স্কুলের গেট ভেঙে মায়ের সামনেই শিশুটির মৃত্যু

‘নির্মাণ কাজে ত্রুটি ছিল’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১১ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

শ্রাবণ মাসে জন্ম নিয়েছিল বলে বাবা-মা শখ করে নাম রেখেছিল শ্রাবণ। ৬ বছর বয়সী ছেলেটি মায়ের হাত ধরে রোজ স্কুলে যেত। গতকাল বুধবার ছিল তার সর্বশেষ স্কুলে যাওয়া। আর কখনোই তার আর মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাওয়া হবে না। কারণ স্কুলে প্রবেশের সময় গেট ভেঙে পড়লে তাতে চাপা পড়ে মায়ের সামনেই করুণ মৃত্যু হয় শিশুটির। গতকাল বুধবার খাগড়াছড়ির খবং পড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে এ নির্মম ঘটনাটি। আকস্মিক এই ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। নিহত শ্রাবণ দেওয়ান খাগড়াছড়ি পৌরসভার নারায়ন খাইয়া এলাকার প্রণয় দেওয়ানের ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থী শ্রাবণ দেওয়ান সকাল ৯টার দিকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করার সময় হঠাৎ গেটটি হুড়মুড় করে তার উপর ভেঙে পড়ে। সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। মায়ের সামনেই ছেলেটি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করল। এ ঘটনার পর অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও গেট নির্মাণ কাজের ত্রুটির কারণে ছোট্ট শিশুটিকে এভাবে প্রাণ হারাতে হল।
বিদ্যালয় লাগায়ো স্বনির্ভর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপুলিশ পরিদর্শক গোবিন্দ চন্দ্র রায় জানান, স্কুলের গেটটি দীর্ঘদিন ধরে নড়বড়ে অবস্থায় ছিল। সেটিকে খুঁটি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নেয়ায় এ বিয়োগান্তক ঘটনাটি ঘটল। খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, আমরা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। নিহত শিশুর লাশ সুরতহাল করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শিশুটির অভিভাবক অভিযোগ করলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে শিক্ষার্থী শ্রাবণ দেওয়ান নিহতের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ। গতকাল বুধবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা চিংলামং চৌধুরী বলেন, জেলা পরিষদের সদস্য ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আহ্বায়ক নিলোৎপল খীসাকে আহ্বায়ক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিনকে সদস্য সচিব ও পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিমকে সদস্য করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন। তিনি এ ঘটনায় নির্মাণ কাজের ত্রুটিকে দায়ী করে বলেন, গেটের যে ওজন সে অনুযায়ী লোহার এঙ্গেল ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে পাতলা লোহার রড। যে কারণে গেটটি ভেঙে পড়েছে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে বিদ্যালয়ের নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় তাতে ট্রাকের ধাক্কা লাগলে সেটি আরো নড়বড়ে হয়ে যায় বলে তথ্য পেয়েছি। এরপর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি অবগত করলেও ঠিকাদারের লোকজন কেউ আসেনি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, আমরা গেটটি নির্মাণ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এরপর গেটের ত্রুটি নিয়ে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। এছাড়া কয়েকদিন আগে বিদ্যালয়ের নির্মাণ সামগ্রী নেওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কা লেগে গেটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে শুনেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশাসন করতে গিয়ে মায়ের মারধরে ছেলের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধগণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা সকল দলের সম্মিলিত দায়িত্ব : তথ্যমন্ত্রী