সীতাকুণ্ডে মৌসুমে পানের উৎপাদন বৃদ্ধি

পাইকারিতে দাম কম, খুচরায় দ্বিগুণ

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বুধবার , ২৪ জুলাই, ২০২৪ at ৩:৫২ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে পাইকারীতে পান বরজগুলোতে পান বিক্রি হচ্ছে সাইজ অনুযায়ী ৭২টি পান মাত্র ১০ টাকায়। এবার পানের উৎপাদন বেশি হওয়াতে পানের মূল্য কম বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। তবে খুচরা বাজারে দ্বিগুণ দামে পান বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতারা প্রায় সময়ে অভিযোগ করে থাকেন।

এদিকে কৃষক পরিবারগুলো মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমিতে পান উৎপাদন করে থাকলেও সে হিসেবে ন্যায্য মূল্য থেকে বরাবরই তারা বঞ্চিত হয়ে আসছে। এক সময়ে এ উপজেলা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পান রপ্তানি করা হতো। এখানে পান কিনার জন্য পাইকার না আসার কারণে দিনদিন পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে উপজেলা জুড়ে থাকা ৩০৪ জন পান চাষী পরিবার। গত কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন জেলার শহর গুলোতে ট্রাকে করে এ অঞ্চল থেকে পান নিয়ে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা পাইকারগণ। বর্তমানে ঐসব অঞ্চলে পানের উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়ায় ক্রমশ পানের বাজার হারাতে বসেছে এখানকার খেটে খাওয়া অসংখ্য পান চাষী পরিবারগুলো। অথচ চাষের উপর নির্ভর করে চলে তাদের জীবন জীবীকা। একদিকে পানের দাম কম অন্যদিকে একটানা প্রবল বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলের কারণে চলতি মৌসুমে উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের পান বরজের ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে দাবী পান চাষী পারিবার গুলোর। তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে পান চাষ করেছেন।

উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বারৈয়াপাড়া, ফেদায় নগর, ধর্মপুর, কলাবাড়ীয়া ও পৌর সদরের মধ্যম মহাদেব পুরের বারৈয়াপাড়া গ্রামে পাহাড়ি ঢলের পানিতে এসব অঞ্চলের কিছু কিছু পান বরজে খুঁটি ধসে পড়েছে বলে জানান ছোট দারোগা হাটের ধর্মপুর গ্রামের প্রবীন পান চাষী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন ছোট বেলা থেকেই পান চাষকরে আসছি। সে হিসেবে লাভ লোকশান যেটাই হউক না কেন এখানকার পানের ঐতিয্য ধরে রাখতে পান চাষকরে আসছি। শুকনো মৌসুমে পানের উৎপাদন অনেক কম হয় সে কারণে পানের মূল্য অন্যান্য সময়ের থেকে বেশি থাকে। তখন ছোট সাইজের পান এক বিড়া সমান ৭২টি পান ৩৫ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি।কিন্তু বর্তমানে প্রতি বর্ষার মৌসুমে সাইজ অনুযায়ী ১০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত সাইজ অনুযায়ী পাইকারীতে পান বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতি বারের মত ৩০ শতক জমিতে এবারও পান চাষ করেছি।

তবে এক সময়ে এলাকার পান দেশের বিভিন্ন জেলার শহর গুলোতে পাইকারী দরে পান কিনে নিয়ে যেত বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারগণ। শুধু তাই নয় ট্রেনে করেও বিভিন্ন জেলায় পান নিয়ে যেত আগত পাইকার। সে সময় সকাল থেকে কৃষকরা তাদের নিজ নিজ পানের বরজগুলো থেকে পান সংগ্রহ করে খাচা করে নিয়ে যেত পাইকারগণ। এখানে সাপ্তাহিক হাটবাজারে প্রতিটি ওলি গলিতে পানে পানে ছেয়ে একাকার হয়ে যেত। এখন আর আগের পানের রমরমা অবস্থা নেই। তার কারণ একদিকে পানের উৎপাদন বেশি আর অন্যদিকে বাইর থেকে পান কিনার জন্য আগের মত পাইকার আর আসেনা এ অঞ্চলে। সে কারণে পানের এ অবস্থা। এ গ্রামে সুজন চন্দ্র নাথ,পলাশ চন্দ্র নাথ,মোঃ নোয়া মিয়া,নুরুল আবছার ও এরশাদ উল্লাহসহ ৮০ থেকে ৯০জন পান চাষী রয়েছে এ গ্রামে। অন্যদিকে পৌরসভাীন দক্ষিন মহাদেব পু্‌রের বারই পাড়া গামের পান চাষী স্বপন বলেন এবার ৬০ শতক জমিতে পান চাষ করেছি। পানের এক বিড়া সমান ৭২টি পান মাত্র ১০ থেকে ১৫ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন বর্ষার মৌসুম গুলোতে পানের উৎপাদন অনেক ভাল হয়। সে কারণেই পানের দামও কম থাকে।

তিনি বলেন, পানের মূল্যের কোনো ঠিক নেই। কিছুদিন আগেও ছোট সাইজের ৭২টি পান বিক্রি করেছি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। আর মাঝারি সাইজের পান বিক্রি করেছি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। শুকনো মৌসুমে পানের দাম ভাল পাওয়া যায়। তবে তখন পানের উৎপাদনও কম হয়। এদিকে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের মহোন্তের হাটে আসা ক্রেতা সুমনা হক ও স্বর্ণালী আচার্য বলেন এখানে পান বরজগুলোতে পানের দাম পানির মত। অথচ খুচরা দোকানে পানের দাম দ্বিগুন। দোকানিরা তাদের দোকানে নিয়ে এসে সাজিয়ে পসরা বসিয়ে দিলেই পানের দাম বেড়ে যায়।

অপরদিকে সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, চলতি বছরে ৫০ হেক্টর জমিতে ৩০৪ জন চাষী পান চাষ করেছে। জমিতে পান চাষ করার পূর্বে প্রয়োজনীয় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি অনুযায়ী চাষাবাদ করলে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদন ও লাভবান হবে কৃষক। বর্ষার মৌসুমে বাতাশে পড়ে পানের গাছগুলো বাঁশের খুটির সাহায্যে সোজা করে তুলে দিলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে গাছগুলো। তবে পান চাষীদের বারবার বলা হয়েছে তারা যেন পান বরজের চারোপাশ শক্ত খূঁটি দিয়ে মাছা তৈরী করেন। চলতি মৌসুমে পানের উৎপাদ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই পানের মূল্য কিছুটা কম। তবে শুকনো মৌসুম গুলোতে পানের উৎপাদন হয় অনেক কম। সে সময় পানের কদর ও মূল্য অনেক বেশি থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএ যেন এক অচেনা মইজ্জ্যারটেক
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত