গণপরিবহন সেবার গুণগত মান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিন

| শুক্রবার , ১০ মে, ২০২৪ at ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

মানুষের দৈনন্দিন জীবনে পরিবহনের গুরুত্ব অপরিসীম। তাদের চলাফেরার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নির্ভর করতে হয় পরিবহনের ওপর। অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ সকল ক্ষেত্রে চলাচলের জন্য পরিবহন পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু দুঃখের বিষয় গণপরিবহনে এখন দুর্গতি লেগে আছে। তাই স্বাস্থ্যসম্মত গণপরিবহন চালু করা সময়ের দাবি, কারণ মানুষ সবচেয়ে দুর্ভোগ এখানে ভোগ করে।

গত ৮ মে দৈনিক আজাদীতে ‘গণপরিবহন সেবা নিয়ে অসন্তুষ্ট ৫৪ শতাংশ নগরবাসী’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নগরের গণপরিবহন সেবা নিয়ে ৫৪ শতাংশ মানুষ অসন্তুষ্ট। এছাড়া প্রায় ৬৬ শতাংশ নগরবাসী গণপরিবহনে যাতায়াতকালীন অসুবিধা বোধ করেন এবং ৬৯ শতাংশ মনে করেন নগরের গণপরিবহন সেবা তাদের জন্য অনিরাপদ। ‘চট্টগ্রাম নগরীর গণপরিবহন ব্যবহারকারী যাত্রীদের অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা নিরূপণ বিষয়ক গবেষণা’য় এ তথ্য উঠে আসে। বেসরকারি সংস্থা ইপসা এ গবেষণা পরিচালনা করে। গত ৭ মে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গণপরিবহন ব্যবহারকারীরা তাদের অসন্তুষ্টির জন্য অতিরিক্ত ভিড়, যানজট, যানবাহনের স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত পরিষেবা, যানবাহনের দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য কোনো সুবিধা না থাকা, নিরাপত্তার অভাব এবং উচ্চ ভাড়াকে দায়ী করেন।

গবেষণায় ওঠে আসে, ভিড়ের সময় পরিবহন চালকরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ ব্যক্তি, নারী, গর্ভবতী নারী বা শিশুদেরকে গাড়িতে তুলতে চান না। এছাড়া গণপরিবহন পরিষেবাগুলোতে প্রবীণ, গর্ভবতী নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত বসার জায়গা থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সংরক্ষিত জায়গা ঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় না। ৮০ শতাংশ যাত্রী মনে করেন যে, চট্টগ্রামে গণপরিবহন সেবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ যাত্রী এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়। এছাড়া অত্যাধিক ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে অনেক সময় যৌন হয়রানি, পকেটমার ও মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ কারণে চলন্ত বাস থেকে যাত্রীরা নেমে যেতে বাধ্য হন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সকল ধরনের যাত্রী বিশেষ করে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য গণপরিবহনসমূহে নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবাপ্রদানের চ্যালেঞ্জ এবং দুর্বলতাসমূহ চিহ্নিত করা, গণপরিবহনসমূহে বিদ্যমান নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবাসমূহ উন্নয়নের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করা এবং নগরের গণপরিবহন সেবার গুণগত মান উন্নয়নে নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পাবলিক সেবা প্রদানকারী স্টেকহোল্ডার সক্ষমতা নিরূপণে গবেষণাটি চালানো হয়।

আসলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে নারীরা আমাদের দেশে কোথাও নিরাপদ নন। বর্তমানে গণপরিবহনে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে পাবলিক বাসে যাতায়াত অথচ যৌন হয়রানির শিকার হয়নি এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দেশের মহাসড়ক, ফুটপাত কিংবা জনসমাগম হয় এমন জায়গায় দৈনন্দিন প্রয়োজনে চলা ফেরার সময় ঠিক কতজন যৌন হেনস্তা শিকার হন তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান জানা যায় না। গণপরিবহন, জনসমাবেশ, রাস্তাঘাট, জন সাধারণের সামনে নারী কেবল উত্ত্যক্তের শিকারই হন না, বরং তারা নিগৃহীত, যৌন হয়রানি বা যৌন নিপীড়নের শিকার হন। এর ভয়াবহতা আমরা দেখতে পাই নানা প্রতিবেদনে।

নারীরা আগে ঘরে নির্যাতিত হতেন। আর এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে ঘরে নির্যাতিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বাইরেও নির্যাতিত হচ্ছেন! বিশেষজ্ঞদের মতে, যখনই সভ্যতার বিকাশ ও নগরায়নের কারণে গণপরিবহন ব্যবহারের অপরিহার্যতা তৈরি হলো এবং নারীদের ক্ষমতায়নের কারণে তাঁদের ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়ল, তখন গণপরিবহনে যৌন হয়রানির বিষয়টি নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা হিসেবে যুক্ত হলো। নারীরা বাসে ওঠার সময় বাসচালকের সহকারী ও অন্যান্য পুরুষ যাত্রী দ্বারা অযাচিতভাবে শরীরে বিভিন্নভাবে স্পর্শ, অশ্রাব্য ভাষায় নারীদের লক্ষ্য করে কটূক্তি, ফাঁকা বাসে নারীদের ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। শুধু তাই নয়, গাড়িতে ধর্ষণ করে সেই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী নারীকে হত্যা করে নির্জন স্থানে ফেলে যাওয়ার মতো ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে।

ইপসার এ গবেষণায় বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেপরিবহন শ্রমিকদের সক্ষমতা উন্নয়ন, সড়ক পরিবহন আইন পরিচিতি এবং অনুসরণ, আসন সংখ্যা অনুসারেই যাত্রী তোলা, নারীশিশুপ্রতিবন্ধী, প্রবীণবান্ধব পরিবহন সেবা গড়ে তোলা এবং বাস স্টপেজে ভালোভাবে থামিয়ে যাত্রী তোলা নিশ্চিত করা। এছাড়া প্রাইভেট পরিবহন কোম্পানি গঠন, বাসভাড়ায় ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবস্থা, যাত্রী ও পরিবেশ বান্ধব আদর্শ স্টপেজ নির্মাণ করারও সুপারিশ করা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত সামপ্রতিক এ গবেষণার ভিত্তিতে আমরা বলতে চাই, সুপারিশগুলোকে পর্যালোচনা করে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এগুলোর প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হলে সাধারণ মানুষ গণপরিবহন সেবা নিয়ে কিছুটা সন্তুষ্ট থাকতে পারবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে