মনোযোগের কেন্দ্র কি সরে যাচ্ছে

সম্মেলনের চেয়ে বিরোধী আন্দোলন মোকাবেলা ও নির্বাচনমুখী প্রস্তুতি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৪ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র দলগুলো ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে কারা অংশগ্রহণ করবে তা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। এর মাঝে আন্দোলন ও নির্বাচনমুখী হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।

এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বিএনপিসহ বাম রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয়। এর ফলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মনোযোগ এখন সম্মেলন কিংবা কমিটি গঠনের চেয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির দিকে সরে যাচ্ছে। আগামী ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও ৪৪টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে এখনো পর্যন্ত একটি ওয়ার্ডে সম্মেলন হয়েছে। চলতি মাসে সম্মেলনের কর্মসূচি নেই। মাসব্যাপী চলবে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। সেপ্টেম্বর মাসে নগরের ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড এবং ১৫ থানার সম্মেলন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তবে সম্মেলনের প্রস্তুতি থাকলেও বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলা এবং নির্বাচনমুখী মনোভাবের কথাও জানান তারা।

গত ১৮ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আগামী সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি উল্লেখ করেছিলেন। সেদিন খেলাফত মজলিশের সঙ্গে সংলাপের এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সিইসি বলেছিলেন, বর্তমান সরকার যে তারিখে প্রথম সভা করেছিল, সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অথবা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষের দিকে নির্বাচনে যেতে হবে। নির্বাচনটা একটা জটিল কর্মযজ্ঞ। অনেক প্রস্তুতি, সমঝোতার প্রয়োজন হয়। আমাদের তরফ থেকে প্রস্তুতিগুলো নিচ্ছি। আইনে যে সক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, কিছু এখতিয়ার আমাদের আছে। আচরণ বিধিমালা, পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী কাজ করব।

১ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং তার আগে ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনের প্রস্তুতির ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নঈম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবগুলো ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। ১ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তনও হতে পারে। এমনও হতে পারে, অর্ধেক ওয়ার্ডে সম্মেলন হলো। অবশিষ্ট ওয়ার্ডের সম্মেলন মহানগরের পরেও হতে পারে। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের ক্ষেত্রেও এটা হয়। জাতীয় সম্মেলনের আগে তো দেশের সব জেলায় সম্মেলন করা সম্ভব হয় না। সভানেত্রী যদি চান ২০টি ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়েছে, বাকিগুলোতে পুরনো কাউন্সিলরদের নিয়ে সম্মেলন করা যায়। সম্মেলনের পরে অবশিষ্ট ওয়ার্ডে সম্মেলন হবে।

তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ভালো না। তার ওপর জাতীয় নির্বাচনের চাপ আসছে। আমাদের সাংগঠনিক সব কার্যক্রম এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনিটরিং করছেন। সম্মেলন হোক বা না হোক আমাদের তো নির্দিষ্ট তারিখের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন আজাদীকে বলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবগুলো ওয়ার্ডে সম্মেলন করা সম্ভব হবে না। তবে কিছু ওয়ার্ড হবে। যতটুকু পারা যায় ততটুকু করে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে ১ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করব। এর মধ্যে বিরোধী দলগুলো মাঠে নেমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজপথে থেকে এগুলো মোকাবেলা করতে হবে। এর মধ্যে দেশে নির্বাচনী আবহও তৈরি হয়েছে।

এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ আজাদীকে বলেন, আমরা যারা থানাভিত্তিক সাংগঠনিক টিমে আছি, আগস্ট শেষে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু করার ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি আছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক যদি ১ অক্টোবর বাধ্যতামূলক মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে হয় তাহলে সেপ্টেম্বরে এক মাসে যতটুকু পারি সম্মেলন করার চেষ্টা করব। তবে শতভাগ পারব বলে প্রতিশ্রুতি দিতে পারব না। আমরা যতটুকু পারব, তারপর কেন্দ্রকে অবহিত করব। কেন্দ্র যদি সময় বাড়ায় নগরীর ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন করতে পারব।

তিনি বলেন, এর মধ্যে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও অনেক পরিবর্তন হতে চলেছে। বিরোধী দলগুলো সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। রাজনৈতিক এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের নেতাকর্মীদেরও মাঠে থাকার জন্য নির্দেশনা এসেছে। আগামী ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ আছে। ১৭ আগস্ট বিক্ষোভ সমাবেশে মাঠে থাকার ব্যাপারে ওয়ার্ড থেকে ইউনিট পর্যায় পর্যন্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১৭ আগস্ট বিকাল ৩টায় লালদীঘির মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসের সমাবেশ পুরাতন রেলস্টেশনে হবে। রাজনৈতিক এসব কর্মসূচির মধ্যেও সম্মেলনের ব্যাপারে প্রস্তুতি রয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন ১৫ আগস্টের পরে বসে ওয়ার্ডভিত্তিক সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৪০ বছরে বিলীন ১২০ পাহাড়
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীর ঘটনা গড়াল নগরেও