সৈকতে মরা জেলিফিশ ভেসে আসার কারণ কী

সমুদ্রবিজ্ঞানীরা জানালেন নানা আশঙ্কার কথা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৫ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে মাঝেমধ্যেই নানা সামুদ্রিক প্রাণির মৃতদেহ ভেসে আসে। তবে গত কয়েকদিন ধরে সৈকতের ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভেসে আসছে শত শত মৃত জেলিফিশ। এসব মৃত জেলিফিশ বিষাক্ত বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কী কারণে হঠাৎ করে এত মরা জেলিফিশ ভেসে এসেছে, তা নিয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন নানা আশঙ্কার কথা। পাশাপাশি পর্যটকদের এসব মৃত মাছ থেকে দূরে থাকার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, জেলিফিশ স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটতে পারে না। এ কারণে জোয়ারে ভেসে আসা জেলিফিশ ভাটার সময় সৈকতে আটকা পড়ে। আবার অনেক সময় জেলেদের জালেও আটকা পড়ে মারা যায়। তিনি জানান, জেলিফিশ সামুদ্রিক কচ্ছপদের প্রধান ও অত্যন্ত প্রিয় খাবার। একটি ইকোসিস্টেমে সামুদ্রিক কচ্ছপ হ্রাস পেলে জেলিফিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং এরা প্রচুর পরিমাণে মৎস্য শিকার করে বলে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের বিস্তারও বাধাগ্রস্থ হয়।

কাছিম সংরক্ষণে দায়িত্বরত বেসরকারি সংস্থা নেকমের বিজ্ঞানী আবদুল কাইয়ূম বলেন, কক্সবাজার উপকূলে ডিম ছাড়তে আসা কাছিমের সংখ্যা গত এক দশকে ৯০% ভাগেরও বেশি কমে গেছে। মাত্র এক দশক আগেও সোনাদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত কক্সবাজার উপকূলের অন্তত ৫৪টি পয়েন্টে শীত মৌসুমে ডিম পাড়তে আসতো শত শত মা কচ্ছপ। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অন্তত ১৩টি পয়েন্টে কচ্ছপের দেখা মিলছে না। বাকী পয়েন্টগুলোতেও ডিম পাড়ছে খুব কম। ফলে কাছিমের প্রধান শিকার জেলিফিশের হার বেড়ে যেতে পারে।

বিশিষ্ট মৎস্য বিজ্ঞানী ড. কবির আহমদ মনে করেন, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেড়ে গেলে জেলিফিশ ব্যাপকভাবে বাচ্চা দেয়। এদের বংশবৃদ্ধির হার এতোই বেশি যে, এরা সমুদ্রে জেলিফিশ ব্লুম ঘটাতে পারে। ফলে মৎস্য সম্পদের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্র প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, জেলিফিশ স্ট্র্যান্ডিং বা সৈকতে মরা জেলিফিশ ভেসে আসার ঘটনা সারা বিশ্বের সমুদ্র সৈকতে দেখা যায়। কোয়াস্ট ডাটাবেসে প্রায় ৩০০টি সৈকতের প্রায় ৫০০টি জেলিফিশ স্ট্র্যান্ডিং এর ঘটনা রেকর্ড করা হয়। এই রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের বসন্তের মাসগুলিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সেই বছরগুলিতে, উপকূলরেখার ১,০০০ কিলোমিটার (৬২০ মাইল) জুড়ে মৃত জেলিফিশগুলি অবিরাম ছড়িয়ে পড়েছিল। এছাড়া ২০০৬ সালে নিউজিল্যান্ডের উপকূলে লক্ষাধিক জেলিফিশের মৃতদেহ ভেসে এসেছিল।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, সমুদ্রের ছোট বড় সব মাছের জন্য জেলিফিশ এক মহা আতংকের নাম। অনেক সময় একে মৃত্যুর বাক্সও বলা হয়। এর আছে লম্বা কর্ষিকা যা নেমাটোসিস্ট, যা বিষ বহন করে। এর হুলের আঘাত প্রাণঘাতী হতে পারে এবং মাত্র চার মিনিটেই শিকারকে মেরেও ফেলতে পারে। জেলিফিশের কিছু কিছু প্রজাতি সাপের বিষকেও হার মানিয়ে দেয়। সমুদ্রে এরা এতটাই প্রাণঘাতি যে, এদের দেহকে বায়োলজিক্যাল বুবি ট্র্যাপস বলা হয়। তিনি বলেন, সৈকতে বেড়াতে গেলে কখনো এ ধরনের জেলিফিশ খালি হাতে স্পর্শ করা উচিত নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির শেখ হাসিনা হলের অফিসে তালা, ৭ দাবি
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি, তিন পদে নতুন নিয়োগ