বোয়ালখালীর ঘটনা গড়াল নগরেও

দুই স্থানে ছাত্র ইউনিয়নের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত ১৯

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৪ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

বোয়ালখালীতে ছাত্র ইউনিয়নের মানববন্ধনে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে নগরীতে সমাবেশ করতে গিয়ে আবারও ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন ছাত্র ও যুব ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। বেধড়ক পিটুনিতে ছাত্র ও যুব ইউনিয়নের অন্তত ৯ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আহত ৬ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক থানায় আটকে রাখার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর কোতোয়ালী থানার নিউ মার্কেট মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত চারজন হলেন চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক টিকলু কুমার দে, কোতোয়ালী থানার শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক মোহাম্মদ অর্ণব, যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাখারভ হোসেন সেবক ও জেলার সহসভাপতি প্রীতম দাশ। তাদের চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়া জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ্যানি সেন, কোতোয়ালী থানার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অরিত্র ভট্টাচার্য্য, হালিশহর থানার সভাপতি মিজানুর রহমান আরিফ, পাহাড়তলী থানার দফতর সম্পাদক সুমন রহমান ও জেলা যুব ইউনিয়নের সদস্য অভিজিৎ বড়ুয়া আহত হন।

এর আগে গতকাল সকালে বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়ায় স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের মানববন্ধনে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক-বর্তমান ৫ নেতাসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। আহত নেতাদের মধ্যে আছেন ছাত্র ইউনিয়নের কলেজ শাখার আহ্বায়ক হিমেল চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন আরাফাত, দক্ষিণ জেলার সাবেক সভাপতি সেহাব উদ্দিন সাইফু ও সাজ্জাদ হোসেন এবং দক্ষিণ জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি অনুপম বড়ুয়া পারু।

এর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে বিকেল ৫টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয় জেলা ছাত্র ইউনিয়ন ও যুব ইউনিয়ন। উভয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রথমে নগরীর আমতল এলাকায় শাহ আমানত মার্কেটের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে সমাবেশ শুরু করেন।
জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ্যানি সেন আজাদীকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছিলাম। পেছন থেকে প্রায় ১০০ তরুণ-যুবক ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা করে। তারা লোহার রড, লাঠি, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প ও হেলমেট দিয়ে আমাদের কয়েকজনকে রাস্তায় ফেলে পিটাতে থাকে। প্রথমে পুলিশ হামলার ঘটনা দেখেও নির্বিকার থাকে। পরে পুলিশ এগিয়ে এলে হামলাকারীরা বলে, এরা জামায়াত-শিবিরের লোক, সরকার বিরোধী। এদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তখন পুলিশ আমাদের ৬ জনকে আটক করে ভ্যানে তুলে কোতোয়ালী থানায় নিয়ে আসে। সরকারি সিটি কলেজ শাখা ছাত্র সংসদের ভিপি পরিচয় দিয়ে এক যুবক হামলায় নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

হামলার শিকার নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কোতোয়ালী থানা ছাত্র ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অরিত্র ভট্টাচার্য্য একজন প্রতিবন্ধী তরুণ জানার পরও তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। নেতাকর্মীরা বারবার তাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধের পরও রেহাই পাননি অরিত্র।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে থানায় উপস্থিত কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ জুনায়েদ বলেন, মিছিল-সমাবেশে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তারা ছাত্রলীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছিল। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি।

এদিকে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও আটকের খবর পেয়ে জেলা কমিউনিস্ট পার্টি, যুব ইউনিয়ন ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা কোতোয়ালী থানায় জড়ো হন। ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ আহত চারজনকে ভ্যানে তুলে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ চলে যায়।

কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুর রহমান বলেন, ছাত্র ইউনিয়ন সমাবেশ করছিল। সেখানে ছাত্রলীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান দেয়া হয়। ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী এর প্রতিবাদ করলে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এতে চারজন সামান্য আহত হয়েছেন। আমরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আহত চারজনকে প্রথমে থানায় নিয়ে আসি। এরপর হাসপাতালে পাঠাই। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বোয়ালখালীতে হামলা : বোয়ালখালী প্রতিনিধি জানান, বোয়ালখালীতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের সামনে ছাত্র ইউনিয়নের মানববন্ধন কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলায় ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে শিক্ষা সংকট, ভবনসহ বিভিন্ন সংকট নিরসনের দাবি জানিয়ে কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন মানববন্ধন করছিল। এতে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নিতে চাইলে কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শিমুল সর্দারের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা বাধা দেন। কলেজ গেটে মানববন্ধন চলাকালে কাঠ ও লোহার এসএস পাইপ দিয়ে শিমুলের নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাইয়ুম ও রয়েল দেবনাথ ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় বেশ কয়েকজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন এবং ব্যানার কেড়ে নেন। এতে আহত হয়েছেন ১০ জন নেতাকর্মী।
কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক হিমেল চৌধুরী বলেন, কলেজের উন্নয়নে ন্যায্য দাবিতে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন শুরু করছিলাম আমরা। এতে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে তিনিসহ ছাত্র ইউনিয়নের বেশ কয়েকজনসহ সাধারণ ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছেন। এ সময় অনেকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয় বলে জানিয়ে দায়ীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।

হামলার কথা অস্বীকার করে অভিযুক্ত কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিমুল সর্দার বলেন, কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়া বহিরাগত কিছু লোক কলেজ গেটে জড়ো হওয়ায় তাদের সরিয়ে দিয়েছি। কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।

বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি। এ নিয়ে এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হামলার নিন্দা : দুই স্থানে ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়ে গতকাল বিবৃতি দিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমী ও সদস্য সচিব ফরহাদ জামান জনি। নেতৃবৃন্দ হামলাকারীদের শাস্তির দাবি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমনোযোগের কেন্দ্র কি সরে যাচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধভবন থেকে লাফ চাক্তাই খালে দুই বন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যু