৪০ বছরে বিলীন ১২০ পাহাড়

পাহাড় ও নদী রক্ষায় ৭ দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৪ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

গত চার দশকে বিলুপ্ত হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর ৬০ শতাংশ পাহাড়। ৪০ বছর আগেও শহরে পাহাড় ছিল ২০০টি, যার মধ্যে ১২০টি বিলুপ্ত হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম এবং চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। পাহাড়, নদীসহ পরিবেশ রক্ষায় সংবাদ সম্মেলন থেকে সাতটি দাবিও জানানো হয়েছে।

সংবাদ সস্মেলনে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা বলা হয়, ১৯৭৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৩২ বছরে নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি আংশিক কেটে ফেলা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে নগরের পাঁচ থানা এলাকায় মোট পাহাড় ছিল ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার। ২০০৮ সালে তা কমে হয় ১৪ দশমিক ০২ বর্গকিলোমিটার। এ সময়ে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কাটা হয়। এটা মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ। বায়েজিদ, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালী ও পাহাড়তলী থানা এলাকায় এসব পাহাড় কাটা হয়। সবচেয়ে বেশি ৭৪ শতাংশ কাটা পড়ে পাঁচলাইশে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে পরবর্তী ১২ বছরে শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পাহাড় নিধন। এ সময় বেশিরভাগ পাহাড় কাটা হয় পাহাড়তলী, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার মতিঝর্ণা, ষোলশহর ও ফয়’স লেকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক এস এম সিরাজুল হকের ‘হিল কাটিং ইন অ্যান্ড অ্যারাউন্ড চিটাগং সিটি’ শীর্ষক গবেষণা এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার তথ্যকে পাহাড় কাটার পরিসংখ্যানের রেফারেন্স হিসেবে উপস্থাপন করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এ সময় বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর মোজাম্মেল হক বলেন, পাহাড় ধসে মানুষ মরলে প্রশাসন ইঞ্জিনিয়ারিং খোঁজে দ্রুত লাশ উদ্ধার করার জন্য। পাহাড় ধস প্রতিরোধ ও পাহাড় রক্ষায় যথাসময়ে যথাযথভাবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রয়োগ করা হলে পাহাড় রক্ষা হবে, তা ধসে মানুষও মরবে না। তিনি চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষায় প্রয়োজন প্রশাসনিক সৎ ইচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম ও চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মঞ্জরুল কিবরিয়া, ফোরামের উপদেষ্টা কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলের সভাপতি ও পরিবেশ ফোরামের উপদেষ্টা চৌধুরী ফরিদ, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহমুদুল হাসান সোহেল ও অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম পেয়ার আলী প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলন থেকে পাহাড় রক্ষায় যেসব দাবি উপস্থাপন করা হয় সেগুলো হচ্ছে, হাই কোর্টের নির্দেশ অনুসারে জঙ্গল সলিমপুর ও আলিনগরসহ চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন পাহাড়ে গড়ে তোলা সকল অবৈধ বসতি দ্রুত উচ্ছেদ করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ভূমিহীনদের যেভাবে জায়গাসহ ঘর উপহার দিচ্ছেন সেই নিয়মে পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করা প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘরসহ পুনর্বাসন করা। উদ্ধার করা বিশাল পাহাড়ি ভূমির কোনো অংশে কিংবা সরকারি জমিতে কক্সবাজারের আদলে বহুতল ভবন তৈরি করে প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা। হাই কোর্টের নির্দেশনা মেনে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক প্রদত্ত উচ্ছেদ নোটিশ অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা। শহরের বর্জ্য ও পলিথিন কর্ণফুলী নদীতে না পড়ার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর মা মাছ রক্ষা, দূষণ রোধ এবং বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। শহরের বিলুপ্ত ৭১ খাল চিহ্নিত করা এবং দখল করা সকল খাল উদ্ধার করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ববাজারে কমলে দেশেও কমবে জ্বালানি তেলের দাম
পরবর্তী নিবন্ধমনোযোগের কেন্দ্র কি সরে যাচ্ছে