আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করাই হলো ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা

| বুধবার , ২৮ জুন, ২০২৩ at ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ

মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি ঈদউল আজহা। ইসলামের প্রাক যুগ হতে যে দুটি কারণে এ উৎসবটি বিশেষ মর্যাদার তার একটি হজ্জ, অন্যটি কোরবানি। মুসলমানদের আদি পিতা হযরত আদম (.) থেকে শুরু করে এ বিধানের প্রচলন। গতকাল মক্কা নগরীর আরাফাত ময়দানে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ পবিত্র হজ্জ পালনে সমবেত হয়েছিলেন। আজ পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদউল আজহা তথা কোরবানী। আগামীকাল আমাদের দেশে পালিত হবে এদিনটি। কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের পরীক্ষা। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল করিমে ইরশাদ করেছেন– ‘এ কোরবানির গোশত, রক্ত কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তিনি তার প্রত্যাশীও নন। তবে তিনি বিবেচনা করেন বান্দাদের তাক্‌ওয়া বা পরহেজগারি।’ -(সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)

ঈদুল আজহার মূল উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টিকর্তা প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রকাশ করা। সম্পদের মোহ, ভোগবিলাসের আকর্ষণ, সন্তানের স্নেহ, স্ত্রীর মহববত সবকিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করাই হলো ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা। ইবরাহীম (.) এর আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের কঠিনতম পরীক্ষায় উত্তরণ ছিল নিজের তাওহীদ ও তাকওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আল্লাহর হুকুমে তিনি পুত্র কোরবানি করেছিলেন। মূলতঃ তিনি এর দ্বারা আল্লাহর প্রতি নিজেকে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। প্রতি বছর জিলহজ মাসে মুসলিম জাতি পশু কোরবানির মাধ্যমে ইবরাহীম (.)-এর স্মৃতি স্মরণ করে এবং পশু কোরবানির মধ্যদিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে। ইসমাইল নবীন বয়সেই বিশ্ববাসীকে আত্মসমর্পণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তা যেমন অতুলনীয়, তেমনি চির অনুকরণীয়। পশু কুরবানীর সাথে সাথে দৃঢ় শপথ নিতে হবে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমাদের জান, মালসহ যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত। আর এটিই হলো কোরবানির শিক্ষা। ইবরাহীম (.) সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছিলেন, হয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহ ঘোষিত মানবজাতির ইমাম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকালের ভয় কর তাদের জন্যে ইবরাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’।

মুসলিম পরিবারের প্রতিটি মানুষেরই একমাত্র আদর্শ হবে আল্লাহর হুকুমের কাছে আত্মসমর্পণ করা। তাই কোরবানির পশুর গলায় ছুরি দেয়ার আগে নিজেদের মধ্যে লুকায়িত অহংকার ও দম্ভকে চূর্ণ করে মহান আল্লাহর দরবারে নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তাকওয়া ও আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যমে প্রকৃত মুমিন বা মুত্তাকী হতে হবে। আমাদের সালাত, কোরবানি, জীবনমরণ সবকিছু আল্লাহর জন্যই উৎসর্গ হোক, ঈদুল আযহায় আল্লাহর এই আমাদের প্রার্থনা।

পশু কোরবানীর সাথে সাথে আমাদের যে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে তা হচ্ছে জবাইকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণ। প্রায় সবখানে দেখা যায়, জবাই করার পর যত্রতত্র ময়লাআবর্জনা জমে যায়। জবাইয়ের পর সাথে সাথে জায়গাটি পরিষ্কার করে ফেলা উচিত। নয়তো গন্ধ সৃষ্টি হয়ে পরিবেশ দূষিত হতে পারে। জবাইকৃত পশুর বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করে রাখতে হবে যেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়ে যেতে পারেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আসতে দেরি করলে কিংবা না এলে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

অনেক জায়গায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাব রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সব ধরনের ময়লাআবর্জনা এক সঙ্গে জড়ো করে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। ফলে ময়লাআবর্জনা দূর হবে, পরিবেশও দূষণ থেকে রক্ষা পাবে।

বলা হয় ঈদুল আজহার কোরবানির চামড়া এতিমদের হক। আর এ হক মেরে খাওয়ার চিন্তায় থাকেন সুযোগ সন্ধানী একশ্রেণির ব্যবসায়ী। কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে চলে বিভিন্ন কারসাজি। কোথাও পানির দরে, আবার কোথাও চায়ের দরে বিক্রি হয় চামড়া। এই চিত্র শহর গ্রাম সর্বত্রই। এমনও দেখা যায় সারাদিন চামড়া ক্রয় করার জন্য কেউ আসে না। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ট্যানারিমালিকদের নির্ধারণ করে দেওয়া দরের একতৃতীয়াংশ দামও মিলে না চামড়ার দামে। অনেক এলাকায় চামড়ার ক্রেতাই পাওয়া যায় না। কম দামে চামড়া বিক্রি হওয়ায় দরিদ্র প্রতিবেশী, এতিমখানা, মাদ্রাসা প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সচেতন মানুষের ভূমিকা রাখা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে