প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা থেকে দিনরাত মাটি ও বালি উত্তোলন চলছে। প্রতি ৫ মিনিটে ভর্তি হচ্ছে একেকটি ড্রাম ট্রাক। এখান থেকে মাটি ও বালি পাচারের জন্য গড়ে উঠেছে বিশাল সিন্ডিকেট। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে হালদা নদীর মৎস্য ক্ষেত্র, ভূজপুর রাবার ড্যাম এবং হালদার ভাঙন রোধে চলমান সিসি ব্লক ও বেড়িবাঁধ স্থাপনের ১৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প। এদিকে উপজেলা প্রশাসন বারবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও এই সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধ করতে পারছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহামান্য হাই কোর্টের নির্দেশে বিশ্বের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর সকল বালির মহাল ইজারা প্রদান, বালি ও মাটি তোলা, চরকাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু এই বিধি নিষেধ অমান্য করে ফটিকছড়ি ও ভূজপুর এলাকার বিশাল একটি সিন্ডিকেট রাতদিন নির্বিচারে বালি উত্তোলন করে পাচার করছে, নদীরপাড় ও চর কেটে সড়ক নির্মাণ করছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন বিভিন্ন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা, বিএনপি নেতা ও জামায়াত শিবির নেতারা।
সরেজমিনে পরিদর্শনে স্থানীয়রা জানান, হালদা নদীর ভূজপুর রাবার ড্যামের নীচে (দক্ষিণে) আওয়ামী লীগ ও জামায়াত শিবিরের একটি সিন্ডিকেট বিগত এক মাস যাবৎ নদীর ধার, চর ও পাড় কেটে মাটি পাচার করছে। প্রতি ৫ মিনিটে একেকটি ড্রাম ট্রাকে ভর্তি হচ্ছে মাটি ও বালি। সেখানে মাটি কাটার শ্রমিকরা স্থানীয় নেতাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে জানান, মাটি ও বালিগুলো সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এদিকে প্রতিদিন পাইন্দং ইউনিয়নের যুগিনী ঘাটা, ফকিরা চাঁন, সুন্দরপুরের ছোট ছিলোনিয়া, এক্কুলিয়া, পাঁচ পুকুরিয়া, সুয়াবিলের সিদ্ধাশ্রমের আশেপাশে, বারমাসিয়া ঘাট, নাইচ্চের ঘাট, আজিমপুর ঘাট, নাজিরহাট পৌরসভার কুম্ভারপাড়, নারায়ণহাট ইউনিয়নের কুয়ারপাড়া, হাপানিয়া, পিলখানা, বারমাসিয়া খালের মাথা, মির্জারহাট স্পর্ট থেকে বালি ও মাটি পাচার করা হচ্ছে। প্রতি গাড়ি মাটি ও বালি ৩-৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে হালদা নদীর মৎস ক্ষেত্র, ভূজপুর রাবার ড্যাম এবং হালদা নদী ভাঙন রোদে চলমান সিসি ব্লক স্থাপন ও বেড়িবাঁধ স্থাপনের ১৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প।
সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, হালদা থেকে যে হারে মাটি ও বালি উত্তোলন করে পাচার চলছে তাতে ১৫৭ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ ও সিসি ব্লকের উন্নয়ন প্রকল্পে ভেস্তে যাবে।
সুন্দরপুর এক্কুলিয়া এলাকার বাসিন্দা সফিউল আজম জানান, হালদা নদীর বালি মাটি পাচারকারীদের গাড়ির শব্দে রাতের ঘুম হারাম হয়েছে। ইউএনও অভিযান করে চলে যাবার পর আবার সক্রিয় হয় পাচারকারী সিন্ডিকেট।
নারায়ণহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা রহিম সিকদার জানান, মাটি ও বালি পাচারকারীরা অধরা। তারা ক্ষমতাসীন দল ও কতিপয় জনপ্রতিনিধির নাম ব্যবহার করে রাতদিন এমন কাজ করেই চলছে।
ভূজপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার জানান, অভিযোগ পেয়ে একবার হালদা নদীতে লোকজন পাঠিয়েছিলাম। তখন কাউকে পাওয়া যায়নি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিসান বিন মাজেদ বলেন, প্রতিদিন বালি চোর, মাটি চোর ও পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এরা বৃহৎ সিন্ডিকেট এবং ধূর্ত। আমরা উপজেলা থেকে বের হবার পর পরই তারা পালিয়ে যায়। তাই ছদ্মবেশ ধারণ করেও অভিযান চালানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সায়েদুল আরেফিন বলেন, কয়েকদিন আগে হালদা নদীর চর কেটে মাটি পাচার করার অপরাধে কয়েক ব্যক্তিকে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। ৮/১০টি জিপ ট্রাক-ট্রলিসহ খনন যন্ত্র আটক করা হয়েছে। এসব কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেয়া হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় আবার অভিযোগ পাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে নদীর চরের দখলদার ব্যক্তিরা সোচ্চার হলে এসব মাটি পাচার সিন্ডিকেট দ্রুতই নির্মূল হবে। কিন্তু তারা মুখ খুলে না এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করে না।











