আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। গতকাল রোববার অর্থনীতি সমিতির অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩: একটি জনগণতান্ত্রিক বাজেট প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। খবর বাংলানিউজের।
আবুল বারকাত বলেন, প্রস্তাবিত জনগণতান্ত্রিক ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করছি। যা বর্তমান বাজেটের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ গুণ বেশি। এতে অভ্যন্তরীণ উৎস রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যেখানে প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ ও ব্যাংক ঋণকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের বাজেটে মোট বরাদ্দে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। এখানে মোট বরাদ্দ বাজেটের ২১ শতাংশ। দ্বিতীয় অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত, তৃতীয় হচ্ছে কৃষি। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সব ধরনের বৈষম্য বেড়েছে। এসব পাল্টাতে হবে, ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে। সেজন্য আমরা গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চায় অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। গবেষণা উন্নয়নের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমরা নতুন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব করছি। যার নাম গবেষণা উদ্ভাবন বিচ্ছুরণ ও উন্নয়ন। এ মন্ত্রণালয়ের জন্য আগামী পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলছি। আরেকটি মন্ত্রণালয়ের কথা আমরা বলেছি, সেটা হলো গণপরিবহন মন্ত্রণালয়।
আবুল বারকাত বলেন, আমরা প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দিতে বলেছি। কারণ পরোক্ষ করের কারণে মানুষে মানুষে বৈষম্য বাড়ে। আমরা প্রস্তাব করছি দরিদ্র, অতি দরিদ্রদের আগামী কয়েক বছরে নেটের বাইরে রাখার।
কালো টাকা ও অর্থপাচার অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, গত ৪৬ বছরে (১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৮-২০১৯) দেশে পুঞ্জীভূত কালো টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে বিদেশে পাচার হয়েছে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা।
রাজস্ব আয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বাজেটের আকার, যা বর্তমান বাজারের ৩.৪ গুণ বেশি। বিকল্প বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। যা প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটের ৯২ শতাংশের বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয়ের ৭৭ শতাংশ আসবে প্রত্যক্ষ কর থেকে, বাকিটা পরোক্ষ কর। যেখানে প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে মাত্র ৪৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ৭ শতাংশ, যা সরকারের চলতি বাজেটে ঘাটতির তুলনায় অনেক কম। বাজেট ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ঋণ কিংবা দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণের প্রয়োজন নেই। সমস্যাটা অর্থনৈতিক হলেও সমাধান তার রাজনৈতিক। বাজেট ঘাটতি পূরণে তিনি কালো টাকা ও বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরতের প্রতি জোর দেন।
এদিকে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি করেছে সরকার।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনায় চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার থেকে ভার্চুয়ালি আলোচনায় অংশ নেন চ্যাপ্টারের সভাপতি প্রফেসর ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, সহ সভাপতি সাংবাদিক মো. খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক এ. টি. এম. কামরুদ্দিন চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জহিরুল হক স্বপন, কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক মনসুর এম. ওয়াই চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য খোরশেদ আলম কাদেরী প্রমুখ।