পুলিশ-সেনা যৌথ অভিযান ভ্রাম্যমাণ আদালতের দণ্ড

জেলা-উপজেলায় লকডাউন

| রবিবার , ২৫ জুলাই, ২০২১ at ১২:০৫ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ড : সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, করোনা মহামারী প্রতিরোধে কঠোর লকডাউনের অভিযান অব্যাহত রেখেছে সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মহাসড়কে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল ছিল জোরদার। গত শুক্র ও শনিবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে দিনব্যাপী অভিযান পরিচালিত হয়।
জানা যায়, এত অভিযানেও নানা ছুতোয় ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষ। এ ছাড়া সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে শ্রমজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের মানুষের বাইরে চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। উপজেলার সীতাকুণ্ড পৌর সদর বাজার, শুকলালহাট, বাড়বকুণ্ড বাজার, বাঁশবাড়িয়া, মগপুকুর, কুমিরা, জোরামতল, ফুলতলা, বারআউলিয়া, বড় কুমিরা, ভাটিয়ারী, ফৌজদারহাট, জলিল, ছলিমপুর ওভারব্রীজ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সরকারি আইন অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখায় ১১টি মামলা দায়ের করা হয়। এতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন জানান, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া লকডাউন কার্যকরে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

হাটহাজারী : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারীতে কঠোর লকডাউনের মধ্যে ফুটবল খেলার আয়োজন করেছে কিছু অতি উৎসাহী ক্রীড়ামোদী। গতকাল শুক্রবার ছিপাতলী ঈদগাহ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে একটি, অপরটি গুমানমর্দ্দন পেস্কারহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খেলা দুটি আয়োজন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি অবহিত হয়ে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি সরকারি বিধি নিষেধ উপেক্ষা কঠোর লকডাউনে খেলা আয়োজন করায় আয়োজকদের প্রথম বারের মত সতর্ক করে দেন। তাছাড়া ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করে লকডাউন অমান্য করায় তিনটি মামলায় ৯শ টাকা অর্থ দণ্ড প্রদান করেন।
লোহাগাড়া : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ঈদ পরবর্তী কঠোর লকডাউনের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে লোহাগাড়ায় ৩৫ মামলায় ২১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত শুক্রবার ও শনিবার দিনব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী। সাথে ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কক্সবাজার ১০ পদাতিক ডিভিশনের ক্যাপ্টেন নাদিম মোস্তাফা, থানার এসআই পার্থ সারথি হাওলাদার, এসআই ভক্ত চন্দ্র দত্ত ও ভূমি অফিসের মুহাম্মদ মহসিন লিটন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দোকানপাট খোলা রাখা ও অযথা ঘোরাঘুরি করায় সংক্রমণ আইনে ২০১৮ এর ২৪ ধারায় ৩৫ মামলায় ২১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।
রাউজান : রাউজান প্রতিনিধি জানান, গত শুক্রবার থেকে রাউজানে লকডাউন কার্যকরে মাঠে আছে উপজেলা প্রশাসন। লকডাউন কার্যকর করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অতিশ দর্শী চাকমার নেতৃত্বে দুটি দল উত্তর ও দক্ষিণের সড়কে সারাদিন তৎপর ছিলেন। এসময় তারা র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নিয়ে মাঠে ছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনে স্বাস্থ্য বিধি অমান্য করায় বিভিন্ন যানবাহন ও মুখে মাস্ক না রাখার কারণে অনেককেই জরিমানা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই ধরনের অভিযান প্রতিদিন চলমান থাকবে। যারা সরকারি নির্দেশনা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে অইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নাইক্ষ্যংছড়ি : নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি জানান, নাইক্ষ্যংছড়িতে লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও প্রশাসনের টহল জোরদার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি ও পুলিশকে উপজেলার অলি-গলিতে টহল দিতে দেখা গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজ্জাদ জাহিদ রতন উপজেলা সদর, সোনাইছড়ি ও ঘুমধুমের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেন। এ সময় মাস্ক না পড়ার দায়ে ৪ জনকে ৫০০ টাকা জরিমানা করেন তিনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেগম সালমা ফেরদৌস বলেন, ১৪ দিনের লকডাউন শুরু হয় গত ২৩ জুলাই শুক্রবার থেকে। নবাগত ইউএনও হিসেবে একই দিনে শুরু হয় তার কর্ম দিবসও। এদিন দিন তিনি উপজেলার বিভিন্ন অলিতে-গলিতে ঘুরে দেখেছেন এবং স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করছেন। পাশাপাশি মাস্কও বিতরণ করেছেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন জানান, নাইক্ষ্যংছড়িতে কঠোর ভাবে লকডাউন পালিত হচ্ছে। উপজেলার ১২টি স্থানে পুলিশের বিশেষ টিমের পাহারা বসানো হয়েছে। তারা সবকিছু কঠোরভাবে নজর দারিতে রেখেছেন।
বাঁশখালী : বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, বাঁশখালী উপজেলায় লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসন মাঠে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মাযহারুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পৃথক দুটি টিম বাঁশখালীর প্রধান সড়কসহ বিভিন্নস্থানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। গতকাল শনিবার পরিচালিত অভিযানে ২১ মামলায় ৫ হাজার ৮শ টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে শুক্রবার ৪টি মামলা দায়ের করে ১ হাজার জরিমানা আদায় করা হয়।

এদিকে বাঁশখালী হাসপাতালে গতকাল ৪৭ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলে তার মধ্যে ১৬ জন করোনা পজিটিভ বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. শফিকুর রহমান মজুমদার। তিনি সবাইকে করোনায় সরকারি নির্দেশনা মেনে নিজে ও পরিবারকে সুস্থ রাখার আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, কোনো অবস্থাতেই বিকাল ৩টার পর কাঁচা বাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দোকান খোলা রাখা যাবে না। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গুনিয়ায় ঢিলেঢালাভাবেই চলেছে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন। সড়কে যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক, খোলা ছিল গ্রামগঞ্জের অধিকাংশ দোকানপাট। এতে রাঙ্গুনিয়ায় বেড়ে চলেছে সংক্রমণ। গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিধিনিষেধের প্রথম দিন কিছুটা কড়াকাড়ি থাকলেও একেবারেই স্বাভাবিক ছিল দ্বিতীয় দিনের অবস্থা। মূল সড়ক কেন্দ্রিক এলাকায় দোকানপাট বন্ধ থাকলেও আশেপাশের বিভিন্ন অলিগলিতে ছিল স্বাভাবিক অবস্থা। সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম থাকলেও সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল করেছে। অযথা ঘোরাঘুরি করতেও দেখা গেছে মানুষকে। তবে অহেতুক ঘোরাঘুরি, বিধি-নিষেধ অমান্য করে দোকানপাট খোলা রাখা, স্বাস্থ্যবিধি পালন না করে গাড়ি চালানোসহ বিভিন্ন অপরাধে ৯টি মামলায় ৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব চৌধুরী এই অর্থদণ্ড দেন। কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই সড়কে পুলিশ, র‌্যাব ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে লকডাউন কার্যকরে মাঠ পর্যায়ে তল্লাশী চালানো হয়েছে। কিন্তু এরপরও সাধারণ মানুষকে লকডাউন মানানো যাচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বিনা প্রয়োজনে আড্ডা দেওয়া, ঘোরাঘুরি, স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের জরিমানা করার পাশাপাশি সতর্ক করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে এ অভিযান চলমান থাকবে।
বোয়ালখালী : বোয়ালখালী প্রতিনিধি জানান, বোয়ালখালীতে লকডাউন অমান্য করায় ১৪ মামলায় ৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। গতকাল শনিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুন নাহারের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে এ জরিমানা আদায় করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বোয়ালখালীতে কেউ কেউ সরকার ঘোষিত চলমান লকডাউনের বিধি নিষেধ অমান্য করছিল। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন শাকপুরা চৌমুহনী, গোমদন্ডী ফুলতল, উপজেলা সদর, হাজীর হাট, জোট পুকুর, কানুনগো পাড়া ও কালাইয়ার হাট বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এ সময় লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার দায়ে ১৪টি মামলা দায়ের করে ৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া লকডাউনে কর্মহীন-অসহায় ২০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে শেখ রাসেল শিশু পার্ক উদ্বোধন
পরবর্তী নিবন্ধমায়ের কবর জেয়ারত করা হলো না মঈনুলের