৪ স্থানে আবার ৮ সেতু!

জাইকা থেকে নেয়া হবে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ বাইপাস নির্মাণে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্যোগ, ভূমি মালিকদের উদ্বেগ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার প্রকল্প ঝুলে আছে। কিন্তু বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে সাড়ে ৭শ কোটি টাকায় ৮টি সেতু নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এখন নতুন করে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে একই নদীতে আবার ৮টি সেতু নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। রাস্তা সম্প্রসারণের কার্যক্রম শুরু না হলেও বাইপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় অনেক মানুষের ভিটেবাড়ি এবং জমি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, যদি বাইপাস নির্মাণ করা হয় তাহলে বিদ্যমান সড়কে এত টাকা খরচ করে ৮টি সেতু কেন নির্মাণ হচ্ছে? নতুন এই উদ্যোগ নিয়ে এলাকার ভূমি মালিকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার ৫ হাজার ৬শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ঝুলে আছে। বিদ্যমান সড়ক প্রশস্ত করা না হলেও এই সড়কের চারটি পয়েন্টে সাড়ে ৭শ কোটি টাকা খরচ করে ৮টি ছয় লেনের সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫০ মিটার লম্বা সাঙ্গু ও ৩৫০ মিটার লম্বা মাতামুহুরী সেতুও রয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কে সেতু ও অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হচ্ছে।
মহাসড়ক ছয় লেন করার টার্গেট নিয়েই মূলত পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারী ও চকরিয়ায় সেতুগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে সড়ক প্রশস্ত না হলে এসব সেতুর সুফল পাওয়া যাবে না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এদিকে সেতুগুলো নির্মাণের পাশাপাশি কিছুদিন ধরে একই এলাকায় নতুন করে সেতু ও বাইপাস রোড নির্মাণ করার কার্যক্রম চলছে। জাইকা থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পটিয়া বাইপাসকে ছয় লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি দোহাজারী, কেরানীহাট, আমিরাবাদ ও চকরিয়ায় বাইপাস নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মহাসড়কের উক্ত পাঁচটি বোটল নেকস (রাস্তার সংকীর্ণ জায়গা) সম্প্রসারণের পাশাপাশি বাইপাস নির্মাণ করতে গেলে যেসব স্থানে বর্তমানে একটি পয়েন্টে তিন লেনের দুটি করে ৮টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, তার পাশে একই নদীতে নতুন করে আরো ৮টি সেতু নির্মাণ করতে হবে।
এদিকে ভিটেবাড়ি হারানোর শঙ্কায় থাকা স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের জায়গা হারানোর চেয়ে সরকারি অপচয়ে আমরা বেশি কষ্ট পাচ্ছি। বিদ্যমান সড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করে নির্মাণাধীন সেতুগুলো পুরোদমে ব্যবহৃত হলে উক্ত পয়েন্টগুলোতে বাইপাসের কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু সেতু নির্মাণ করা হলেও সড়ক সম্প্রসারণ কবে হবে তার ঠিক নেই। অন্যদিকে বাইপাস নির্মাণের নামে উক্ত পাঁচটি পয়েন্টে আবারো জমি হুকুমদখল করতে হবে। মানুষের ভিটেবাড়ির পাশাপাশি প্রচুর ধানী জমি নষ্ট হবে। সবচেয়ে শঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, উক্ত নদীগুলোর উপর আবার ৮টি সেতু নির্মাণ করতে হবে। এতে নদীর নাব্যতা ও পানি চলাচল ব্যাহত হবে।
তাদের মতে, বিদ্যমান সড়কের সেতুগুলো নির্মাণ না করে যদি বাইপাস নির্মাণ করা হতো তাহলে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন বাজারের ভিতরের রাস্তায় ছয় লেনের সেতু নির্মাণের কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে আবার নতুন করে বাইপাস তৈরি করে সেতু নির্মাণ অর্থের অপচয়।
চন্দনাইশ ও চকরিয়ার কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাথে বৈঠক করা হচ্ছে। আমাদেরকে বুঝিয়ে বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি ছাড়া করতে চাচ্ছে। তারা বলেন, দেশের উন্নয়নে আমরা আমাদের ভূমি দেব। কিন্তু এখন যা করা হচ্ছে তাকে উন্নয়ন বলা যাবে না।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে বাজারের ভিতর দিয়ে যাওয়া মহাসড়কে ৬ লেনের যেসব ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলোর উপর দিয়ে স্থানীয় যানবাহন চলাচল করবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ভারী গাড়িগুলো বাইপাস দিয়ে চলাচল করবে। তাই বোটল নেকসগুলোতে নতুন করে বাইপাস নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বাইপাসগুলোতে আবার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। স্থানীয় গাড়ি চলাচলের জন্য ৬ লেনের সেতু দরকার আছে কিনা জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দিন : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবুধবার থেকে ৩ দিনব্যাপী ওয়ার্ড পর্যায়ে কোভিড টিকা