৬ বার্থ অপারেটরের টেন্ডার বাতিল

কেন কেউ জানে না, নতুন প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশনা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর ছয়টি বার্থের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে আবারো টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের টেন্ডার প্রক্রিয়া মন্ত্রণালয় থেকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে। তবে কেন বা কী ধরনের অসঙ্গতিতে টেন্ডার বাতিল করা হলো, তা বন্দরের কেউ বলতে পারছেন না। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ে যোগাযোগ করেও বিষয়টি নিয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) ছয়টি টার্মিনালে কন্টেনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ছয়টি বার্থ অপারেটর নিয়োগের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয় গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর। গত ৮ ফেব্রুয়ারি টেন্ডার জমা দেয়ার শেষ দিন এবং টেন্ডার বাক্স খোলার দিন নির্ধারিত ছিল। ‘সিঙ্গেল স্টেজ টু এ্যানভেলপ’ পদ্ধতিতে আহূত উক্ত টেন্ডারে ছয় লটে ১৪টি দরপত্র জমা দেয়া হয়। বর্তমানে উক্ত ছয়টি টার্মিনালে যেই ছয়টি বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠান এবং একটিমাত্র টার্মিনাল অপারেটর দুটি করে লটে টেন্ডার জমা দিয়েছিল। এতে ১ও ৫ নম্বর লট ছাড়া অপর ৪টি লটে বর্তমান অপারেটররাই দুটি করে দরপত্র জমা করেছিলেন। টেন্ডারে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল-৬ নম্বর বার্থে এফ কিউ খান এন্ড ব্রাদার্স, ফজলী সন্স ও সাইফপাওয়ারটেক লিমিটেড। ৯ নম্বর বার্থে এফ কিউ খান এন্ড ব্রাদার্স ও ফজলী সন্স। ১০ নম্বর বার্থে বশির আহমেদ এন্ড কোম্পানি এবং মেসার্স এ এন্ড জে ট্রেডার্স। ১১ নম্বর বার্থে বশির আহমেদ এন্ড কোম্পানি ও মেসার্স এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্স। ১২ নম্বর বার্থে এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিসেস, এমএইচ চৌধুরী ও সাইফ পাওয়ারটেক। ১৩ নম্বর বার্থে এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিসেস ও এম এইচ চৌধুরী টেন্ডার দাখিল করে।
টেন্ডারে অন্যতম শর্ত ছিল গত ১০ বছরের যে কোন পরিমাণ অথবা ২ বছরে কমপক্ষে এক লাখ টিইউস কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যে কোনও সমুদ্র বন্দরের কথা টেন্ডারে উল্লেখ করা হলেও এই ধরনের যোগ্যতা শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থ অপারেটরদের থাকাই সম্ভব। অর্থাৎ বিদ্যমান ৬ অপারেটর এবং টার্মিনাল অপারেটর সাইফপাওয়ারটেক লিমিটেড ছাড়া এই ধরনের যোগ্যতা আর কোন বার্থ অপারেটরের বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের নেই। ওই টেন্ডারে বেশ কিছু শর্তও শিথিল করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট বার্থ অপারেটরের ৩০ ইউনিট ট্রাক্টর ট্রেইলার থাকার শর্ত ছিল, পরবর্তীতে তা ২০ ইউনিট করা হয়। টেন্ডার সিকিউরিটির পরিমাণ প্রথমে ১ কোটি টাকা বলা হলেও পরবর্তীতে তা ৮০ লাখ টাকা করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি টেন্ডারগুলো যাছাই বাছাই করে গত ৪ আগস্ট প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। এক্ষেত্রে ব্যাপক দেন দরবারও করা হচ্ছিল বিগত বেশ কিছুদিন ধরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই টেন্ডার বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবনা ফেরত পাঠানো হয়।
বিষয়টি বিদ্যমান বার্থ অপারেটরদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি করেছে। কাজ পেয়ে যাওয়ার নিশ্চিত ব্যবস্থাটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেছেন, কোন জানুয়ারি মাসে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। প্রায় এক বছর গত হতে চলেছে। আবার নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করে বার্থ অপারেটর নিয়োগ দিতে নতুন করে এক বছর ব্যয় হবে বলেও তারা উল্লেখ করেন। এতে বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিংসহ অন্যান্য কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, বিদ্যমান ছয়টি বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠানের কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে গতবছর। এরপর থেকে ডিপিএম পদ্ধতিতে উক্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে বার্থ অপারেটর নিয়োগ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ডিপিএম পদ্ধতিতে কাজ করাতে হবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টেন্ডার বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করেই কাজ করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার, বিক্ষোভ
পরবর্তী নিবন্ধরাশার গার্মেন্টসের পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা