সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় শোক

অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন

| বৃহস্পতিবার , ৯ মার্চ, ২০২৩ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের নর্থসাউথ রোডের সাততলা পৌর ভবনে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় আমরা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।

এখানে গভীর বেদনা নিয়ে উল্লেখ করতে পারি, মঙ্গলবার বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে সিদ্দিকবাজারের নর্থসাউথ সড়কের সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ থেকে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, হঠাৎ করে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। তখন নর্থসাউথ সড়কের দুই পাশেই যান চলাচল করছিল। সদরঘাট থেকে গুলিস্তানগামী এ সড়ক ঢাকা মহানগরীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। বিস্ফোরণের পর সড়কের বিভিন্ন অংশে রক্তাক্ত অবস্থায় অনেক মানুষ পড়েছিলেন। তাদের অধিকাংশই তখন সড়ক দিয়ে চলাচল করছিলেন। তাদের কেউ বাসের যাত্রী, কেউ রিকশাভ্যানে যাচ্ছিলেন। আবার কেউ কেউ ছিলেন পথচারী। কেউ কেউ দোকানে এসেছিলেন কেনাকাটা করতে।

বিস্ফোরণের পর ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সড়কে একটি নিথর দেহ পড়ে আছে। একটি ভিডিওতে ষাটোর্ধ্ব একজনের ছিন্নভিন্ন লাশ ভ্যানে করে তুলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। অন্য একটি ভিডিও দেখা গেছে, স্থানীয়রা আহত কয়েকজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ভ্যানে করে হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন। বিস্ফোরণের এ ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। তাদের বেশিরভাগকেই বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবন থেকে মৃত বের করে আনা হয়েছে। বিধ্বস্ত ওই সাততলা ভবনের বেজমেন্টে এখনো ঢুকতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা। সেখানে আরও মানুষ আটক থাকতে পারেন বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।

ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, বিস্ফোরণ হয়েছে নর্থসাউথ রোডের ১৮৪ নম্বর ভবনে। ভবনটি সাততলা। ভবনের বেজমেন্ট, নিচতলা ও দ্বিতীয় তলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বেজমেন্ট ছাড়া পুরো ভবনেই তল্লাশি চালিয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সাততলা ভবনটির নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার সামনের অংশ ভেঙে মূল সড়কে এসে পড়েছে। সাততলা ভবনটির উত্তর পাশে ১৮০ নম্বর ভবন। এ ভবন পাঁচতলা। ভবনের নিচতলার একটি দোকান পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ভবনেরও প্রতি তলার জানালার কাচ ভেঙে পড়েছে। বিস্ফোরণ স্থলের ভবন লাগোয়া দক্ষিণ পাশের সাততলা আরও একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ভবনের নিচতলার সিঁড়ির অংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে।

তবে বিস্ফোরণের কারণ এখনও জানা যায়নি। এ ছাড়া ভবনের কত তলা থেকে এই বিস্ফোরণ, তাও এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু বিস্ফোরণে নাশকতার সন্দেহের কথা জানিয়েছেন র‌্যাবের ডিজি খুরশীদ হোসেন। মঙ্গলবার রাতে সাড়ে ৯টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। র‌্যাব ডিজি বলেন, ‘এটি বড় ধরনের একটি দুর্ঘটনা। আমাদের প্রধান কাজ এখন হতাহতদের এখান থেকে সরিয়ে নেয়া এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।’

সমপ্রতি রাজধানীসহ দেশের কয়েক জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা কিনা; তা এখনও বলা যাচ্ছে না। র‌্যাবের গোয়েন্দা দল এ ব্যাপারে তদন্ত করছে। তারপর বলতে পারব বিষয়টা কী। অন্য বাহিনীর সঙ্গে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ করছি।’ ঘটনাস্থলে বিস্ফোরক কিছু পাওয়া গেছে কি না, জানতে চাইলে খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে কয়েকটি কক্ষ আছে, ঢুকতে পারলে বলা যাবে।’ এটা নাশকতা কি না, জানতে চাইলে র‌্যাব ডিজি বলেন, ‘ধারণা করে বলা ঠিক হবে না। তবে সামপ্রতিক ঘটনাবলী লক্ষ্য করলে একটু সন্দেহ থাকতেই পারে যে অন্য কিছু কাজ করছে কি না। তবে র‌্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সচেতনতা, সাবধানতা ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হলেও হতাশাজনক হলো ভবন মালিক ও ব্যবহারকারী হিসাবে আমরা সচেতন নই। নজরদারির ক্ষেত্রেও সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও দায়িত্বশীলতা দরকার। তাঁরা বলেন, যে কোনো দুর্ঘটনা জীবন ও সম্পদবিনাশী। দেশে প্রায়ই নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ ও কার্যকর ব্যবস্থা, উদ্ধার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারের উচিত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে