পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মতো একটি করে দশতলা নতুন ভবন বরাদ্দ পায় নগরীর দুটি সরকারি কলেজ। এই দুই কলেজের একটি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, অপরটি সরকারি সিটি কলেজ। নির্মাণ কাজ শেষ করে এরই মাঝে ভবন দুটি কলেজ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিটি কলেজের বহুতল ভবনটির সবকয়টি ফ্লোরে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে লিফট না থাকায় এ ভবনে ভোগান্তি সয়ে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে হচ্ছে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে উপরের ফ্লোরগুলোতে থাকা বিভাগগুলোর শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়েছেন বেশি। সিড়ি ভেঙে প্রতিনিয়ত ৬ থেকে ১০ তলা পর্যন্ত উঠে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে হচ্ছে তাদের। নতুন ভবনে স্থানান্তর হওয়ার পর অন্তত ৬/৭ মাস ধরে এমন ভোগান্তি সইতে হচ্ছে তাদের। কলেজ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভবনটি বুঝিয়ে দেয়ার পর গত ডিসেম্বরে দুটি লিফট চালুর কথা ছিল। কিন্তু স্থাপন তো দূরের কথা, এখনো লিফটও এসে পৌঁছায়নি।
সুর্নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও নতুন ভবনটি গত বছরের জুলাই–আগস্টের দিকে বুঝিয়ে দিয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ড. সুদীপা দত্ত। তিনি আজাদীকে বলেন, ভবন বুঝিয়ে দেয়ার পর গত ডিসেম্বরে দুটি লিফট চালু করে দেয়ার কথা ছিল। পুরনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বেশ কয়টি বিভাগ নতুন ভবনে স্থানান্তর জরুরি হয়ে পড়ছিল। তাই দ্রুত এখানে শিফট করতে হয়। তবে ডিসেম্বরে লিফট চালুর কথা বললেও এখনো স্থাপন করা হয়নি। বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বহুতল ভবনটির ৬ তলায় উদ্ভিদ বিদ্যা, ৭ তলায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ৮ম তলায় মনোবিজ্ঞান এবং ৯ম তলায় ইসলামী শিক্ষা বিভাগ স্থানান্তর হয়েছে। গত ৬/৭ মাস ধরে এখানেই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এসব বিভাগের। আর ভবনের দশম তলায় লাইব্রেরি ও বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। লিফট না থাকায় বিশেষ করে ৫ তলার উপরের ফ্লোরগুলোতে থাকা বিভাগগুলোর শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উপরের চারটি ফ্লোরে থাকা চারটি বিভাগে অনার্স–মাস্টার্স মিলিয়ে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। চার বিভাগে শিক্ষকের সংখ্যাও কম নয়।
গত বছরের অক্টোবরে বিভাগের সকল কার্যক্রম নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান। এই বিভাগ বর্তমানে নতুন ভবনের ৮ম তলায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। লিফট না থাকায় স্থানান্তরের পর থেকে অনেক কষ্টে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাবেক সম্পাদক ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলছেন, নতুন ভবন হওয়ার কারণে আগে ক্লাস রুমের যে সংকট ছিল তা অনেকটা কেটে গেছে। তবে লিফট না থাকায় শিক্ষকদের পাশাপাশি বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনার্স–মাস্টার্স ছাড়াও বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষার হলও থাকে এখানে। সেক্ষেত্রে এসব পরীক্ষার্থীকেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। দ্রুত লিফট স্থাপন পূর্বক চালু করা হলে শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীরা এমন ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতেন বলে অভিমত তার।
জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার দাবি করেন, ভবন বুঝিয়ে দেয়ার পরই লিফটের জন্য তাদের টেন্ডার আহ্বান করতে দেয়া হয়। তাই ভবন বুঝিয়ে দেয়ার পরই লিফটের জন্য টেন্ডার করতে হয়েছে। তাছাড়া অনেক দিন এলসি বন্ধ ছিল। এখন এলসি হয়েছে। ঈদের পরই লিফট চলে আসবে। এরপর স্থাপন করতে হয়ত মাসখানেক সময় লাগতে পারে।
প্রসঙ্গত, দুটি বহুতল ভবনের মধ্যে সরকারি সিটি কলেজের বহুতল ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় আগে। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে সিটি কলেজের নতুন ভবনটির ৬/৭ তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলাকালীন চট্টগ্রাম কলেজের নতুন ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হয়। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সরকারি সিটি কলেজের দশতলা ভবনটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় মেসার্স এল অনন্ত এন্ড গ্রাভেল (জেবি–জয়েন্ট ভেনচার)। চট্টগ্রাম কলেজের ভবনটি নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স ইঞ্জিনিয়ার্স ফেয়ার (জেবি)। কার্যাদেশ অনুযায়ী সিটি কলেজের ভবনটির নির্মাণ কাজ ২০২০ সালের জুনে আর চট্টগ্রাম কলেজের বহুতল ভবনটির নির্মাণ কাজ একই বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।
তবে নির্ধারিত সময়ে কোনোটিরই কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম কলেজের দশতলা ভবনটি বুঝিয়ে দেয়া হয়। সিটি কলেজের ভবনটি বুঝিয়ে দেয়া হয় তারও পর। সে হিসেবে, নির্মাণ কাজ আগে শুরু করার পরও সিটি কলেজের ভবনটির কাজ শেষ করা হয় পরে। অন্যদিকে, লিফট চালু না হওয়ায় চট্টগ্রাম কলেজের দশতলা ভবনটির উপরের অর্ধেক অংশ (উপরের ৫ ফ্লোর) প্রায় এক বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে। তবে এপ্রিলের শেষ দিকে এ ভবনে লিফট চালু হবে বলে দাবি করেছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার।