সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫

নগর লোহাগাড়া বাঁশখালী মহেশখালী

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৬ জুন, ২০২২ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরী ও লোহাগাড়া, বাঁশখালী, মহেশখালী তিন উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিশু, দুই নারীসহ প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ফিশারিঘাট এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় স্বামীর বাইকের পেছনে বসা এক গৃহবধূ ঘটনাস্থলে নিহত হন। লোহাগাড়ার চুনতীতে সড়ক পার হতে গিয়ে যাত্রীবাহী এস আলম বাসের ধাক্কায় ৪ সন্তানের জননী ও আমিরাবাদে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কর্মচারী এক বাইক আরোহী নিহত হন। মহেশখালীতে ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক কন্যা শিশু ও বাঁশখালীতে অটোরিকশা থেকে ছিটকে প্রাণ হারায় আরেক কন্যা শিশু।

নগরে প্রাণ হারালেন গৃহবধূ : নগরীর ফিশারিঘাট এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় তৃপ্তি ধর (৩৪) নামে মোটরসাইকেল আরোহী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোতোয়ালী থানার ফিশারিঘাট সংলগ্ন মেরিনার্স সড়কের জোড়া ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তৃপ্তি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার প্রয়াত ভজন চন্দ্র সূত্রধরের মেয়ে। থাকতেন কোতোয়ালী থানার নন্দনকানন দুই নম্বর গলিতে। এ ঘটনায় ঘাতক ট্রাক জব্দ করে চালককে আটক করা হলেও দুই পক্ষের সমঝোতার প্রেক্ষিতে চালককে ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবির জানান, স্বামীর মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার পথে ওই নারী ট্রাকের ধাক্কায় পড়ে যান। পড়ে গেলে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ওই ট্রাক জব্দের পাশাপাশি এর চালক আলমগীরকে (৫০) গ্রেপ্তার করে। তবে পরবর্তীতে দুই পক্ষের সমঝোতার প্রেক্ষিতে আটক চালককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা না করা এবং দুই পক্ষের সমঝোতার প্রেক্ষিতে চালককে তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। লাশও পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান ওসি জাহিদুল কবির।

লোহাগাড়ায় ২ মৃত্যু : লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, লোহাগাড়ার চুনতিতে রাস্তা পার হতে গিয়ে বাসের ধাক্কায় মানোয়ার বেগম (৩৮) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-কঙবাজার মহাসড়কের ইউনিয়নের হাজী রাস্তার মাথা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ আধুনগর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাজির পাড়ার জসিম উদ্দিনের স্ত্রী ও ৪ সন্তানের জননী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাস্তা পার হওয়ার সময় চট্টগ্রামমুখী এস আলম পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস ওই নারীকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থলের অদূরে লোহার দীঘির পাড় এলাকায় বাসটি রেখে চালক ও সহকারী পালিয়ে যায়।

নিহতের স্বামী জসিম উদ্দিন জানান, আমিরাবাদ মাস্টারহাট এলাকায় আমার স্ত্রী তার বোনের শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। ঘটনাস্থলে আমিরাবাদগামী গাড়িতে উঠতে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়। এদিন সন্ধ্যায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাকসুদ আহাম্মদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। বাসটি আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহতের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে লোহাগাড়ার আমিরাবাদে সড়ক দুর্ঘটনায় মো. মাছুম পারভেজ (২৫) নামে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার এক কর্মচারী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-কঙবাজার মহাসড়কে ইউনিয়নের বার আউলিয়া কলেজ গেইট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মাছুম পারভেজ নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার হুমায়ুন কবিরের পুত্র বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. মো. শাহাদাত হোসেন শুভ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনাস্থলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটর সাইকেল আরোহী মাছুম পারভেজ চট্টগ্রামমুখি একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে পড়ে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ভর্তি করেন। মাছুম পারভেজ সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাজির খিল এলাকায় খালাতো বোনের বিয়েতে এসেছিলেন। বটতলী স্টেশন থেকে ফুল নিয়ে বিয়ে অনুষ্ঠানে যাবার পথে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন।

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ রায়হান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক যুবককে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয়রা। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ওই যুবকের মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল।

মহেশখালীতে শিশুকন্যা ডাম্পারে পিষ্ট : মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, মহেশখালীতে দুটি বালুবাহী ডাম্পারের প্রতিযোগিতায় একটির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেল ফারিয়া মনি (৯) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রীর। সে ধলঘাট পাড়া গ্রামের কলিমুল্লাহর মেয়ে এবং ধলঘাটপাড়া মাহাদ আন-নিবরাস মাদ্রাসার নুরানি ২য় বর্ষের ছাত্রী। গতকাল শনিবার বেলা ২টায় উপজেলার গোরকঘাটা-জনতা বাজার প্রধান সড়কের হোয়ানক ইউনিয়নের ধলঘাট পাড়া নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিশুটি বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল। এ সময় একই মালিকের দুটি বালুবাহী ডাম্পার ট্রাকের চালক একে অপরকে সাইড না দিয়ে বেপরোয়া গতিতে গোরকঘাটার দিকে যাওয়ার সময় শিশুটিকে চাপা দিলে সে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় স্থানীয়রা পেছনের গাড়িটিকে আটকাতে পারলেও ঘাতক গাড়িটি পালিয়ে যায়। উত্তেজিত জনতা গোরকঘাটা-জনতা বাজার প্রধান সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আটক গাড়ি ভাঙচুর করে এবং গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে মহেশখালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান মীর কাসেম বলেন, অদক্ষ আনাড়ি চালকদের বেপরোয়া গতির প্রতিযোগিতার কারণে শিশুটি মারা যায়। এখন থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ। তিনি উত্তেজিত জনতাকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে পুনরায় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।

বাঁশখালীতে অটোরিকশা থেকে ছিটকে প্রাণ গেল শিশুর : বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের ছাপাছড়ি এলাকার মোহাম্মদ মিজানের স্ত্রী তার দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে একটি অটোরিকশায় করে যাচ্ছিলেন আত্মীয়ের বাড়ি। পথিমধ্যে অটোরিকশাটি অপর একটি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা খেলে আড়াই বছরের শিশু কন্যাটি গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। শিশুটির বিস্তারিত পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

গতকাল শনিবার বিকেলে সংঘটিত ঘটনার ব্যাপারে স্থানীয় আমিনুল ইসলাম জানান, বাহারছড়া ইউনিয়নের ছাপাছড়ি এলাকার মোহাম্মদ মিজানের স্ত্রী তার দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিল। অটোরিকশায় যাওয়ার পথে বাহারছড়া শেখ মঙ্গলঘাটায় অপর একটি অটোরিকশা ওভারটেকিং করতে গিয়ে কোল থেকে থেকে ছিটকে পড়ে মারা যায় শিশুটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফের করোনায় আক্রান্ত মির্জা ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধইতিহাসের পাতায় মাথা উঁচু করে থাকবে পদ্মা সেতু