আনোয়ারায় কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার, বিক্ষোভ

পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা

আনোয়ারা প্রতিনিধি | সোমবার , ৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারায় গত শনিবার রাতে উপজেলা সদরের ইছামতি এলাকা থেকে আবদুল্লাহ আল মাসুম (১৯) নামে এক কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে র‌্যাব ৭ এর একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। স্থানীয়রা ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আকাশ দত্ত (১৯) নামে এক কিশোরকে ধরে পুলিশে দিয়েছে। নিহত মাসুমের পরিবারের দাবি মাসুমকে রাতে ডেকে নিয়ে
পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে রাতে মাসুমসহ কয়েকজন মিলে ব্যানার লাগানোর জন্য বাঁশ কাটতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে। তবে এ ঘটনার সত্যতা নিয়েও পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানায়। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশ ময়না তদন্ত শেষে এশার নামাজের পর পরৈকোড়া ইউনিয়নের কৈখাইনের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। রাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দেওয়া হবে বলে জানান নিহতের পিতা মো.ইউছুপ।
গতকাল রবিবার সকালে নিহতের মা-বাবা ও আত্মীয়ের আহাজারিতে থানার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। নিহত মাসুম আনোয়ারা সদর ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী মো. ইউছুপের পুত্র ও আনোয়ারা সরকারি ডিগ্রি কলেজের এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী। এদিকে গতকাল সকাল ১০ টায় এলাকাবাসী ও স্বজনেরা এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে আনোয়ারা থানা সদর ও উপজেলা পরিষদ চত্বরে। মিছিলে নারী সহ কয়েকশ লোক অংশ নেয়।
নিহত মাসুমের পিতা মো. ইুউছুপ বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ১০ টায় সাবেক ইউপি সদস্য সনজিত দত্ত প্রকাশ সাগর দত্তের (৫০) পুত্র দীপ্ত দত্ত আমার ছেলে মাসুমকে বাসা থেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। পরে রাতে পুলিশ আমাকে ফোন করে বলে আমার মাসুম মারা গেছে। আমি রাতে ঘটনাস্থল উপজেলা সদরের ইছামতি পশ্চিম কন্যারা সাগর মেম্বারের বাড়ির সামনে আমার ছেলের লাশ দেখতে পাই। তিনি দাবি করেন তার ছেলে মাসুমকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন। তিনি আরো জানান, এশার নামাজের পর ছেলের দাফন কাজ শেষ করে রাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করবেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার সওদাগর জানান, শনিবার রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে সাবেক ইউপি সদস্য সাগর দত্তের পুত্র দীপ্ত দত্ত একটি মোটর বাইকে করে এসে তার দোকান থেকে ২৫০ গ্রাম রশি কিনে। এসময় ব্যবসায়ী মো. ইউছুপের ছেলে মাসুম তার বাইকের পিছনে বসা ছিল।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দীপ্ত দত্তের পিতা সাবেক ইউপি সদস্য সনজিত দত্ত প্রকাশ সাগর দত্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাতে তার ছেলের মোটর সাইকেলে করে নিহত মাসুমকে থানার সামনে থেকে আনোয়ারা উপজেলা সদরে এনে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এর পর আমার ছেলে দীপ্ত দত্ত রাতে চট্টগ্রাম শহরের কাট্টলীতে তার নানার বাড়ি চলে গেছে। মাসুমের কোনো ঘটনায় আমার ছেলে জড়িত নয়। গতকাল রবিবার বেলা ১১ টায় সহকারী পুলিশ (সার্কেল) আনোয়ারা মো. হুমায়ুন করিব, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম.দিদারুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম.দিদারুল ইসলাম জানান, শনিবার রাত দেড়টার আনোয়ারা সদরের ইছামতি পশ্চিম কন্যারা থেকে সাবেক ইউপি সদস্য সাগর দত্তের বাড়ির সামনে থেকে আবদুল্লাহ আল মাসুমের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আমরা জানতে পারি রাতে মাসুম সহ তার কয়েকজন সহপাঠী ব্যানার লাগানোর জন্য বাঁশ কাটতে গেলে মাসুম বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যায়। রাতে আমরা মৃতদেহ উদ্ধার করি। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে একটি কাটা বাঁশ উদ্ধার করি। বাঁশটিতে পোঁড়ার চিহ্ন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, তারপরও ঘটনার প্রকৃত কারণ তদন্তে পুলিশ কাজ করছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আনোয়ারা সদরের জয়কালী বাজারের একটি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগের কর্মী আশরাফ উদ্দীন নিহত হয়। ঘটনার ৭ মাস পার হলেও এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনার ৭ মাস না যেতে আরেক কলেজ ছাত্র মাসুমের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপছন্দের পাত্রীর সাথে বিয়ে না দেয়ায় যুবকের আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধ৬ বার্থ অপারেটরের টেন্ডার বাতিল