লোহাগাড়ার আমিরাবাদে হোজাইফুল ইসলাম (৯) নামে এক হেফজখানার ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হোজাইফুল আমিরাবাদ ইউনিয়নের ২ নং নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম আমিরাবাদ জমাদার পাড়ার মোহাম্মদ হোসেলের পুত্র এবং ওই এলাকার ফাতিমাতুয্যাহ্রা (রা.) মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। গত সোমবার বিকেলে পড়া না পারায় ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আনাস বিন হামিদ তাকে বেদম মারধর করেন।
জানা যায়, হোজাইফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ওই মাদ্রাসার হেফজখানায় কোরআন হেফজ করে আসছে। প্রতিদিনের ন্যায় শিক্ষকের কাছে পড়া হাজিরা দিচ্ছিল। এ সময় কয়েকটি শব্দ না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক আনাস বিন হামিদ তাকে বেত্রাঘাত, চড়–থাপ্পর ও কিল–ঘুষি মারে। এতে ওই ছাত্র গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা জানান, ওই মাদ্রাসার হেফজখানায় একাধিকবার এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। পড়া না পারলে গরম পানি ঢেলে দেয়া ও মহিলা শিক্ষার্থীদের হিজাবের সেফটি পিন মাথায় ঢুকিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনার কারণে স্থানীয়রা সন্তানদের ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে আতংকের মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া শিক্ষক কর্তৃক নির্যাতনসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে বললেও তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
নির্যাতিত শিশুর মা আরজু আক্তার জানান, তার ছেলে মাদ্রাসার আবাসিকে থেকে কোরআন হেফজ করত। ঘটনার দিন ছেলে পড়া না পারায় শিক্ষক আনাস বিন হামিদ মারধর করেছেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় ওই মাদ্রাসার আরেকজন ছাত্রের মাধ্যমে তার ছেলেকে মারধরের বিষয়টি জানতে পারেন। পরে তিনি মাদ্রাসায় গিয়ে তার ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সময় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পড়তে না দিয়ে একটি লিখিত কাগজে স্বাক্ষরও নেন। তার ছেলেকে মারধরের ঘটনায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তার ছেলের অবস্থায় খারাপ হওয়ায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হোছাইন মুহাম্মদ শারফু জানান, হেফজখানার ছাত্রকে মারধর করার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ওই মাদ্রাসায় এর আগেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মাদ্রাসায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
ফাতিমাতুয্যাহ্রা (রা.) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইবরাহীম ছিদ্দিকী জানান, ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক নির্যাতন ও অনিয়মের ব্যাপারে এই পর্যন্ত কোনো অভিভাবক মৌখিক কিংবা লিখিত অভিযোগ করেননি। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে মাদ্রাসার সুনাম রক্ষার্থে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উল্যাহ জানান, হেফজখানার ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় কেউ মৌখিক কিংবা লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে, শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করা অপরাধ।