নানা কারণে বেড়ে চলেছে নাগরিক ভোগান্তি। এই ভোগান্তির অন্যতম কারণ বায়ু দূষণ, যা আমাদের জীবনকে করে তুলছে অসহনীয়। ধুলাবালি মিশ্রিত বাতাসের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্নরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা দিনদিন বেড়েই চলছে। এই সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও, আমাদের কিছু সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ তা অনেক কমিয়ে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
গত ২৯ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশে ২০% অকাল মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ’ শীর্ষক সংবাদ। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যত মানুষ অকালে মারা যায়, তাদের ২০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ বলে উঠে এসেছে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায়। ‘বিশুদ্ধ বায়ু পাওয়ারচেষ্টা : দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ু দূষণ ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দশ শহরের নয়টিই দক্ষিণ এশিয়ায়, তার মধ্যে ঢাকা একটি। বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেক বলেন, বায়ু দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় প্রভাবফেলে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিত করার ‘ব্যয় সাশ্রয়ী’ সমাধানও রয়েছে, সেজন্য দেশগুলোকে নীতি ও বিনিয়োগের সমন্বয় করার তাগিদ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত দূষণকারী কণার উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অনেক ঘনবসতিপূর্ণ ও দরিদ্র এলাকায় দূষণের মাত্রা থাকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি বছর অন্তত ২০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। একই কারণে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এই দূষণে শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শ্বাসনালীর বিভিন্ন রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ তৈরি হয় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। তাতে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যায়; উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় এবং অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। সঠিক পদক্ষেপ ও নীতির মাধ্যমে বায়ু দূষণরোধ সম্ভব জানিয়ে আবদুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশ এর মধ্যেই বায়ু দূষণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে জাতীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি অঞ্চলিক (দক্ষিণ এশিয়া) পর্যায়েও সম্মিলিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে।
আসলে ধুলোবালিতে ছেয়ে গেছে পুরো নগর। বায়ুদূষণ এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বলা যায়, বায়ু দূষণ এক নীরব ঘাতক। দূষিত বায়ুর কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নানারোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বায়ু দূষণের জন্য শ্বাসকষ্ট ছাড়াও পেটের সমস্যা, ফুসফুসজনিত সমস্যা, চামড়ার সমস্যা, হাঁপানি বা এলার্জিজনিত সমস্যা, চোখ ও নাকের সমস্যা, যেকোনো সংক্রমণ, গর্ভকালীন সমস্যা এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এ দূষণ খুব মারাত্মক প্রভাব ফেলে যা তাদেরকে সারা জীবন ধরে বয়েবেড়াতে হয়। দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণ এখন বিশ্বের বৃহত্তম পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব অনেক। দূষিত বায়ুতে আমাদের নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। বায়ু দূষণের ফলে সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা ও সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর। দূষিত বায়ু আমাদের শরীরে নানা রকমরোগ সৃষ্টি করে থাকে। বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। এক পরিসংখ্যান বলছে গত বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী বায়ুদূষণ।
তাই বায়ুদূষণরোধ করার জন্যে এখনই সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে। যানবাহন থেকে দূষণ এবং কালোধোঁয়া নির্গমনরোধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর খোঁড়াখুঁড়ি কাজের সমন্বয় সাধন করা ও বায়ু দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। মোট কথা, দূষণরোধ করার জন্যে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।