৬ বছরেও ঝুলছে গৃহায়ণের ১৩৮ কোটি টাকার কাজ

হালিশহরে স্বল্প ও মধ্যবিত্তের ১৪ তলা আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প অগ্রগতি মাত্র ৭২ শতাংশ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর হালিশহর ‘জি’ ব্লকে ৬ বছরেও শেষ হয়নি ১৩৮ কোটি টাকার স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১৪ তলা আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প। তিন দফায় তিন বছর মেয়াদ বাড়লেও বর্তমানে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৭২ শতাংশ। ঠিকাদারদের অভিযোগ, প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদন প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে মন্ত্রণালয়ে। অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ে ফ্ল্যাট বুঝে না পাওয়াতে হতাশ ক্রেতারাও। প্রকল্পের আওতায় ৫টি ভবনে ১৩৬৫ বর্গফুটের ২৬০টি ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর হাউজিং এস্টেটের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১৩৬৫ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট ১৪ তলা আবাসিক ভবনের নির্মাণ প্রকল্পের (৩য় পর্যায়) কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে ১ দশমিক ৬৬ একর জায়গায় ১৩৭ কোটি ৯৮ লক্ষ ২৬ হাজার টাকায় একই ডিজাইনের ৫টি পৃথক ভবনে ২৬০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের শেষের দিকে। প্রকল্পের দুইটি ভবনের কাজ করছে মেসার্স রয়েল এসোসিয়েটস এন্ড দেশ উন্নয়ন লি. (জেবি)। তারা ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ভৌত কাজ শুরু করেন। দুইটি ভবনের কাজ করছেন দিদার এন্ড ব্রাদার্স এবং তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড (জেবি)। তারা কাজ শুরু করেন ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর। কম্প্রিহেনসিভ হোল্ডিংস লিমিটেড ও জামাল এন্ড কোম্পানি কনসোর্টিয়াম অন্য ভবনটির কাজ শুরু করেন ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি। ২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রথম মেয়াদ শেষ হয় ৩৬ মাস মেয়াদের প্রকল্পের। দুই দফায় দুই বছর বেড়ে গত জুন মাসে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আবারও একবছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঠিকাদারদের ৮১ কোটি ৩১ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে ভৌত কাজের ৭২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিপিপিতে (প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাবনা) ১০ তলার ভবন থাকলেও পরে সংশোধিত করে বেচমেন্টসহ ১৪ তলা করা হয়। বর্ধিত অংশের জন্য সংশোধিত ডিপিপির অনুমোদন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে। এ ব্যাপারে প্রকল্পের ঠিকাদার মেসার্স রয়েল এসোসিয়েটসের স্বত্ত্বাধিকারী দিদারুল আলম দিদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘প্রকল্পটিতে বেচমেন্টসহ ১৫ তলার ৫টি ভবন হয়েছে। ১৩৮ কোটি টাকার অনুমোদিত ডিপিপিতে ১০ তলার ব্যয় ধরা ছিল। ভবনের ১৫ তলার ঢালাই কাজও প্রায় দুই বছর আগে শেষ হয়েছে। বর্ধিত কাজের জন্য সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনা এক বছরের বেশি সময় ধরে মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। এতে ১৫ শতাংশ হিসেবে প্রায় ২১ কোটি টাকার বর্ধিত ব্যয় অনুমোদন না হওয়াতে প্রকল্পের কাজগুলো আমরা বুঝিয়ে দিতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘করোনাকালেও আমরা ভবনের ভেতরে রংসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো করেছি। প্রকল্পের সময় যতই বিলম্ব হচ্ছে, আমরা আর্থিকভাবে ততই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের বিনিয়োগগুলো ঝুলে আছে। ব্যাংক ঋণ নিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফ্ল্যাট ক্রেতা বলেন, ‘তিন বছর হয়ে গেছে ফ্ল্যাট কিনেছি। আরও দুই বছর আগে আমাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো ফ্ল্যাট বুঝে পাইনি। ফ্ল্যাট বুঝে পেলে বাসাভাড়ার খরচটি লাগতো না। আমার নাম পত্রিকায় লেখিয়েন না। কোন অভিযোগ দিয়ে পরে হয়রানিতে পড়তে চাই না।’
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ নেজামুল হক মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোভিডসহ নানা কারণে ১৪ তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। প্রায় ৩-৪ বছর আগে এসব ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে ফ্ল্যাটগুলো গ্রাহকদের বুঝিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছি।’
এ বিষয়ে জানতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আসিফ ইমরোজ ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মঈনুল হক মোতাইদের মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৃহায়নের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ১৫ শতাংশ বর্ধিত করে সংশোধিত ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনো অনুমোদন হয়ে আসেনি। যে কারণে ঠিকাদাররা কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন না।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরে দিনে ভাঙছে ১৫ সংসার
পরবর্তী নিবন্ধদুদকের ২৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান