স্লিপ ছাড়াই দেয়া হচ্ছে ডিজেল

থেমে নেই চসিকের জা্বলানি চুরি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) চালকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি তেল চুরির অভিযোগ উঠে। এক্ষেত্রে যান্ত্রিক শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারে বলে গুঞ্জন আছে। বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জ্বালানির স্লিপ ইস্যুর মাধ্যমে অনিয়মের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তেল চুরির সময় একাধিকবার অনেক চালক হাতেনাতে ধরাও পড়ে। তেল চুরির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত কারাদণ্ডও দিয়েছে।
এরপরও থেমে নেই তেল চুরি। সর্বশেষ গত শনিবার দিবাগত রাতে চসিকের সাগরিকা পেট্রোল পাম্প থেকে ৭২ লিটার ডিজেল চুরির সময় ধরা পড়ে মো. হোসেন নামে এক চালক। মোবারক হোসেন নামে এক পাম্প অপারেটর তাকে স্লিপ ছাড়া তেল ইস্যু করে। যা সেখানে কর্মরত একজন সুপারভাইজারের চোখে পড়লে ধরা পড়ে তারা।
এদিকে হাতনাতে ধরা পড়লেও দুইজনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রথমে তাদের আটক করে থানায় খবর দেয়া হয়। তবে পুলিশ পৌঁছার আগেই তাদের কৌশলে পালিয়ে যেতে সেখানে কর্মরতরা সহযোগিতা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের সমস্ত গাড়ির জ্বালানি তেল ইস্যুর দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মির্জা ফজলুল কাদের দৈনিক আজাদীকে বলেন, পাম্প অপারেটর মোবারক হোসেন স্লিপ ছাড়া তেল ইস্যু করে গাড়ি চালক মো. হোসেনকে। সেটা উপ-সহকারী প্রকৌশলী অপূর্ব দেবনাথ ধরে ফেলে। স্লিপ ছাড়া তেল ইস্যু অপরাধ।
আটকের পরও পুলিশ পৌঁছার আগে ধৃতদের ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যাওয়ার পর তাদের দেখেনি। পাম্প ম্যানেজার আমাকে জানিয়েছে ধৃতরা পালিয়ে গেছে। তবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কি পরিমাণ তেল ইস্যু করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৭২ লিটার।
চসিকের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল বারেক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ধৃতরা কিভাবে পালিয়েছে, কারা পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে সবকিছু বের হবে। চালক ও পাম্প অপারেটরকে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। যে ইনচার্জ তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ কাউন্সিলর বলেন, মৌখিক স্বীকারোক্তি থেকে জানতে পেরেছি রাতে ৩০০ লিটার করে তেল পাচার করে। দিনে এটা আরো বেশি হবে বলে ধারণা করছি। তেল চুরি করে কর্পোরেশনের কোটি কোটি টাকা অপচয় করছে। সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চসিকের যান্ত্রিক শাখার তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ২২ কোটি ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩৯ টাকা জ্বালানি খাতে খরচ হয়েছে। মেঘনা পেট্টোলিয়াম থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করে তা নিজস্ব ফিলিং স্টেশনে মজুদ করে চসিক। নিজস্ব যানবাহনের জন্য দামপাড়া পুল অফিস, সাগরিকাস্থ ওয়ার্কশপ ও অ্যাসপল্ট প্ল্যান্ট অফিস থেকে ইস্যুকৃত স্লিপের মাধ্যমে তা বিতরণ করার নিয়ম। সংস্থাটিতে ৪১৪ টি সচল যান ও ২৫ টি সচল জেনারেটর আছে। এসব যান ও জেনারেটরের বিপরীতে তেল ইস্যু করা হয়।
এদিকে গত বছর তেল ব্যবস্থাপনায় কোনো অনিয়ম ছিল কী না তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করেছিলেন চসিকের তৎকালীন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। ওই প্রতিবেদনে ‘নথির রেকর্ডের চেয়েও দৈনিক ১৭০ লিটার ডিজেল বেশি ব্যবহার করা হয়’ বলে উল্লেখ করা হয়। যদিও এ প্রতিবেদনে অসঙ্গতি ছিল বলে প্রশাসকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক। তদন্ত কমিটি জ্বালানি সংগ্রহে ১৪ এবং বিতরণের জন্য ১৭ টি সুপারিশ করেছিল। যার বেশিরভাগ বাস্তবায়িত হয়নি।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে জ্বালনি চুরির কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনায় জানা গেছে, গত ৫ মে হালিশহর থেকে তিন হাজার লিটার ডিজেল বোঝাই ট্রাকসহ দুই চোরাই কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। ধৃতরা চসিকের গার্বেজ স্টেশন এলাকায় চোরাই তেল মজুদ করতো। সেখানে তারা চসিকের ময়লাবাহী গাড়ি থেকে তেল কিনতো। অবশ্য অন্য গাড়ি থেকেও তারা তেল কিনতো। ওই সময় ধৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, চোরাই তেলের শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ আসতো চসিকের গাড়ি থেকে।
গত বছরের ৭ আগস্ট চসিক পরিচালিত একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে তেল চুরির বেশ কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে কাজলচন্দ্র সেন নামে ওই চালককে বরখাস্ত করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাতে চুরি করে তেল বিক্রির সময় আর্বজনাবাহী এক গাড়ির চালক ও চোরাই তেল ক্রেতাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিলেন চসিকের দুই কাউন্সিলর। ধৃতরা হচ্ছেন- গাড়ি চালক বজলুল রহমান এবং ক্রেতা শাহ জামান। তাদের বিরুদ্ধে চসিক পুল সহকারী জামশেদ বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছেন। চসিক ওই গাড়ি চালক বজলুল রহমানকে চাকুরিচ্যুৎ করে। এছাড়া ২০০৭ সালে তেল চুরির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২০১৭ সালে চসিকের দুই চালকসহ তিনজনকে কারাদণ্ড দিয়েছিল আদালত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন সন্তু লারমা
পরবর্তী নিবন্ধহালদার পানির গুণগত মান স্বাভাবিক