হৃদয়ে স্বদেশ প্রেমের চাষ

রায়হানা হাসিব | সোমবার , ১৫ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

টানা ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক দুঃশাসনের যাতাকল থেকে ভারতবাসীকে মুক্ত করতে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ নেতা মহাত্মা গান্ধী যেভাবে ভারতের উপেক্ষিত বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করে তাদের হাতেই বৃটিশের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে ফিরিয়ে এনেছিলেন ভারত উপমহাদেশের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, কবি নজরুল ইসলামও উপলব্ধি করেছিলেন তার পূর্ববাংলাকে বাঁচাতে তেমনই এক দুরন্ত পথিকের নেতৃত্বের প্রয়োজন। যে নেতা উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন ঘটাবে তাঁর বলিষ্ঠ অসামপ্রদায়িক, শ্রেণিবৈষম্যহীন চেতনা ও গভীর স্বদেশ প্রেমের চর্চায়। সে-ই কাঙ্ক্ষিত দুরন্ত পথিকের দেখা আমরা পেয়েছি ১৯৭১ এর ৭ মার্চের বিকেলে এক জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে। ১০ লক্ষ উন্মত্ত, অধীর জনতার ভিড়ে সেদিন রেসকোর্স ময়দানে তার উপস্থিতি ছিলো সূর্যের মত দীপ্তমান। তাঁর বজ্রকণ্ঠে ছিলো ৭ কোটি নিপীড়িত বাঙালির প্রাণের দাবী ও স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার। বাংলার মানুষের এই স্বপ্নের রূপকার আর কেউ নয় আমাদের মহান নেতা স্বাধীনতা স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য ছিলো সময়ের প্রয়োজনে, স্বাধিকার ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে। তাঁর সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলো মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, নৃগোষ্ঠী, ধনী-দরিদ্র আপামর বাঙালি। ২৬ মার্চ একটি প্রশিক্ষিত, নির্লজ্জ সশস্ত্র বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হলেও প্রিয়জনের রক্তাক্ত লাশের মিছিল রেখেই নিরন্ন, নিরস্ত্র বাঙালি বন্ধুর কাছে দেওয়া ওয়াদা পূরণে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। হার না মানা বীর বাঙালি দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে একটি স্বাধীন মানচিত্র, একটি স্বাধীন পতাকা নিয়ে আত্মমর্যাদাবান জাতি রূপে বিশ্ব মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করলো। যে মানচিত্রের নাম বাংলাদেশ।

আজ ২০২১ এ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বার প্রান্তে স্বাধীন বাংলাদেশ। ৫০ বছরের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি, অর্জন – ত্যাগের হিসেব না কষে, শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক না করে, কোন দলীয় চেতনার মোড়কে মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে ম্লান না করে আসুন আজ সব বাঁধা ও বিভীষিকাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দুরন্ত পথিকের মত মুক্ত পথের যাত্রী হই। নতুন প্রজন্মের জন্য জাতির গৌরব গাথা-মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে সংরক্ষণ করি। হৃদয়ে স্বদেশ প্রেমের চাষ করি। আত্মমর্যাদাবান জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে নিজের কৃতিত্বের পরিচয় তুলে ধরি। তলা বিহীন ঝুড়ি থেকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। এমন কি করোনা জীবানু জালে আটকা পড়ে বিশ্বের সমৃদ্ধ দেশগুলো যেখানে খেই হারিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ সুবর্ণজয়ন্তীতে সোনালি আভা ছড়াচ্ছে। যা বিশ্বদরবারে এক বিস্ময় বটে। এ কৃতিত্ব রাষ্ট্র নায়ক থেকে চৌকিদার, আপনার, আমার সবার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাঁদো বাঙালি কাঁদো
পরবর্তী নিবন্ধআর শোক নয়; রূপান্তরিত হোক শক্তিতে