স্থায়ীকরণের সঙ্গে যোগ হলো আরো ৯ দাবি

চসিকের অস্থায়ী কমকর্তা কর্মচারীরা কাল থেকে আবার অন্দোলনে নামছেন

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ২২ জুলাই, ২০২৩ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

পূর্বের স্থায়ীকরণের দাবির সঙ্গে নতুন করে ৯ দফা যোগ করে আন্দোলনে নামছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) কর্মরত অস্থায়ী কর্মকর্তাকর্মচারীরা। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল রোববার গণস্বাক্ষর নেয়া হবে। এ গণস্বাক্ষরসহ ১০ দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট মেয়রকে হস্তান্তর করা হবে। এরপর স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত ‘কর্মবিরতি’সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে তারা।

এর আগে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রথম টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে পৌনে চার ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন অস্থায়ী কর্মকর্তাকর্মচারীরা। পরবর্তীতে গত প্রায় দুই বছরে ধাপে নানা কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ গত ২৫ জুন সিটি মেয়র বরাবর স্মারকলিপি দেয়। ওইসময় ঈদুল আজহার পর স্থায়ীকরণের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেয়া হয়।

জানা গেছে, চসিকে বর্তমানে ৬ হাজারের অধিক অস্থায়ী কর্মকর্তাকর্মচারী আছেন। চসিক অস্থায়ী কর্মকর্তাকর্মচারী পরিষদ এর ব্যানারে অস্থায়ীরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে আসছে। সংগঠনটির দায়িত্বশীল নেতারা আজাদীকে জানান, অতীতে বিভিন্ন সময়ে মেয়রসহ কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু অস্থায়ীদের স্থায়ী করেনি। এমনকি চলতি ২০২৩২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে অস্থায়ী কর্মকর্তাকর্মচারীদের স্থায়ীকরণে কোনো সুনির্দিষ্ট বরাদ্ধও রাখা হয় নি। এছাড়া স্থায়ীকরণের সময় বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয় চতুর্থবার যে ছাড়পত্র দেয় তার মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় তারা নতুন করে আন্দোলনে নামছেন।

চসিক অস্থায়ী কর্মকর্তাকর্মচারী পরিষদের সদস্য সচিব সাজু মহাজন আজাদীকে বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। স্থায়ী করার বিষয়ে আমাদের আশ্বাসও দেয়া হয়। তাই আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু আশ্বাস কার্যকর হয়নি। তাই আমরা এবার চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছি। স্থায়ীকরণসহ ১০ দফা দাবি নিয়ে আমরা মেয়র মহোদয়ের কাছে যাব। এবার দাবি পূরণ করা হবে কীনা সে বিষয়ে হ্যাঁ বা না একটা সিদ্ধান্ত আমরা জানব। এরপর স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এদিকে পূর্বের দাবির সঙ্গে নয় দফা মিলিয়ে ঘোষিত ১০ দফা দাবিগুলো হচ্ছে১৯৮৮ ও ২০১৯ সালে অনুমোদিত শূন্য পদের বিপরীতে অস্থায়ীভাবে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে চাকরি নিয়মিতকরণ তথা স্থায়ী করা। চসিক এর সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে অস্থায়ীভাবে কর্মরত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের ২০১৫ সালের শ্রমিক আইন পাশ হওয়া ও ২০২০ সালে সরকার কর্তৃক পরিপত্র অনুযায়ী বেতন সমন্বয় করে বর্ধিত বেতন প্রদান করা এবং ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া বিশেষ প্রণোদনা ভাতা অস্থায়ী কর্মরতদের প্রদান করা। অউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করা। ডোর টু ডোর শ্রমিকদের যোগদান পত্র প্রদান ও মাসের ১ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধসহ সকল ধরনের বোনাস ও উৎসব ভাতা প্রদান করা। অস্থায়ী কোন কর্মকর্তাকর্মচারী কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ ও অবসর গ্রহণ করলে ১০ (দশ) লক্ষ টাকা এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করা। স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কিংবা অস্থায়ীভাবে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রাখা। অবসরোত্তর গ্র্যাচুয়িটি তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করা। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চসিকে পেনশন প্রথা চালু করা। সিটি কর্পোরেশনের পরিত্যক্ত জায়গায় অন্যান্য স্বায়িত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মত কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্লট বা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করা এবং শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় সার্বক্ষণিক ভালো মন্দ দেখভাল করার জন্য (সিবিএ) পুনঃগঠন করা।

চসিক অস্থায়ী কর্মকর্তাকর্মচারী পরিষদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সচিব (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) জাহিদুল ইসলাম জোমাদ্দার আজাদীকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প২০৪১ বিনির্মাণের চতুর্থ অধ্যায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চসিক অস্থায়ী কর্মকর্তাকর্মচারী পরিষদ ১০ দফা দাবি প্রণয়ন করছে। এসব দাবির পক্ষে গণস্বাক্ষর নিয়ে জনমত তৈরি করে আন্দোলন জোরদার করা হবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটিতে অনুমোদিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী পদ আছে ৪ হাজার ২২৬টি। কিন্তু কর্মরত আছেন ৮ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে স্থায়ী আছেন ২ হাজার ৭৭০ জন। অর্থাৎ অস্থায়ী আছেন ৬ হাজার ৩৩ জন। অনুমোদিত জনবল কাঠামোর বিপরীতে বর্তমানে শূন্য পদ আছে এক হাজার ৪৫৭টি।

অস্থায়ীদের মধ্যে অনেকে গত ২০২৫ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরতও আছেন। কারো অবসরে যাওয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু এদের স্থায়ী না করে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৩ পদে ৬০ জন নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তখন স্থায়ীকরণের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণের দাবিতে আন্দোলন করেন অস্থায়ীরা। পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করে চসিক। এরপর বিভিন্ন সময়ে সিটি মেয়রকে স্মারকলিপি প্রদান, নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন করা হয়।

পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চসিকের অস্থায়ীদের বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তাদেরকে আইনকানুনের আওতায় এনে সুযোগ দিয়ে রেগুলাইজ (নিয়মিত) করার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। এর প্রেক্ষিতে ২৪ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি বৈঠক হয়। এতে অস্থায়ীদের স্থায়ী বা নিয়মিতকরণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২৬ মে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

এছাড়া গত বছর চসিকের সাধারণ সভায়ও স্থায়ীকরণের সুপারিশ করেন কাউন্সিলররা। এরপরও চাকরি স্থায়ীকরণে ‘অপারগতা’ প্রকাশ করায় ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর চসিকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে তার দপ্তরে অবরুদ্ধ করা হয়। পরে মেয়রের আশ্বাসে সরে যান তারা। এরপর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও স্থায়ীকরণে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি আন্তঃনগর
পরবর্তী নিবন্ধ১৪ বছর পর অভিযুক্ত স্বামী গ্রেপ্তার