখন ভোরের আলোর সবে একটা রেখা দেখা গিয়েছে আর ঠিক সেই সময়েই প্রায় সব বাড়ি থেকে ভেসে আসে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে আশ্বিনের শারদপ্রাতে মহালয়ার শ্রুতিমধুর গানটি। আর তখনই বুঝা যায় ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালাসমেত প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগদ্মাতার আগমন বার্তা। বেশির ভাগ বাঙালির মহালয়ার দিনটি ঠিক এভাবেই শুরু হয়। আসলে এই দিনেই পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে এবং দেবীপক্ষের সূচনা হয়। আর এই সূচনালগ্নই মহালয়া নামে পরিচিত। মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। হিন্দু ধর্মে মহালয়ার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। মহালয়া শব্দটির অর্থ মহান আলয় বা আশ্রম। অনেকের মতে মহালয়াকেই যেহেতু দুর্গাপূজার সূচনা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, তাই দেবী দুর্গাই হলেন এই আশ্রয় বা আলয়। আবার কারও কারও মতে এই মহান আলয় হল পিতৃলোক। যেহেতু এটি পিতৃপক্ষের অবসান চিহ্নিত করে। মহালয়ার দিনে মূলত দেবীদুর্গার চক্ষুদান করা হয়। ধরে নেওয়া হয় দেবীর চক্ষুদানের মাধ্যমেই দুর্গাপূজার সূচনা হয়। আর সেই কারণেই রামায়ণ অনুসারে রাবণ বসন্তকালে দেবী দুর্গার পূজা শুরু করেন যা বর্তমানে বাসন্তীপূজা নামে পরিচিত। শ্রীরামচন্দ্র পরবর্তীকালে শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন যা অকালবোধন নামে পরিচিত। শাস্ত্রে বলা আছে মহালয়ার দিনই মহিষাসুর বধের দায়িত্ব নিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। আগে রাজবাড়ি কিংবা জমিদার বাড়িতেই দুর্গাপূজা হত, রথের দিন কাঠামো পুজো হত এবং মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পর দেবীর চক্ষুদান পর্ব হত। চক্ষুদানের পরই দেবী দুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর মহা সপ্তমীর সকালে শুদ্ধাচারে ডান হাতে কুশের অগ্রভাগ নিয়ে দেবী দুর্গাকে কাজল পরানো হয়। প্রথমে ত্রিনয়ন, তারপর বামচক্ষু এবং শেষে ডান চক্ষু আঁকা হয়। তবে শুধু মাত্র দুর্গাই না তাঁর চার ছেলে মেয়ে লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী ও কার্তিক সহ তাদের বাহনদেরও এভাবে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ছাড়া এইদিন পিতৃপুরুষেরা মনুষ্যলোকের অনেক নিকটে চলে আসেন। পুরাণমতে ব্রহ্মার নির্দেশেই এ মিলনক্ষেত্রটি তৈরি হয়েছিল। তাই এই দিন পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন অনেকেই। তর্পণ কথার অর্থ হল যাতে অন্যের তৃপ্তি হয়। তাই শুধু পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে নয় সর্বভুতের উদ্দেশ্যে জলদান বা তর্পণ করতে হয়। আসলে মহালয়ার আগে তর্পণের মধ্য দিয়েও সর্বভূতের সঙ্গে মানুষের একাত্মতার কথা বলা হয়েছে যা মহালয়াকে আরো সুন্দর করে তুলেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাধারণ মানুষের ভোগান্তির লাঘব করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধরাসেল ফিরে আসে বাঙালির মনে ও মননে