চাহিদা অনুযায়ী উচ্চ গতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করার জন্য প্রায় সাতশ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশকে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সমপ্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন’ শীর্ষক এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব, ভারত, নেপাল ও ভুটান। আনুষ্ঠানিকভাবে ভুটান ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য প্রস্তাব দিয়েছে, অনানুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব ও নেপাল। বিষয়টি একনেক সভায় জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে ইন্টারনেট সেবা রিমোট এলাকায় নিয়ে যেতে বিটিসিএলকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু নগরে নয়, হাওর-বাওড় ও পাহাড়ি এলাকায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে বিটিসিএলকে নির্দেশ দেন তিনি। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩০১ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে। বাকি ৩৯২ কোটি টাকার যোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়কারী কোম্পানি বিএসসিসিএল। চলতি বছরের অক্টোবরে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
বর্তমানে কক্সবাজার ও কুয়াকাটার ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, মধ্য পূর্ব পশ্চিম ইউরোপ-৪ বা (এসএমডব্লিউ-৪) ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়া, মধ্য পূর্ব পশ্চিম ইউরোপ-৫ (এসএমডাব্লিউ-৫) সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়ে বিএসসিসিএল ব্যান্ডউইথ সেবা দিচ্ছে। নতুন প্রকল্পের আওতায় এসএমডাব্লিউ-৬ সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে ১৩ হাজার ২৭৫ কিলোমিটার কোর সাবমেরিন ক্যাবল এবং এক হাজার ৮৫০ কিলোমিটার ব্রাঞ্চ সাবমেরিন ক্যাবল বসাতে হবে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত এসএমডাব্লিউ-৬ সাবমেরিন ক্যাবল ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূমধ্যসাগর অবধি বিস্তৃত হবে। এর কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিশর ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশের ব্রাঞ্চটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারে ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
ইন্টারন্যাশনাল লংডিস্টেন্স টেলিকমিউনিকেশনস সার্ভিস (আইএলডিটিএস) পলিসি ও আইসিটি নীতিমালার আলোকে দেশে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে বিএসসিসিএল অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স পাওয়া তিনটি ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) সার্ভিসেস অপারেটর কোম্পানিও একই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে দেশের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ বিএসসিসিএল এককভাবে সরবরাহ করছে।
২০২১ সাল নাগাদ দেশে ৫জি সেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেক্ষেত্রে ব্যান্ডউইথের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল এসএমডাব্লিউ-৪ এবং ২০১৭ সালে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল এসএমডাব্লিউ-৫ এ যুক্ত হয়। আলাদা দুটি কনস্টোমিয়ামের মাধ্যমে এই সাবমেরিন ক্যাবল দুটি পরিচালিত হচ্ছে।